নিজস্ব প্রতিবেদক

  ০৩ মে, ২০২৪

সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী

আমাকে উৎখাত করলে কে আসবে ক্ষমতায়?

আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাম চলে গেছে ৯০ ডিগ্রি ঘুরে। যারা অতি বাম, সবসময় মনে করি তারা প্রগতিশীল ও গণমুখী দল। তবে প্রশ্ন হচ্ছে- আমাকে উৎখাত করলে পরবর্তী সময়ে ক্ষমতায় কে আসবে, কে দেশের জন্য কাজ করবে, কাকে তারা আনতে চায়। গতকাল বৃহস্পতিবার গণভবনে সাম্প্রতিক থাইল্যান্ড সফর নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দেন। পাশাপাশি সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয়, ফিলিস্তিন ইস্যু, রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তন, হিটওয়েভ, আমেরিকায় আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা এবং বাংলাদেশি নাগরিক হত্যা প্রসঙ্গসহ বিভিন্ন প্রশ্নেরও জবাব দেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, চেষ্টা করা হয়েছে দেশে যাতে নির্বাচন না হয়। আমার শক্তি হচ্ছে দেশের জনগণ। কাজেই জনগণের শক্তির ওপর আমি সবসময় বিশ্বাস করি এবং আমি এটাও বিশ্বাস করি, জনগণ যতক্ষণ চাইবে, ততক্ষণই ক্ষমতায় থাকব। কারণ আমরা জনগণের ভোটেই নির্বাচিত হয়ে এসেছি। শেখ হাসিনা আরো বলেন, আমাদের দল অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী মিলিটারি ডিক্টেটরের পকেট থেকে বের হয়নি। ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে মানুষের আর্থসামাজিকভাবে যেসব শোষণ-বঞ্চনার শিকার হয়েছিল, তার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর জন্যই আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠা লাভ করেছিল। কাজেই আওয়ামী লীগ সবসময় মানুষের কল্যাণে কাজ করে যায় এবং এটা প্রমাণিত সত্য আর সে কারণে যত বাধাই আসুক, আমরা সেই বাধা পেরিয়ে যেতে পারি বা যত চক্রান্ত হোক, সেই চক্রান্তগুলোকে পাশ কাটিয়ে দেশের মানুষকে সঙ্গে নিয়েই আমরা বিজয় নিয়ে আসি। এটা স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের বিজয় থেকে শুরু করে এবং এ নির্বাচন জায়গায় এটা প্রমাণিত।

প্রধানমন্ত্রী আক্ষেপ করে বলেন, উন্নয়ন তারা নাও দেখতে পারেন। কারণ তাদের হয়তো উন্নয়নের ফর্মুলাটা ভিন্ন আর আমার উন্নয়নটা হচ্ছে আমার গ্রামের মানুষ দুবেলা পেট ভরে খাবে, তাদের একটু বাসস্থান হবে, চিকিৎসা পাবে, শিক্ষা পাবে ও জীবনমান উন্নত হবে। তিনি সাংবাদিকদের প্রশ্ন করেন, আপনারা তো সাংবাদিক। আপনারাই বলেন, বেশিদিন নয়, মাত্র ১৫ বছর আগেই দেশের অবস্থা কেমন ছিল? এখন কি কোনো পরিবর্তন হয়নি? এখন কেউ যদি উন্নয়নটা না দেখে, তাহলে তো আমাদের কিছু করার নেই। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আমাদের তো কিছু লোক রয়েছে, যারা সবসময় বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কানভারী করছে। তারা অনেক জ্ঞানী-গুণী বুদ্ধিজীবী এবং তারা যখন সারাক্ষণ উল্টাপাল্টা বলতেই থাকবে, কিছুটা (বিদেশিরা) তাদের দ্বারা প্রভাবিত হওয়াটাই স্বাভাবিক। ১৪ দলীয় জোট প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ১৪ দলীয় জোট এখনো টিকে আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। তিনি এ সময় আওয়ামী লীগের ৭৫ বছর পূর্তি জাঁকজমক পূর্ণভাবে করার প্রস্তুতি চলছে জানিয়ে বলেন, এতে বিভিন্ন দেশের রাজনৈতিক নেতাদের আমন্ত্রণ জানানো হবে।

