নিজস্ব প্রতিবেদক

  ০৯ এপ্রিল, ২০২৪

ঈদুল ফিতর ও বাংলা নববর্ষ

দুই উৎসব ঘিরে চাঙ্গা অর্থনীতি

২ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকা বাণিজ্যের আশা

পবিত্র ঈদুল ফিতরের পর আসছে বাংলা নববর্ষ। এ দুই উৎসব ঘিরে অভ্যন্তরীণ ব্যবসা-বাণিজ্যে সুবাতাস বইতে শুরু করেছে। ফলে নানা চ্যালেঞ্জের মুখে থাকা অর্থনীতি চাঙ্গা হওয়ার সুযোগ এসেছে। আশা করা হচ্ছে, অভ্যন্তরীণ বেচাকেনায় গতি ফিরবে অর্থনীতিতে।

জানা গেছে, এবারের ঈদ ও পহেলা বৈশাখে সারা দেশে অন্তত ২ লাখ থেকে ২ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকার বাণিজ্য হবে। গত কয়েক বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে এ বাণিজ্যের পরিমাণ বাড়ছে বলে জানিয়েছেন উদ্যোক্তারা। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, উৎসবকেন্দ্রিক এ বাণিজ্য দেশের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করবে। রাশিয়া-ইউক্রেন, ইসরায়েল-ফিলিস্তিন যুদ্ধের কারণে চাপে থাকা ব্যবসা-বাণিজ্যে আবার গতি ফিরে আসবে। বাঙালির জীবনে বাংলা নববর্ষের একটি সোনালি পটভূমি রয়েছে। সঙ্গে জড়িয়ে আছে মানুষের জীবন-জীবিকা বা আয়-রোজগারের প্রশ্ন। যেমন কোটি টাকার ফুলের বাণিজ্য, বৈশাখী পোশাকের বাণিজ্য, গ্রামীণ বা শহুরে মেলার বাণিজ্য, মৃতশিল্পি, কামার-কুমারদের বাণিজ্য, নাট্যকর্মী, যাত্রাশিল্পী, পালাকারদের আয়-রোজগারের পথসহ আরো কত কিছু রয়েছে এ তালিকায়।

বাংলাদেশ ১৭ কোটি মানুষের এক বিশাল বাজার। ঈদ ঘিরে এ বাজার দিন দিন বড় হচ্ছে। এরই মধ্যে ১ কোটি প্রবাসী তাদের প্রিয়জনের কেনাকাটার জন্য রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। এছাড়া অভ্যন্তরীণ চাহিদা পূরণে নিজেদের উৎপাদিত পণ্যের পাশাপাশি বিদেশ থেকেও বিপুল পরিমাণ পণ্যসামগ্রী; বিশেষ করে পোশাক, ইলেকট্রনিক্স, গহনা, প্রসাধনী, ফার্নিচার এবং গাড়ি আমদানি করা হচ্ছে।

ঈদের অর্থনীতিতে পোশাক, জুতা, ভোগ্যপণ্য ও ইলেকট্রনিক্সের মতো শীর্ষ ১৫ পণ্যের কেনাকাটায় বাণিজ্য হবে প্রায় ২ লাখ কোটি টাকার ওপরে। এর বাইরে আরো অনেক রকম পণ্যের কেনাকাটা ও লেনদেন হবে ঈদকে ঘিরে। যার পরিমাণ হবে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা। সব মিলিয়ে ঈদে প্রায় ২ থেকে আড়াই লাখ কোটি টাকার ব্যবসা-বাণিজ্য হবে বলে আশা করা হচ্ছে। ঈদের অর্থনীতি প্রসঙ্গে অর্থনীতিবিদদের বক্তব্য হলো ঈদকেন্দ্রিক বেচাবিক্রি বাংলাদেশের অর্থনীতিতে সবসময় গুরুত্বপূর্ণ।

কিন্তু আগের কয়েক বছর করোনা মহামারির ধাক্কা, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং সর্বশেষ জাতীয় নির্বাচন ঘিরে এক ধরনের অস্থিরতা ছিল ব্যবসা-বাণিজ্যে। প্রতি বছর নতুন নতুন চাহিদা বাড়ায় বড় হচ্ছে ঈদের অর্থনীতি। ঈদ সামনে রেখে সেজে উঠেছে রাজধানীসহ দেশের ছোট-বড় সব বিপণিবিতান ও শপিংমলগুলো। উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত বা নিম্নবিত্ত যে যার সামর্থ্যানুযায়ী এখন কেনাকাটায় ব্যস্ত হয়ে পড়ছেন। ফলে বাড়ছে ঈদের অর্থনীতির আকার। এছাড়া ব্যক্তিগত অর্থ এবং সঞ্চয় থেকে সাধ্যমতো মানুষ ঈদের কেনাকাটায় শামিল হবেন।

বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির তথ্যমতে, ঈদে সারা দেশের ২৬ লাখ দোকানে কেনাকাটা শুরু হয়েছে। মুদি দোকান থেকে শুধু করে এসব দোকানের মধ্যে কাপড়ের দোকান, শোরুম ও ফ্যাশন হাউসগুলোও রয়েছে। এসব দোকানে বছরের অন্য সময় প্রতিদিন ৩ হাজার কোটি টাকার পণ্য বিক্রি হলেও রোজার মাসে সেটি তিনগুণ বেড়ে হয় ৯ হাজার কোটি টাকা। ওই হিসাবে রোজার এক মাসে এ ২৬ লাখ দোকানে ঈদ পোশাক থেকে শুরু করে ভোগ্যপণ্য বিক্রি হবে প্রায় ২ লাখ কোটি টাকারও বেশি।

ঈদুল ফিতরে সবচেয়ে বেশি টাকা লেনদেন হয় পোশাকের বাজারে। পোশাকের দোকানেই ঈদের কেনাকাটা এবার ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ কোটি কোটি টাকার বেশি। শুধু তাই নয়, ঈদ ঘিরে অর্থনীতির সব খাতেই গতি ফিরে আসে। ঈদের মাসে যেমন সারা দেশের শপিংমল বা মার্কেটগুলো গতিশীল হয়, তেমনি সারা দেশের কুটিরশিল্প, তাঁতশিল্প, দেশীয় বুটিক হাউসগুলোয় বাড়ে কর্মচাঞ্চল্য ও আর্থিক লেনদেন। রূপগঞ্জের তাঁতিরা ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। জামদানিপল্লি থাকে জমজমাট।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close