নিজস্ব প্রতিবেদক

  ০৮ এপ্রিল, ২০২৪

ঈদযাত্রায় নির্বিঘ্নে শিকড়ে ফিরছে মানুষ

নাড়ির টানে ঈদে বাড়ি ফিরতে শুরু করেছে মানুষ। ফাঁকা হচ্ছে রাজধানী। বিগত কয়েক বছরের তুলনায় এবার ঈদযাত্রা অনেকটাই স্বস্তি বলে জানাচ্ছে ঘরমুখী মানুষরা। এদিকে সড়কে বিশৃঙ্খলা এড়াতে মহাসড়কের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোয় চেকপোস্ট বসিয়ে ঈদে বাড়ি ফেরা মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিতে কাজ করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এতে নির্বিঘ্নে শিকড়ে ফিরতে পারছে মানুষ।

গতকাল রবিবার সকালে স্টেশন ঘুরে দেখা যায়, চেকিংয়ের আওতায় এসে শত শত মানুষ স্টেশনে প্রবেশ করছে। সবার সঙ্গেই রয়েছে ট্রেনযাত্রার টিকিট। কারো কাছে টিকিট না থাকলে তাকে ফেরত পাঠানো হচ্ছে। রেলের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা পুরো বিষয়টি স্টেশনে দাঁড়িয়ে তদারকি করছেন। যাত্রীদের প্রত্যাশা, সারা বছর যদি রেলওয়ে এমন সার্ভিস দেয় তাহলে টিকিটবিহীন যাত্রী কমে যাবে। গাবতলী, মহাখালী আন্তজেলা বাস টার্মিনালে দেখা যায়, মানুষের খুব বেশি ভিড় নেই। যাত্রীরা বলছেন, ঈদুল ফিতরের তুলনায় ঈদুল আজহার ঈদে বেশি ভিড় জমে। এবার স্বস্তিতেই তারা বাড়ি ফিরছেন। এছাড়া লঞ্চের অগ্রিম টিকিট পাওয়ায় খুশি যাত্রীরা। নির্বিঘ্নে যেতে পারায় তারাও খুশি।

ট্রেনে অতিরিক্ত ভিড়, নিরাপত্তায় ঘেরা স্টেশন : কোনো রকমের ভোগান্তি ছাড়াই পদ্মা সেতু দিয়ে স্বস্তিতে পারাপার হচ্ছেন দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ঈদ যাত্রীরা। অন্যদিকে ঈদযাত্রায় প্রতিদিন ট্রেনে করে প্রায় দুই লাখ মানুষ ঢাকা ছাড়ছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা রেলওয়ে স্টেশনের ব্যবস্থাপক (ম্যানেজার) মোহাম্মদ মাসুদ সারওয়ার।

মাসুদ সারওয়ার জানান, গতকাল ঢাকা ও আশপাশের স্টেশন থেকে ৬৯টি ট্রেন ছেড়ে গেছে। এর মধ্যে ৪৪টি আন্তনগর ট্রেনে সিটের যাত্রী ৩৩ হাজার ৫০০ জন। এ যাত্রীর অনুপাতে ২৫ শতাংশ স্ট্যান্ডিং টিকিটে সাড়ে আট হাজার যাত্রী গেছেন। এছাড়া ২৫টি লোকাল, মেইল ও কমিউটার ট্রেন রয়েছে। এসব ট্রেনে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে অনেক বেশি মানুষ ঢাকা ছেড়েছে।

ছাদে যাত্রী যাওয়া প্রসঙ্গে মাসুদ সারওয়ার বলেন, শুধু ঈদ নয়, সব সময়ই ট্রেনের ছাদে চড়ে ভ্রমণ করা সম্পূর্ণভাবে নিষেধ। সার্বিকভাবে আমরা এখন পর্যন্ত সবকিছু ধরে রাখতে পেরেছি। আগামী দুদিনও এমন সুষ্ঠু পরিবেশ থাকবে বলে প্রত্যাশা করছি।

পদ্মা সেতুতে স্বস্তির ঈদযাত্রা : কোনো রকমের ভোগান্তি ছাড়াই পদ্মা সেতু দিয়ে স্বস্তিতে পারাপার হচ্ছেন দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ঈদযাত্রীরা। তবে গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টিতে মোটরসাইকেল আরোহীদের পড়তে হয়েছে বিড়ম্বনায়। গতকাল ভোরে পদ্মা সেতুর মাওয়া টোল প্লাজায় ব্যক্তিগত যানবাহন ও পরিবহনের তীব্র চাপ দেখা গেছে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যানজটের তীব্রতা কমে যায়।

টোল কালেক্টর জাহিদুল ইসলাম জানান, রবিবার সকাল ৬টা থেকে ১০টা পর্যন্ত এ ৪ ঘণ্টায় সহস্রাধিক মোটরসাইকেল ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু দিয়ে পার হয়েছে। তবে ১০টার পরে থেকে গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টির কারণে মোটরসাইকেলের সংখ্যা কমে গেছে।

