মারুফ হোসেন

  ২৮ নভেম্বর, ২০২৩

গবেষণায় সিদ্ধহস্ত জেবিন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী নাসরিন জেবিন। গবেষণায় সিদ্ধহস্ত তিনি। কর্মরত রয়েছেন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা সংসদের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন দু-দুবার। সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদে বিএসএস অনার্স এবং এমএসএস মাস্টার্সে ১ম স্থান অধিকারসহ মেধার স্বীকৃতিস্বরূপ পেয়েছেন ডিনস অ্যাওয়ার্ড, গোল্ড মেডেল, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব মেরিট স্কলারশিপ। ছোটবেলা থেকেই দারুণ চঞ্চল জেবিন। খেলাধুলা আর দুরন্তপনায় মেতে থাকতেন সারাক্ষণ। দুরন্তপনায় মেতে থাকলেও পড়াশোনায় ভাটা পড়েনি মোটেও। বরং ইংরেজি শিক্ষার প্রতি একটা ঝোঁক তৈরি হয়ে যায় শৈশবেই। মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন সামসুল হক খান স্কুল অ্যান্ড কলেজে। পরে একাদশ শ্রেণিতে এসে ভর্তি হন ঢাকা সিটি কলেজে। উচ্চমাধ্যমিকে এসেই অন্যরকম একটা তাড়া অনুভব করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাওয়ার। লেগেও পড়েন কোমর বেঁধে। ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ঢাবির শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগে ভর্তি হয়ে যান।

গবেষণায় পদচারণা : গবেষণায় দারুণ সরব জেবিন। বলতে গেলে অনার্সের শুরুর দিক থেকেই তার গবেষণায় পদচারণা। করোনার সময়টাও দারুণভাবে কাজে লাগিয়েছেন গবেষণার কাজে। গবেষণা নিয়ে জেবিন বলেন, ‘স্কুল-কলেজ লাইফ থেকেই টুকটাক লেখালেখি করছি। অনার্সের দ্বিতীয় বর্ষে এসেই নড়েচড়ে বসি গবেষণার ব্যাপারে। মাস্টার্সের মধ্যেই দু-একটা পাবলিকেশন ছিল। আমি সব সময় চাইতাম ভালো কিছু করতে। নানাভাবেই চেয়েছি জানতে। জানার, শেখার চেষ্টা করছি প্রতিনিয়ত।’

অ্যাকাডেমিক রেজাল্টও দারুণ উজ্জ্বল জেবিনের। অনার্স ও মাস্টার্সের প্রতিটি সেমিস্টারেই টানা ফার্স্ট ছিলেন জেবিন। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের বিভিন্ন বিষয়ে পাবলিকেশনগুলো লাইব্রেরিতে বসে নিয়মিত পড়তেন তিনি। একটা সময় গবেষণার প্রতি দারুণ আগ্রহ জমে তার মধ্যে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা সংসদের সঙ্গে জেবিন যুক্ত ছিলেন শুরু থেকেই। নিজের কর্মস্পৃহা ও দক্ষতাগুণে খুব সহজেই সবার দৃষ্ট কাড়তে সামর্থ্য হন। নির্বাচিত হন সভাপতির আসনে।

ঢাকা ইউনিভার্সিটি রিসার্স সোসাইটি (ডিইউআরএস) থেকে প্রথমবার আন্তর্জাতিক কনফারেন্সের আয়োজন করা হয় ২০২০ সালের দিকে। তখন কনফারেন্সটির গুরুদায়িত্ব তাকেই আনজাম দিতে হয়। বিদেশি অধ্যাপক ও প্রকাশনার সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে জেবিনের। গবেষণা সম্পর্কিত ‘গবেষণা প্রারম্ভিকা’ নামে একটি বইও রচনা করেছেন তিনি। গবেষণার কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ জেবিনের ঝুলিতে বিভিন্ন সময় যুক্ত হয়েছে নানা পুরস্কার ও সম্মাননা। তার মধ্যে ঢাকা ইউনিভার্সিটি রিসার্চ সোসাইটি (ডিইউআরএস) কর্তৃক গবেষণা ও সাংগঠনিক কাজের স্বীকৃতি হিসেবে ‘আউটস্ট্যান্ডিং প্রেসিডেন্ট অ্যাওয়ার্ড’ ও ‘ডিইউআরএস মোস্ট ভ্যালুয়েবল কন্ট্রিবিউশন অ্যাওয়ার্ড’-এ ভূষিত হন জেবিন। গবেষণা পেপার উপস্থাপনার স্বীকৃতিস্বরূপ পেয়েছেন ‘পেপার প্রেজেন্টেশন অ্যাওয়ার্ড’।

