প্র্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ২৯ এপ্রিল, ২০২৪

মণিপুরে ফের জাতিগত সহিংসতা

আবার নতুন করে জাতিগত সহিংসতায় উত্তপ্ত হয়ে উঠল ভারতের মণিপুর রাজ্য। গতকাল রবিবার সকালে পশ্চিম ইম্ফলে কাংপোকপি জেলাসংলগ্ন কোত্রুক গ্রামে দুপক্ষের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। এতে নতুন করে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। মূলত গত শুক্রবার ভোট শেষ হতেই অশান্ত হয় মণিপুর। ওইদিন গভীর রাতে বিষ্ণুপুর জেলার নারানসেনায় জঙ্গিদের হামলায় নিহত হন কেন্দ্রীয় বাহিনী সিআরপিএফের দুই সদস্য। গুলি এবং গ্রেনেডের আঘাতে গুরুতর জখম হন চারজন। গত ডিসেম্বরে মোরেকে ফাঁড়িতে একই কায়দায় ভোররাতে হামলা চালিয়েছিল কুকি জঙ্গিরা। শুক্রবার মণিপুর লোকসভা কেন্দ্রের একাংশে ভোট ছিল। খবর আনন্দবাজার পত্রিকার।

পুলিশ সূত্রের বরাত দিয়ে আনন্দবাজার জানিয়েছে, শুক্রবার রাত সোয়া ২টার দিকে কুকি জঙ্গিদের একটি দল স্বয়ংক্রিয় আগ্নেয়াস্ত্র এবং গ্রেনেড নিয়ে নারানসেনা ফাঁড়িতে হামলা চালায়। তাদের নিশানায় ছিল ফাঁড়িলাগোয়া ব্যারাকটিও। রবিবার সকালে কোত্রুক গ্রামে ঢুকে পড়ে একদল বন্দুকধারী। তারা গ্রামবাসীকে লক্ষ্য করে এলোপাথাড়ি গুলি চালাতে শুরু করে। গ্রামের নিরাপত্তায় থাকা স্বেচ্ছাসেবীরাও পাল্টা জবাব দেন। দুপক্ষের মধ্যে বেশ কিছু ক্ষণ গুলি লড়াই চলে। এক গ্রামবাসীর দাবি, বন্দুকধারীরা গ্রামে ঢুকেই গুলি চালাতে শুরু করে। নারী, শিশু এবং বয়স্কদের নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে দেন গ্রামের স্বেচ্ছাসেবী সদস্যরা। শুধু গুলিই নয়, গ্রামের বাড়িগুলো লক্ষ্য করে হাতে তৈরি মর্টার ‘পাম্পি’ও ছোড়া হয়। গ্রামে বন্দুকধারীদের হামলার ঘটনা নিরাপত্তাবাহিনী এবং পুলিশের কাছে পৌঁছতেই তারা ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছে। গত বছরেও মে মাসে গোষ্ঠী সংঘর্ষে উত্তাল হয়েছিল এই গ্রাম।

প্রসঙ্গত, চলতি মাসের গোড়া থেকে বাংলাদেশের সেনাবাহিনী এবং র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন (র‌্যাব) বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ)-এর বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছে। এরই মধ্যে কয়েকজন জঙ্গি নিহতও হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে মণিপুরের কুকি জঙ্গিগোষ্ঠীগুলোর সহায়তায় কেএনএফ জঙ্গিরা সীমান্ত এলাকা দিয়ে অনুপ্রবেশ করতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে।

গত বছরের ৩ মে জনজাতি ছাত্র সংগঠন ‘অল ট্রাইবাল স্টুডেন্টস ইউনিয়ন অফ মণিপুর’ (এটিএসইউএম)-এর কর্মসূচি ঘিরে মণিপুরে অশান্তির সূত্রপাত। মণিপুর হাইকোর্ট মেইতেইদের তফসিলি জনজাতির মর্যাদা দেওয়ার বিষয়টি রাজ্য সরকারকে বিবেচনা করার নির্দেশ দিয়েছিল। এরপরেই জনজাতি সংগঠনগুলো তার বিরোধিতায় পথে নামে। আর সেই ঘটনা থেকেই সংঘাতের সূচনা হয় সেখানে। মণিপুরের আদি বাসিন্দা হিন্দু ধর্মাবলম্বী মেইতেই জনগোষ্ঠীর সঙ্গে কুকি, জড়োসহ কয়েকটি তফসিলি জনজাতি সম্প্রদায়ের (যাদের অধিকাংশই খ্রিস্টান) সংঘর্ষে এখনো পর্যন্ত প্রায় ২০০ জনের মৃত্যু হয়েছে। ঘরছাড়ার সংখ্যা প্রায় ৬০ হাজার। পরবর্তী সময়ে ইম্ফল হাইকোর্ট ওই বিতর্কিত নির্দেশ প্রত্যাহার করলেও শান্তি ফেরেনি উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ওই রাজ্যে। কারণ মেইতেইদের মনে তৈরি হয়েছে নতুন আশঙ্কা। মূলত সমতল এলাকার বাসিন্দা মেইতেইরা মণিপুরের বৃহত্তম জনগোষ্ঠী। অন্যদিকে, কুকি, অঙ্গামি, লুসাই, নাগা, থাড়োয়াসের মতো প্রায় ৩০টি জনজাতি গোষ্ঠীর বাস পাহাড়ি এলাকায়। তাদের অভিযোগ, জনজাতির মর্যাদা পেলেই পাহাড়ি এলাকার জমিতে হাত বাড়াবে মেইতেইরা।

আর মেইতেইদের দাবি, ১৯৪৯ সালে ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মণিপুর সংযুক্ত হওয়ার আগে তারা জনজাতি হিসেবে গণ্য হতেন। কিন্তু সংযুক্তিকরণের পর সেই পরিচয় হারান তারা। ফলে জনজাতি জমির অধিকার, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের সাংবিধানিক রক্ষাকবচও হারিয়েছেন। যে কারণে আজ নিজভূমেই কোণঠাসা তারা। ১৯৫২ সালে মণিপুরের মোট জনসংখ্যার ৫১ শতাংশ যেখানে মেইতেই ছিল, ২০১১ সালের আদমশুমারিতে তা ৪৪ শতাংশে গিয়ে ঠেকেছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close