প্রধানমন্ত্রী তার থাইল্যান্ড সফর নিয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে বলেন, অর্থনীতির নতুন দুয়ার খুলেছে। খাদ্য ও ফল উৎপাদনের বিষয়ে মতবিনিময় হয়েছে। থাইল্যান্ডকে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছি। পাসপোর্টে-ভিসা ছাড়া থাইল্যান্ড যাওয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। উপজেলা নির্বাচন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, উপজেলা নির্বাচনকে নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠান এবং একে প্রভাবমুক্ত রাখাই আমার লক্ষ্য। মানুষ যাকে চাইবে সেই জয়ী হবে। উপজেলা নির্বাচনে স্থানীয় সংসদ সদস্যদের স্বজনদের নির্বাচন অংশ না নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হলেও তা মানা হচ্ছে না- এ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা চেয়েছি নির্বাচন, যাতে প্রভাবমুক্ত হয়। মানুষ যাতে স্বাধীনভাবে ভোট দিতে পারে, এজন্য বলেছি। তার মানে এই নয়, এক জায়গায় ছেলেকে, আরেক জায়গায় স্ত্রীকে এটা তো হয় না। কর্মীদেরও সুযোগ দিতে হবে। এটাই বলতে চেয়েছি।

সরকারপ্রধান বলেন, এখন কোনো কোনো দল থেকে মানুষকে ভোটে না যেতে বলা হচ্ছে। প্রশ্নটা হচ্ছে মানুষ কেন ভোটে যাবে না? এটা তো তার অধিকার। তার এলাকায় সে যাকে চায় তাকে সে ভোট দেবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের পুরো নির্বাচনী ইতিহাস যদি আপনারা দেখেন, তাহলে দেখবেন ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি নির্বাচন প্রত্যেকটি নির্বাচনের তুলনায় সবচেয়ে অবাধ, নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু এবং জনগণের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করার হয়েছে। কয়েকটি দলের উপজেলা নির্বাচন বর্জন প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, নির্বাচন বর্জন করে কেন? কারণ তাদের নির্বাচন করার মতো সক্ষমতাই নেই। যেমন ধরুন, সংসদ নির্বাচন। নির্বাচন করতে হলে জনগণকে পরবর্তী নেতৃত্ব দেখাতে হবে। প্রধানমন্ত্রী কে হবেন, সেটা বলতে হবে। এখন যদি উপযুক্ত নেতা না থাকে, তাহলে তো একটা ছুঁতা খুঁজতে হয়। একজন সাজাপ্রাপ্ত আসামি বা পলাতক আসামিকে যদি জনগণের সামনে দেখান, তাহলে জনগণ সেটা মেনে নেবে না।

শেখ হাসিনা বলেন, রাজনীতি করতে গেলে তো ঝুঁকি নিতে হয়। আমি দেশে ফিরেছি জীবনের ঝুঁঁকি নিয়ে। বারবার আঘাত এসেছে, কিন্তু আমি বেঁচে গেছি এবং বারবার নির্বাচনে জয়ী হয়ে ক্ষমতায় এসেছি। আর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে বলেই দেশের উন্নতি হয়েছে। বিশ্বের বুকে মাথা তুলে দাঁড়ানোর বা কথা বলার সুযোগ হয়েছে। ফিলিস্তিন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা সবসময় ফিলিস্তিনিদের পাশে আছি এবং আন্তর্জাতিকভাবেও তাদের পাশে দাঁড়াচ্ছি। যেখানেই নির্যাতিত মানুষ, সেখানেই বাংলাদেশ আছে- এটাই আমি প্রমাণ করতে চাই। আমেরিকায় বিভিন্ন মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাদের দেশে প্রতিনিয়ত মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে। তাদের আগে নিজের ঘর সামলানো উচিত। আমেরিকায় বিভিন্ন স্কুল, শপিংমল, রেস্টুরেন্টে অনবরত বন্দুক হামলা হচ্ছে আর মানুষ মারা যাচ্ছে। এমন কোনো দিন নেই বোধ হয়, আমেরিকায় মানুষ না মরছে। তাদের সেদিকে নজর দেওয়া উচিত।

