স্বপন কুমার কুণ্ডু

  ১৭ অক্টোবর, ২০২৩

গৃহবধূ থেকে সফল উদ্যোক্তা

কৃষির উন্নয়নে অভাবনীয় সাফল্যের স্বাক্ষর রেখে এগিয়ে চলেছেন পাবনার ঈশ্বরদীর গৃহবধূ নূরুন্নাহার বেগম। সফল নারী উদ্যোক্তা হিসেবে ইতিমধ্যেই অর্জন করেছেন সুখ্যাতি

বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতাসহ কৃষিতে একাধিক পদকপ্রাপ্ত হয়েছেন। অর্জন করেছেন এআইপি মর্যাদা। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের টেকনিক্যাল বোর্ডের সদস্যও হয়েছেন। কৃষির ওপর আন্তর্জাতিক পর্যায়ের সভায় যোগ দিতে তিনি গত ১১ জুন অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতেও গিয়েছিলেন।

জানা যায়, ছলিমপুর ইউনিয়নের বক্তারপুর গ্রামের রবিউল ইসলাম বিশ্বাসের স্ত্রী গৃহবধূ নূরুন্নাহারের আর দশটা গৃহবধূর মতো চার দেয়ালের মধ্যে নিরিবিলি জীবনযাপন করার কথা ছিল। পাশের বাড়িতে ২০০২ সালে টেলিভিশন দেখে বাড়ির আঙিনায় মাত্র ১০ কাঠা জমিতে বেগুন চাষ করে শুরু করেন। এখন ১২০ বিঘার খামার রয়েছে। ৪০ বিঘা জমির মালিক হয়েছেন। লিজ নিয়ে চাষাবাদ করছেন ৮০ বিঘাতে।

মেধা, সাহস আর পরিশ্রমের ফলে নূরুন্নাহার আজ কৃষিতে বিশেষ ব্যক্তিত্ব, সফল উদ্যোক্তা এবং একজন সমাজ উন্নয়নকর্মী। নিবিড় সবজি চাষ, ফলমূল, মাছ চাষ, পোলট্রি, ডেইরি ও গাভির খামার করে এলাকার নারীদের কৃষিকাজে উদ্বুদ্ধ করে চলেছেন। জৈব ও ভারমি কম্পোস্ট সার উৎপাদন করে তিনি সফল হয়েছেন। জৈব সার স্থানীয় বাজারে বিক্রির পাশাপাশি এসিআই কোম্পানিতে সরবরাহ করছেন।

সফলতার স্বীকৃতিস্বরূপ ২০১০ সালে সিটি গ্রুপ পুরস্কার অর্জন করেন। ২০১২ সালে দেশের সেরা নারী কৃষক হিসেবে বঙ্গবন্ধু পদক পেয়েছেন। ২০১৬ সালে জাতীয় কৃষি স্বর্ণপদক এবং ২০১৭ সালে নারী উদ্যোক্তা হিসেবে রাষ্ট্রপতি ও মাছরাঙা অ্যাওয়ার্ড পেয়ে দেশবাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। ২০২১ সালে বঙ্গমাতা স্বর্ণপদক অর্জনের পাশাপাশি কৃষিতে দেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি অর্থাৎ ‘এআইপি’ মর্যাদা পেয়েছেন। জয় বাংলা নারী উন্নয়ন মহিলা সমবায় সমিতি ও এনসিডিপি গ্রাম উন্নয়ন কমিটির সভানেত্রী নারী উদ্যোক্তা নূরুন্নাহার তিন সহস্রাধিক নারীকে সংগঠিত করে তাদের ভাগ্যের উন্নয়নের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন।

নূরুন্নাহার জানান, স্বামী কাজে বেরিয়ে গেলে অলসভাবে বসে থাকা ভালো লাগত না। টেলিভিশনে শাইখ সিরাজের কৃষিবিষয়ক অনুষ্ঠান দেখে ইচ্ছে জাগে বসতবাড়ির আশপাশে শাকসবজি ও ফলমূলের বাগান গড়ে তোলার। লালশাক, পুঁইশাক, বেগুন, গোল আলু, পেঁয়াজ, রসুন, কাঁচামরিচ বাড়ির আঙিনায় চাষ শুরু করি। এতে সারা বছরের সবজির চাহিদা মিটে যাওয়ার পরও বাড়তি আয় হতে থাকে। প্রথম প্রথম স্বামী বিরক্ত হলেও সংসার চালানোর বোঝা কমে যাওয়ায় আর কোনো আপত্তি করেননি।

তিনি আরো বলেন, গোখাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় বেশ কিছু গরু বিক্রি করেছি। ১,১০০ টাকার গমের ভুসি হয়েছে ২,২০০ টাকা, ২৫ কেজির ৫৫০ টাকার ফিডের দাম হয়েছে ১,৬৫০ টাকা। দেশ অনেক এগিয়ে গেলেও বাজার মনিটরিং যথাযথভাবে না হওয়ায় কৃষক তার পণ্যের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না। আবার কৃষি উপকরণ বেশি দাম দিয়ে কিনতে হচ্ছে। এতে কারখানার মালিক ও ব্যবসায়ীরা লাভবান হচ্ছেন। তৃণমূলপর্যায়ে কৃষক ও প্রকৃত উৎপাদনকারী এবং ব্যবহারকারী ভোক্তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। সরকারি উদ্যোগে ঈশ্বরদী সবজি বেইস কোল্ড স্টোরেজ এবং লিচুসহ ফল সংরক্ষণাগার স্থাপন করার দাবি জানাই।

উপজেলা কৃষি অফিসার মিতা সরকার বলেন, নূরুন্নাহার নিজেই প্রমাণ করেছে মেয়েরা চাইলে কোথায় যেতে পারে। তিনি একেবারেই লেখাপড়া না জানা একজন মানুষ। একসময় তিনি আমাদের অফিসের বারান্দায় বসে থাকতেন। ট্রেনিং নিতেন, বিভিন্ন প্রদর্শনী দেখতেন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনি নিজেকে ডেভেলপ করেছেন। যে জ্ঞান অর্জন করেছেন, সেটাকে কাজে লাগিয়ে সফলতা অর্জন করেছেন। তার সফলতার স্বীকৃতিস্বরূপ আজকে তো দেশের সব মানুষই তাকে চেনে। এভাবে যে ভাগ্যের পরিবর্তন করা যায়, সংসারের চেহারা বদলে দেওয়া যায়- তারই প্রমাণ আমাদের নূরুন্নাহার।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close