পথশিশুদের নিয়ে কাজ : জেবিনের মনোজগতে একটা পরিবর্তন এসে যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ্ডিতে পা ফেলার শুরুর দিকেই। সুবিধাবঞ্চিত শিশু, পথশিশুদের শিক্ষার অধিকারসহ অন্যান্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হওয়ার অহরহ দৃশ্য জেবিনকে খুব ভাবনায় ফেলে দিত। জেবিন বলেন, ‘আমাদের বাসায় একজন কাজের বুয়া ছিল। উনি অনেক দূর থেকে এসে আমাদের বাড়ি কাজ করতেন। মাঝেমধ্যে তার বাচ্চাদেরও সঙ্গে করে নিয়ে আসতেন। দেখতাম, তার ছোট মেয়েটাও অন্যের বাসায় কাজ করছে। আর ছেলেটা একটা চায়ের দোকানে কাজ করছে। অল্প বয়সে এদের কাজে লেগে পড়ার এ দৃশ্যটা আমাকে খুব কষ্ট দিত। ভাবতাম, এদের জন্য কিছু একটা করতে হবে।’ সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য কিছু করার অনুভূতিই জেবিনকে টেনে নেয় মোহাম্মদপুরে অবস্থিত জেনেভা ক্যাম্পে। সেখানকার বিহারি শিশুদের স্কুলে প্রায় যেতেন জেবিন। তাদের পড়াতেন, তাদের সঙ্গে গল্প করতেন। জেবিন বলেন, ‘জেনেভা ক্যাম্পে প্রায়ই যেতাম। সেখানকার ক্যাম্পের লোকদের জীবনের গল্প শুনতাম। তাদের শিশুদের স্কুলে পড়াতাম। এখনো যাওয়া হয় সেখানে।’ তাদের নিয়ে জেবিনের বেশ কয়েকটি লেখাও রয়েছে। বিহারি শিশুদের শিক্ষার করুণ চিত্র ফুটে উঠেছে জেবিনের কয়েকটি গবেষণায়।

ইংরেজি শেখানো : জেবিন মাল্টিপল ল্যাংগুয়েজ ক্লাব, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংলিশ ল্যাংগুয়েজ কো-অর্ডিনেটর ছিলেন। ইংরেজি ভাষায় দুর্বল শিক্ষার্থীদের নিয়েও কাজ করেছেন তিনি। জেবিন বলেন, ‘দেখা যায়, অনেক শিক্ষার্থী আছে যারা ইংরেজি ভাষায় অনেক দুর্বল কিন্তু সঠিক পরামর্শ ও গাইডলাইনের অভাবে তারা নিজেদের ইংরেজিতে দক্ষ করতে পারে না। আমরা তাদের বিনামূল্যেই ভাষা শেখাতাম।’ তরুণদের নিয়ে গবেষণাবিষয়ক নানা কর্মশালা ও সেমিনারও করেছেন। ভবিষ্যতে গবেষণা নিয়ে তার ইচ্ছার কথা জানাতে গিয়ে জেবিন বলেন, ‘গবেষণা কাজে যুক্ত থাকতে চাই। বাংলাদেশের সামাজিক সমস্যা, মুক্তিযুদ্ধ, শরণার্থী সমস্যা ইত্যাদি নিয়ে গবেষণাধর্মী কাজ করতে চাই। বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে গবেষণা ভীতি দূর করে তরুণ গবেষক তৈরিতে যে কাজ করছি, তা অব্যাহত রাখতে চাই।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close