প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ২২ এপ্রিল, ২০২৪

হিটস্ট্রোকে ৬ মৃত্যু বাড়ছে রোগী

সারা দেশে তাপপ্রবাহে হিটস্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ছেই। এর মধ্যে হিটস্ট্রোকে ঝালকাঠিতে একজন, গাজীপুরে দুজন, সিলেটে একজন, মেহেরপুরে একজন, নরসিংদীর মাধবদীতে একজনের মৃত্যু হয়েছে। অপরদিকে খুলনা, যশোর, গাজীপুর, জামালপুর, ফেনী, মেহেরপুর, ঝালকাঠিসহ দেশের সব অঞ্চলে হাসপাতালে বাড়ছে গরমজনিত রোগীর সংখ্যা। তাপপ্রবাহে যশোরে গলে যাচ্ছে সড়কের পিচ, নেমে যাচ্ছে পানির স্তর। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

সিলেট : গতকাল সিলেট নগরীতে সড়কে অজ্ঞান হয়ে এক রিকশাচালকের মৃত্যু হয়েছে। মৃত আবু হামিদ মিয়া (৩৪) হবিগঞ্জের লাখাই উপজেলার শিবপুর গ্রামের মো. করম আলীর ছেলে। দক্ষিণ সুরমা থানার ওসি ইয়ারদৌস হাসান বলেন, বেলা সাড়ে ১১টায় নগরীর দক্ষিণ সুরমার কাজিরবাজার ব্রিজের পাশে পুলিশ বক্সের সামনে এক অজ্ঞাত পরিচয়ের রিকশাচালক অজ্ঞান হয়ে পড়েন। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক সৌমিত্র চক্রবর্তী বলেন, ‘যে তাপমাত্রায় হিটস্ট্রোক হওয়ার কথা; সিলেটে সে তাপমাত্রা নেই। তবে উনি কত সময় রিকশা চালিয়েছেন বা শরীরের অবস্থা কেমন ছিল, তা না জেনে হিটস্ট্রোকে মৃত্যু বলাটা কঠিন।

যশোর : জেলায় ডায়রিয়াসহ গরমজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশু, বৃদ্ধসহ সব বয়সি মানুষ। অতি তীব্র তাপপ্রবাহে যশোরের বিভিন্ন স্থানে সড়কের পিচ (বিটুমিন) গলে যাচ্ছে। সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, সাধারণত সড়কে যে পিচ ব্যবহার করা হয় তা ৬০ থেকে ৭০ গ্রেডের। এর গলনাঙ্ক ৪৮ থেকে ৫২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অর্থাৎ তাপমাত্রা ৪৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠলে পিচ গলার কথা। কিন্তু তার অনেক আগেই পিচ গলে যাচ্ছে। এ বিষয়ে সড়ক বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মাহবুব হায়দার খান বলেন, ‘রাস্তার বিটুমিন গলে যাচ্ছে মূলত তাপমাত্রার কারণেই।’ যশোর সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার নিচে সহনীয় সড়কে ৮০ থেকে ১০০ গ্রেডের বিটুমিন ব্যবহার করা হয়। পরে আরো বেশি তাপমাত্রা সহনশীল সড়কে ৬০ থেকে ৭০ গ্রেডের বিটুমিন ব্যবহার করা হচ্ছে। কিছু কিছু রাস্তা বেশ কয়েক বছর আগে তৈরি। সেখানে মূলত ৮০ থেকে ১০০ গ্রেডের বিটুমিন ব্যবহার করা হয়েছে। সে কারণেও এগুলো গলে যেতে পারে।

শহরের বাগমারা এলাকার বাসিন্দা সোহরাব হোসেন জানান, বাসার ছাদের পানির রিজার্ভ ট্যাংকের পানি অনেক গরম। দুপুর ১২টা থেকে বিকেল পর্যন্ত পানিতে হাত দেওয়া যাচ্ছে না।

