অর্থনৈতিক প্রতিবেদক

  ২২ এপ্রিল, ২০২৪

প্রতিদিনের সংবাদে প্রতিবেদন প্রকাশের পর

সোনালী লাইফের পরিচালনা পর্ষদ স্থগিত

প্রতিদিনের সংবাদে সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের দুর্নীতি সংক্রান্ত প্রতিবেদন ‘কুদ্দুস পরিবারের হাতে তছরুপ ২০০ কোটি টাকা’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশের পর প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পর্ষদ ছয় মাসের জন্য স্থগিত করা হয়েছে।

অনিয়মে জড়িত ও বীমা নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএর শুনানিতে দুর্নীতির বিষয়টি উঠে আসে। পুঁজিবাজারভুক্ত বীমা খাতের এই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে গত ১৬ এপ্রিল প্রতিদিনের সংবাদে প্রধান প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। তাতে বীমা নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএর প্রতিবেদনের বিভিন্ন অংশও তুলে ধরা হয়।

জানা গেছে, বীমা আইনের ৯৫(১) ধারা অনুসারে এই কোম্পানিতে প্রশাসক নিয়োগ দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। গত ১৮ এপ্রিল সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের বোর্ড চেয়ারম্যানের কাছে পাঠানো সংস্থাটির পরিচালক (আইন) মোহাম্মদ আবদুল মজিদ স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত একটি চিঠি থেকে বিষয়টি জানা গেছে।

ওই চিঠিতে বলা হয়, সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের সাবেক চেয়ারম্যান মোস্তফা গোলাম কুদ্দুস ও কয়েকজন পরিচালকের বিরুদ্ধে প্রাপ্ত আর্থিক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তদন্ত করার জন্য কর্তৃপক্ষ নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান হুদা ভাসি চৌধুরী অ্যান্ড কোম্পানিকে নিয়োগ করা হয়। তদন্তকারী প্রতিষ্ঠানের দাখিল করা প্রতিবেদনে একাধিক অনিয়ম ও দুর্নীতির তথ্য প্রমাণ পাওয়া যায়। অসম্পূর্ণ তথ্য সংরক্ষণ ও তথ্য গোপন, অস্বচ্ছ হিসাবরক্ষণ পদ্ধতি, অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার অনুপস্থিতি, ক্যাশ চেকে বড় অঙ্কের লেনদেন, এফডিআর জামানত রেখে বিপুল পরিমাণ ব্যাংক ঋণ গ্রহণ এবং মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তাসহ ব্যাংক সিগনেটরিরা প্রায় সবাই একই পরিবারের সদস্য হওয়ার মাধ্যমে বীমাকারী এমনভাবে কোম্পানির কার্যক্রম পরিচালনা করছে যে, এতে অনিয়ম ও অর্থ আত্মসাতের মাধ্যমে কোম্পানি ও বীমা গ্রাহকদের স্বার্থ মারাত্মকভাবে ক্ষুণ্ণ হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে বীমা কোম্পানি ও বিপুল সংখ্যক গ্রাহকের স্বার্থরক্ষায় কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্দেশ্যে সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের বিদ্যমান পরিচালনা পর্ষদকে ছয় মাসের জন্য ‘সাসপেন্ড’ করা হলো।

নির্দেশনায় আরো বলা হয়, কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণাধীনে বীমাকারীর কার্যক্রম ব্যবস্থাপনার জন্য ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এস এম ফেরদৌস, এনডিসি, পিএসসিকে প্রশাসক নিয়োগ করা হলো। রবিবার (২১ এপ্রিল) থেকে কার্যকর হয়েছে এই সিদ্ধান্ত। চিঠিতে প্রশাসককেও যত দ্রুত সম্ভব কোম্পানির পূর্ণাঙ্গ অডিট সম্পন্ন করে প্রতিবেদন দাখিল, কোম্পানির অবসায়ন বা অন্য কোম্পানির কাছে হস্তান্তর বা ব্যবসা অব্যাহত রাখার বিষয়ে মতামত দেওয়াসহ কয়েকটি নির্দেশনা দেওয়া হয়। পাশাপাশি যথাশিগগির সম্ভব একটি যোগ্য দেশি বা বিদেশি অডিট ফার্ম দিয়ে কোম্পানির পূর্ণাঙ্গ অডিট সম্পন্ন করার কথাও বলা হয়।

আইডিআরএর এমন পদক্ষেপে কোম্পানিটির ব্যবসায়িক কার্যক্রমে কোনো প্রভাব পড়বে কিনা, তা জানতে প্রতিষ্ঠানটির ভারপ্রাপ্ত সিইও মো. রফিকুল ইসলামের কাছে ফোন করা হয়। তবে একাধিকবার কল করার পরও তিনি ফোনটি রিসিভ করেননি। এছাড়া কোম্পানি অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

অনিয়মের বিরুদ্ধে বীমা নিয়ন্ত্রক সংস্থার এমন পদক্ষেপের বিষয়ে আইডিআরএ মুখপাত্র ও পরিচালক (নন-লাইফ) মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, ‘কেউ অনিয়ম করলে তাকে ছাড় দেওয়া হবে না। সে যত বড় ক্ষমতাধর বা প্রভাবশালী থাকুক। আইডিআরএর বর্তমান চেয়ারম্যান ও সদস্যরা সেটা বাস্তবায়ন করে দেখিয়েছেন। এর মাধ্যমে বীমা খাতের কোম্পানিরগুলোর জন্য সুস্পষ্ট বার্তা দিয়েছে বীমা নিয়ন্ত্রক সংস্থা।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close