ডা. আব্দুল্লাহ শাহরিয়ার

  ২৪ নভেম্বর, ২০২১

ক্যানসার থেকে ঝুঁকিমুক্ত থাকুন

ক্যানসার নামক এই মরণব্যাধি সবার কাছেই রহস্যের মতো। অনেকেই জানেন না এবং একেবারেই বুঝতে পারেন না কেন দেহে এই ক্যানসারের কোষের জন্ম হয়। পরিবারে ইতিহাস থাকলেই যে ক্যানসার হবে- এমন কোনো কথা নেই। আমাদের দৈনন্দিন কাজের খারাপ প্রভাবের কারণেও কিন্তু দেহে জন্মায় ক্যানসারের কোষ। ক্যানসার অনেক সময় নিঃশব্দে হানা দিতে পারে আপনার সুখের জগতে। স্বাস্থ্যসচেতন না হলে হয়তো ঘুণাক্ষরেও টের পাবেন না কীভাবে দুঃস্বপ্নময় জীবনের দিকে পা বাড়াতে যাচ্ছেন আপনি। ভাগ্যবান হলে অনেক সময় অন্যান্য কোনো সাধারণ রোগ পরীক্ষার সময় ঘটনাচ্ছলে রোগীরা টের পান, তাদের শরীরে নিঃশব্দে ঢুকে পড়েছে ঘাতক ক্যানসার। কিন্তু এমন কিছু ক্যানসার রয়েছে যা কি না আপনাকে ভেবে দেখার সময় দেবে। আর এসব হলো সেকেন্ডারি ক্যানসার। আশা করি একটু সচেতন হলেই এসব ক্যানসারকেও আপনি পরাজিত করতে পারবেন। অনেক সময় দেখা যায়, একজন ব্যক্তি হয়তো সুস্থ জীবনযাপন করছেন, কিন্তু হঠাৎ করেই দেখা গেল তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। পরে পরীক্ষা করে দেখা গেল তার ক্যানসার হয়েছে। এরমধ্যে তার কিছু লক্ষণও হয়তো শরীরে দেখা দিয়েছিল। কিন্তু সেগুলো তিনি বুঝতে পারেননি অথবা গুরুত্ব দেননি। পরে দেখা গেল, বিলম্ব করার কারণে ক্যানসার ইতোমধ্যে তার শরীরে অনেক বেশি ছড়িয়ে পড়েছে। তখন চিকিৎসার মাধ্যমে তাকে সারিয়ে তোলা অনেক বেশি কঠিন হয়ে পড়ে।

শৈশবের ক্যানসার : কোনো কারণে ডাক্তারের নির্দেশমতো বাচ্চার পেটের সিটিস্ক্যান করতে গিয়ে ধরা পড়ল পেটের নালিতে রয়েছে কিছু পলিপ। এসব পলিপের সব না হলেও কিছু কিছু ক্যানসারের ভবিষ্যৎ বার্তা বহন করে থাকে। সুতরাং এসব জানা মাত্রই আর হেলাফেলা নয়। বিষয়টিকে গুরুত্ব দিন সময়মতো। এমনই এক ধরনের রোগ লিফ্রওমিনি সিন্ড্রোম। শুরুতে ভদ্রগোছের মনে হলেও সময়ান্তরে এ রোগ থেকে দেখা দিতে পারে রক্তের ক্যানসার লিউকোমিয়া, সারকোমা, ব্রেইন আর স্তনের ক্যানসার।

পারিবারিক ক্যানসার : ওই যে বললাম পলিপের কথা। সেটা অনেক সময় বংশানুক্রমে আপনার শরীরে ঢুকে পড়তে পারে। স্তনের ক্যানসার এবং মলদ্বারের ক্যানসারও পারিবারিকভাবে জিনগত প্রভাবে আপনার শরীরে বিস্তার লাভ করতে পারে। যেহেতু জিনকে আর বদলাতে পারবেন না। এজন্য শরীরের স্টিক্রনিং করান চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী। আর যদি কোনোভাবে প্রাথমিক স্তরে ক্যানসারের অস্তিত্ব টের পেয়ে যান, তখন দ্বিধাদ্বন্দ্বে না পড়ে চিকিৎসা শুরু করে দিন গুরুত্বসহকারে। কেননা দেখা গেছে, প্রাথমিক স্তরে ক্ষতিকর টিউমার বা ক্যানসারের উপস্থিতি ধরা পড়লে সেখান থেকেও নিস্তার পাওয়া সম্ভব।

বার্ধক্য ক্যানসার : বয়স যতই এগোয় আপনি কিন্তু ধীরে ধীরে ক্যানসারের ঝুঁকির দিকেও পা বাড়াচ্ছেন। কত মানুষই নির্বিঘ্নে পার করে দিচ্ছেন ষাট, সত্তর, আশি বছর। আপনার ভাবনা কী? অনুমান নয়। গবেষণা বলছে, সজাগ না হলে বয়সকালে যেকোনো সময় ক্যানসারে আক্রান্ত হতে পারেন। হাড়ের ক্যানসার, ফুসফুসের ক্যানসার, রক্তের ক্যানসার- এসবের সঙ্গে বার্ধক্যের সম্পর্ক রয়েছে।

জীবনাভ্যাস : লাইফস্টাইলটা বদলে নেওয়া কষ্টের ব্যাপার। কিন্তু যেভাবে চলছেন, উড়াধুড়া বোহেমিয়ান জীবন। শরীরের খোরাক জোগাতে জাঙ্ক ফুড, তৈলাক্ত খাবার, অসময়ের খাদ্যাভ্যাস- এসব আপনার জন্য ভালো কিছু বহন করে আনতে পারে না।

জেনে নিন ক্যানসার এড়াতে সুস্থ খাদ্যাভ্যাস-

* ভিটামিন-সমৃদ্ধ সবুজ শাকসবজি বেশি করে খাওয়ার অভ্যাস করুন। টমেটো, শিম, ঢ্যাঁড়স, পেঁপে, গাজর, ব্রুকলি রাখুন প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায়।

* প্রতিদিন ৩০ মিনিট অথবা সপ্তাহে পাঁচ দিন ব্যায়াম করুন নিবিষ্ট মনে।

* স্থূলতা নয়। বিএমআই (ওজন/উচ্চতা২) বয়স অনুযায়ী ঠিক রাখুন।

* ধূমপান করা থেকে বিরত থাকুন। পরোক্ষ ধূমপান থেকে নিজেকে রক্ষা করুন।

* মদপান করা থেকে বিরত থাকুন।

* সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি যেন আপনার ত্বকসহ শরীরের কোনো ক্ষতি না করে সেদিকে লক্ষ রাখুন।

[সহযোগী অধ্যাপক, এনআইসিভিডি]

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close