এদিকে তীব্র তাপপ্রবাহের মধ্যে পানি সংকটে পড়েছে শহরের বাসিন্দারা। তারা বলেছেন, যে টিউবওয়েলে সব সময় পানি আসতো, এখন সেই টিউবওয়েল অকেজো হয়ে পড়ে আছে। শহরের রেলগেট এলাকার বাসিন্দা আল আমিন বলেন, টিউবওয়েলে পানি পাওয়া যাচ্ছে না। পুকুরে যেতে হচ্ছে। পানির সঙ্গে আয়রন উঠায় পান করা যাচ্ছে না।’

গ্রীনওয়ার্ন্ড এনভাইরনমেন্ট ফাউন্ডেশন যশোরের নির্বাহী পরিচালক আশিক মাহমুদ সবুজ বলেন, ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার বেড়েছে। পুকুর জলাশয় ভরাট, অপরিকল্পিতভাবে গভীর ও অগভীর নলকূপ স্থাপনের কারণে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। যশোর জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশল জাহিদ পারভেজ বলেন, গত কয়েক বছর ধরে ওয়াটার টেবিলের লেয়ার নিম্নমুখী। ওয়াটার লেভেল নেমে যাওয়ার কারণে সুপেয় পানির যাতে সংকট না হয় সে জন্য উপজেলা পর্যায়ে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর সাবমারসিবলের পানি সরবরাহ নিশ্চিত রাখার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

মেহেরপুর : মেহেরপুরের গাংনীতে গতকাল সকাল ৯টায় হিটস্ট্রোকে শিল্পি খাতুন (৪৫) নামে এক গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছে। তিনি উপজেলার ষোলটাকা ইউনিয়নের রুয়েরকান্দি গ্রামের আবু তাহেরের স্ত্রী ও পাশের আমতৈল গ্রামের বিল্লাল হোসেন মালিথার মেয়ে। এদিকে গরমে হিটস্ট্রোক এড়াতে মেহেরপুর স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষে হাসপাতাল চত্ত্বরে হ্যান্ড মাইকে সতর্কতামূলক প্রচার করা হচ্ছে।

ঝালকাঠি : ঝালকাঠির কাঠালিয়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের পশ্চিম আউরা গ্রামের মো. আফজাল তালুকদার (৪৫) নামে একজন হিটস্ট্রোকে মারা গেছেন। গত শনিবার রাত ১১টায় পল্লী চিকিৎসকের কাছে নিয়ে গেলে সেখানে তার মৃত্যু হয়। স্থানীয় পল্লী চিকিৎসক দিলীপ চন্দ্র হাওলাদার জানান, প্রচণ্ড গরমের কারণেই তার স্ট্রোকে মৃত্যু হয়েছে।

গাজীপুর : রবিবার গাজীপুর জেলায় হিটস্ট্রোকে রাসেল সরকার (৪২) নামে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। তিনি গাজীপুর সদর উপজেলার ভাবানীপুর এলাকার মো. ইব্রাহিম মিয়ার ছেলে। জরুরি বিভাগের চিকিৎসক মাহমুদা রানী বলেন, রাসেল সরকারকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছিল। ধারণা করা হচ্ছে তিনি হিটস্ট্রোকে মারা গেছেন। তবে ময়নাদন্তের রির্পোট পেলে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ বলা যাবে। এর আগে শনিবার হিটস্ট্রোকে গাজীপুর মহানগরের কোনাবাড়ি এলাকায় সোহেল রানা (৩৬) নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছিল।