আমেরিকায় বাংলাদেশি নিহত হওয়ার ঘটনার প্রতিবাদ করে শেখ হাসিনা বলেন, এর আগেও আমাদের কয়েকজনকে হত্যা করা হয়েছে। আমরা প্রতিবাদ করেছি এবং বিচার করে তারা আমাকে জানিয়েছে। আমাদের যেটুকু করার সেটা আমরা করে যাচ্ছি। রোহিঙ্গাদের বিষয় নিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবর্তনের বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। থাইল্যান্ডও আশ্বাস দিয়েছে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী প্রত্যাবাসন নিয়ে সহযোগিতা করবে। মিয়ানমারের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে তারাও উদ্ধিগ্ন। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, সংসদ উপনেতা বেগম মতিয়া চৌধুরী, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু এবং তথ্য ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক মঞ্চে ছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর স্পিচ রাইটার মো. নজরুল ইসলাম অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন।

জনগণ এখন মর্যাদা নিয়ে বিশ্বদরবারে চলতে পারে : এদিকে আমাদের সংসদ প্রতিবেদক জানান, বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদের অধিবেশনে সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, অনেক সংগ্রামের পথ বেয়ে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসেছে। আওয়ামী লীগ সরকারে এসেছে বলেই বাংলাদেশের সার্বিক উন্নয়ন হয়েছে। মানুষের জীবনমান উন্নত হয়েছে। বাংলাদেশের জনগণ এখন মর্যাদা নিয়ে বিশ্বদরবারে চলতে পারে। এটা আমার পক্ষে সম্ভব হয়েছে, আবদুুল হাইয়ের মতো ত্যাগী নেতাকর্মীদের কারণে। ঝিনাইদাহ-১ আসনের সংসদ সদস্য আবদুুল হাইয়ের মৃত্যুতে শোক প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় এসব কথা বলেন তিনি। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে ওই আলোচনায় অংশ নেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. আবদুর রাজ্জাক, রেলমন্ত্রী জিল্লুল হাকিম, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন, আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ, তৌহিদুজ্জামান, নাসির শাহরিয়ার প্রমুখ।

শেখ হাসিনা বলেন, ঝিনাইদহ একটা সন্ত্রাসী এলাকা ছিল। সেখানে গ্রামের মানুষ টিকতে পারত না। সেখানে নির্বাচন করা, রাজনীতি করা অত্যন্ত কঠিন ছিল। সেই অবস্থার মধ্যেও আবদুুল হাই অত্যন্ত দৃঢ়তার সঙ্গে সংগঠন ধরে রাখেন এবং সংগঠনকে সুসংগঠিত করেন। তিনি বারবার নির্বাচিত হয়ে বিরাট দক্ষতার পরিচয় দিয়েছিলেন। এদিন সংসদ সদস্য আবদুল হাই ছাড়াও সাবেক সংসদ সদস্য শামছুল হক ভূইয়া, আবুল হাসেম খান, পিনু খান, নজির হোসেন ও মোখলেছুর রহমানসহ বীর মুক্তিযোদ্ধা ও ভাষাসৈনিক আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালের চিফ প্রসিকিউটর একুশের পদকপ্রাপ্ত গোলাম আরিফ টিপু, একুশে পদকপ্রাপ্ত প্রবীণ সাংবাদিক ও প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও একুশে পদকপ্রাপ্ত শিক্ষাবিদ ড. প্রণব কুমার বড়ুয়ার মৃত্যুতে সংসদ অধিবেশনে শোক প্রকাশ করা হয়।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close