নিজস্ব প্রতিবেদক

  ০৩ এপ্রিল, ২০২৪

বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি কমবে মূল্যস্ফীতিতে চ্যালেঞ্জ

প্রায় দুই অঙ্কের কাছে পৌঁছানো মূল্যস্ফীতির হার কমানোই বাংলাদেশের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছে বৈশ্বিক ঋণদাতা সংস্থা বিশ্বব্যাংক। একই সঙ্গে চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার কমে ৫ দশমিক ৬ শতাংশ হবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে সংস্থাটি। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের বিশ্বব্যাংক কার্যালয়ে বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেট প্রতিবেদন প্রকাশ করে এ কথা বলেন বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর আবদুুল্লায়ে সেক।

কান্ট্রি ডিরেক্টর বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতিকে ভোগাচ্ছে ব্যালান্স অব পেমেন্ট সমস্যা এবং ব্যাংকিংসহ আর্থিক খাতের দুর্বলতা। এ কারণে চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে জিডিপির প্রবৃদ্ধি খানিকটা কমে ৫ দশমিক ৬ শতাংশ হবে।

গত অর্থবছরে (২০২২-২৩) জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ৫ শতাংশ প্রাক্কলন করা হলেও বছর শেষে তা হয়েছে ৫ দশমিক ৭৮ শতাংশে। তবে আগের কয়েক বছরে উচ্চহারে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য অর্জন করে বাংলাদেশ। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে রেকর্ড ৮ দশমিক ১৫ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়। চলতি অর্থবছরে ৭ দশমিক ৫০ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে সরকার। বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর বলেন, চলতি অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি কিছুটা কমলেও তার পরের বছর বাড়বে। জ্বালানি তেলের মূল্য সমন্বয় পদ্ধতি চালু, রপ্তানির ভর্তুকি কমানোসহ বেশ কিছু সংস্কারের কারণে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি বেড়ে হবে ৫ দশমিক ৭ শতাংশ।

আবদুল্লায়ে সেক বলেন, ব্যাংকিং খাতসহ বাংলাদেশের উন্নয়নে সহায়তা অব্যাহত রাখবে বিশ্বব্যাংক। তবে রাজস্ব আদায় বাড়াতে আমদানিনির্ভর শুল্ক আদায় থেকে বেরিয়ে এসে প্রত্যক্ষ কর বাড়ানোর ওপর জোর দেওয়ার তাগিদ দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। বিশেষ করে ২০২৬ সালে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হতে ট্রেডভিত্তিক রাজস্ব আদায় নির্ভরতা কমানোর বিকল্প নেই বলেও সংস্থাটি মনে করছে।

বিশ্বব্যাংকের হিসাব অনুসারে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫ দশমিক ৮ শতাংশ; ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৭ দশমিক ১ শতাংশ। অর্থাৎ তাদের হিসাবে ২০২১-২২ অর্থবছরের পর টানা দুই অর্থবছর দেশের প্রবৃদ্ধির হার কমে ৬ শতাংশের নিচে নামতে যাচ্ছে।

বিশ্বব্যাংক আরো বলেছে, বাংলাদেশে ব্যাংক একীভূতকরণের ক্ষেত্রে আরো সতর্ক থাকা দরকার। সম্পদের মান ও সুনির্দিষ্ট নীতিমালার ভিত্তিতে ব্যাংক একীভূত করা উচিত বলে মনে করে প্রতিষ্ঠানটি। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে মুদ্রানীতির রাশ আরো টেনে ধরা দরকার বলেও তারা অভিমত দিয়েছে।

২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশে বেসরকারি খাতের ঋণের প্রবৃদ্ধি আরো মন্থর হয়েছে বলে বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এতে বোঝা যাচ্ছে, বিনিয়োগে মন্দাবস্থা তৈরি হয়েছে। ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের উচ্চ হারসহ দুর্বল নিয়ন্ত্রণের কারণে এই খাত চাপের মুখে আছে বলে জানিয়েছে বিশ্বব্যাংক।

বিশ্বব্যাংক বলেছে, কোভিড-১৯ মহামারি থেকে প্রত্যাবর্তনে বাংলাদেশের অর্থনীতির শক্তিমত্তার পরিচয় দিয়েছে। কিন্তু উচ্চ মূল্যস্ফীতি, লেনদেন ভারসাম্যে ধারাবাহিক ঘাটতি, আর্থিক খাতের দুর্বলতা ও বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে মহামারি পরবর্তী পুনরুদ্ধার ব্যাহত হচ্ছে।

বাংলাদেশের অর্থনীতি নিয়ে এই ষাণ¥াসিক প্রতিবেদনে বিশ্বব্যাংক বলছে, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধি ও মূল্যস্ফীতির চাপ কমাতে আর্থিক সংস্কার ও মুদ্রার একক বিনিময় হার ব্যবস্থা প্রবর্তন করা জরুরি। মুদ্রার বিনিময় হারে অধিকতর নমনীয়তা বৈদেশিক মুদ্রার বাজারে চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যে ভারসাম্য পুনরুদ্ধারে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। অর্থনীতির বৈচিত্র্য এবং অর্থনীতির মধ্যম ও দীর্ঘ মেয়াদে স্বাভাবিক অবস্থায় প্রত্যাবর্তনের সম্ভাবনা বৃদ্ধিতে কাঠামোগত সংস্কার গুরুত্বপূর্ণ বলে তারা মনে করে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close