খুলনা ব্যুরো : তীব্র তাপপ্রবাহে খুলনায় সর্দি-জ্বর, পেটের পীড়া ও শ্বাসতন্ত্রের রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। এদিকে গরমে অসুস্থ হয়ে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শয্যাসংখ্যার প্রায় তিনগুণ রোগী ভর্তি রয়েছে। ৫০০ শয্যার বিপরীতে গতকাল ১ হাজার ২৮৬ জন রোগী ভর্তি হয়। এর আগের দিন বৃহস্পতিবার সর্বোচ্চ রোগী ভর্তি ছিল ১ হাজার ৩০৫ জন। রোগীর চাপে হাসপাতালের শয্যা সংখ্যা সংকুলান দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে কর্তৃপক্ষকে। ফলে অনেকে বাধ্য হয়ে ওয়ার্ডের বাইরে বারান্দায়, সিঁড়ি ঘরের সামনে চলাচলের রাস্তার মেঝেতে থাকছেন।

একইভাবে খুলনা শিশু হাসপাতালে অসুস্থ রোগীদের জায়গা দিতে পারছে না কর্তৃপক্ষ। হাসপাতালের ২৭০টি শয্যার একটিও খালি নেই। তার ওপর প্রতিদিন ৭ থেকে ৮০ জন অসুস্থ শিশুকে ভর্তির জন্য হাসপাতালে আনছেন অভিভাবকরা। জায়গা সংকুলান না হওয়ায় অনেককে ফেরত দিতে হচ্ছে। এর বাইরে বহির্বিভাগে প্রতিদিন চিকিৎসা নিচ্ছে আরো ৫০০ থেকে ৬০০ শিশু রোগী। যাদের অধিকাংশই জ্বর, ডায়রিয়া, নিউমোনিয়াসহ গরমজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত।

মাধবদী (নরসিংদী) : নরসিংদীর মাধবদীতে গতকাল রবিবার দুপুর ১২টায় হিটস্ট্রোকে একজনের মৃত্যু হয়েছে। স্ট্রোক করলে স্বজনরা নরসিংদী সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। হাসপাতালে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করে ও হিটস্ট্রোকে মৃত্যু হয় বলে জানান। নিহত ব্যক্তি উপজেলার ভগীরথপুর গ্রামের মৃত জাকারিয়ার ছেলে সাফকাত জামিল ইবান (৩০)।

রংপুর ব্যুরো : রংপুরে তীব্র গরমে অতিষ্ঠ জনজীবন। প্রয়োজন ছাড়া মানুষ রাস্তায় বের হচ্ছে না। ফলে রাস্তাঘাট ফাকা হয়ে পড়ছে। এতে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন রিকশাচালক ও ভ্যানচালকরা। রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বাড়ছে রোগীর সংখ্যা।

ফেনী : ফেনীতে তীব্র গরম ও তাপদাহে বেড়েছে ডায়রিয়া, নিউমোনিয়সহ নানা রোগের প্রকোপ। বেশি আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা। অধিকাংশ শিশুরোগী জ্বর, সর্দি, ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়াসহ নানা উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে ভিড় করছে। হঠাৎ বাড়তি রোগীর চাপে হাসপাতালে দেখা দিয়েছে শয্যা সংকট। ফেনী জেনারেল হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে ২৬ বেডের বিপরীতে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ১০৪ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় এ ওয়ার্ডে ভর্তি হয়েছে ৪০ জন রোগী। হাসপাতালের বহির্বিভাগ থেকে জানা যায়, প্রতিদিন প্রায় ১ হাজার ৫০০ রোগী বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এর মধ্যে গড়ে প্রতিদিন প্রায় ৪০০ শিশু রোগী আউটডোরে চিকিৎসা সেবা নিচ্ছে।

জামালপুর : জামালপুরে তীব্র গরমে নিউমোনিয়া, জ্বর, সর্দি ও ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়েছে। রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিতে হিমশিম অবস্থা চিকিৎসক ও নার্সদের। সে সঙ্গে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিদ্যুৎ না থাকায় চরম দুর্ভোগে রোগী স্বজনরা। গতকাল দুপুরে সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, জেলার ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জামালপুর জেনারেল হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. মাহফুজুর রহমান বলেন, অতিরিক্ত গরমে এ মুহূর্তে ১ হাজার ৫৪০জন রোগী ভর্তি রয়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close