তিনি জানান, আমরা একটি মোটরসাইকেলে দুজনের অধিক এবং হেলমেট ছাড়া প্রবেশ করতে দিই না। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের চূড়ান্ত এ সিদ্ধান্ত ফলো করা হচ্ছে। সারা দিন যানবাহনের চাপ যেমন হোক না কেন, সকাল ও বিকেলে এর তীব্রতা বেড়ে যায়। তবে এ বছরে স্বস্তিতে সবাই পারাপার হতে পারছে।

পদ্মা সেতু কর্তৃপক্ষ আরো জানায়, এবার ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে সেতুর মাওয়া প্রান্তের টোল প্লাজায় ৭টি টোল বুথে প্রতি পাঁচ সেকেন্ডে একটি করে যানবাহনে টোল আদায় করা হচ্ছে, ফলে দ্রুত সময়ের মধ্যেই ভোগান্তিহীনভাবে পদ্মা সেতু পাড়ি দিয়ে গন্তব্যে যাচ্ছেন যানবাহন চালক ও যাত্রীরা। তবে মোটরসাইকেলের উপচে পড়া ভিড় থাকায় আলাদা দুটি লেন তৈরি করে টোল আদায় করা হচ্ছে।

সাত নৌপথে যাত্রীর ভিড় : পবিত্র ঈদুল ফিতর সামনে রেখে ঢাকা নদীবন্দর থেকে দক্ষিণাঞ্চলের সাতটি নৌপথে যাত্রীদের চাপ বেড়েছে। গতকাল সকাল থেকে বরগুনা, খেপুপাড়া, কালাইয়া, পটুয়াখালী, আমতলী, ইলিশা ও ভোলা রুটে যাত্রীদের চাপ বেশি ছিল। এসব রুটের লঞ্চের ডেক টার্মিনাল ছেড়ে যাওয়ার নির্ধারিত সময়ের ৬-৭ ঘণ্টা আগেই যাত্রীতে পরিপূর্ণ হয়ে যায়।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের ঢাকা নদীবন্দর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গতকাল ভোর ৫টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত সদরঘাট টার্মিনালে লঞ্চ এসেছে ৪৯টি। সদরঘাট থেকে দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন পথে ছেড়ে গেছে ৩৪টি লঞ্চ। দক্ষিণাঞ্চলের বরগুনা, খেপুপাড়া, কালাইয়া, পটুয়াখালী, আমতলী, ইলিশা ও ভোলাগামী লঞ্চগুলোর ডেক যাত্রীতে পূর্ণ হয়ে হতে দেখা গেছে। অন্যান্য পথের লঞ্চগুলোয় যাত্রীদের তেমন ভিড় নেই।

অবশ্য পদ্মা সেতুর কারণে আগের চেয়ে যাত্রী কমেছে বলে জানিয়েছেন লঞ্চসংশ্লিষ্টরা। ঝালকাঠিগামী এমভি সুন্দরবন-১২ লঞ্চের কর্মচারী আবদুল আজিজ বলেন, আগের দিন আর অহন নাই। আগে এ টাইমে যাত্রীরা আমগো ঠেলা ধাক্কা দিয়া লঞ্চে উঠত। পদ্মা সেতু হওয়ার পর আর অহন যাত্রীরা ঠেলা দিব তো দূরের কথা, আমরাই যাত্রী খুঁইজ্যা পাই না।

ভিড় কিছুটা কম হওয়ায় যাত্রীরাও স্বস্তির কথা জানিয়েছেন। লালমোহনগামী গ্লোরি অব শ্রীনগর লঞ্চের যাত্রী মমতা বেগম বলেন, ‘আগে এ সময়ে লঞ্চে উঠতে অনেক বেগ পেতে হতো। মানুষের ভিড়ের কারণে টার্মিনাল দিয়ে হাঁটা যেত না। কিন্তু এখন তেমন ভিড় নেই।’

বিআইডব্লিউটিএর নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগ ঢাকা নদীবন্দরের যুগ্ম পরিচালক ইসমাইল হোসেন বলেন, দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে ঢাকা নদীবন্দরে ১ নম্বর সতর্কসংকেত রয়েছে। এ অবস্থায় আবহাওয়া অধিদপ্তরেরর নির্দেশ মেনে লঞ্চ চালানোর জন্য লঞ্চের চালকদের সতর্ক করা হচ্ছে। কোনো অবস্থাতেই লঞ্চে অতিরিক্ত যাত্রী বহন করা যাবে না। এ বিষয়ে সার্বক্ষণিক টার্মিনাল এলাকায় মাইকিং করা হচ্ছে। এছাড়া যাত্রীদের যাত্রা নির্বিঘ্ন ও নিরাপদ করার জন্য বিআইডব্লিউটিএ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা কাজ করছেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close