নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

আ.লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

দেশে নারী উন্নয়নে নবজাগরণ ঘটেছে

পাচার অর্থ ফেরতে ১০ দেশের সঙ্গে চুক্তির উদ্যোগ

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, প্রতিটি সেক্টরে নারীদের সফল অংশগ্রহণে বাংলাদেশের নারী অগ্রযাত্রায় নবজাগরণ ঘটেছে। নারীদের অবহেলা করার কোনো সুযোগ নেই, কারণ নারীরা গ্রামীণ পর্যায়েও প্রতিটি সেক্টরে এগিয়ে যাচ্ছে। গতকাল বুধবার গণভবনে আওয়ামী লীগের সংরক্ষিত নারী আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি। তিনি এ সময় গণভবনে আগতদের অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, ‘আজি বসন্ত আমার গণভবনের বাগান ফুলে ফুলে শোভিত’।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সংসদে ৪৮টি সংরক্ষিত আসনে ১ হাজার ৫৫৩ জন নারী আবেদন করেছেন। এটি প্রমাণ করেছে দেশে নারী উন্নয়নে একটি নবজাগরণ ঘটেছে। কয়েকশ’র মধ্যে ৪৮ জন নারীকে খুঁজে বের করা তাদের জন্য কঠিন কাজ। তবে মনোনয়ন না পেলে হতাশ না হয়ে দেশ ও জনগণের জন্য মাতৃস্নেহে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে নারীদের মাঝে যে চেতনা এসেছে এবং নারী নেতৃত্ব যেন তৃণমূল থেকে শুরু হয় স্থানীয় সরকারে সে ব্যবস্থা আমরা করেছি। প্রাইমারি স্কুলে ৬০ ভাগ নারীর চাকরির ব্যবস্থা করেছি। খেলাধুলাও নারীরা এগিয়ে যাচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রথম ইসলাম ধর্ম গ্রহণকারী একজন নারী বিবি খাদিজা (রা.) এবং মেয়েরা মায়ের জাতি সেটাও মনে রাখতে হবে। কাজেই মেয়েদের অবহেলা করার কোনো সুযোগ নেই, এ ব্যাপারে আমরা যথেষ্ট সচেতন। আমাদের গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত নারীরা পিছিয়ে নেই। ডিজিটাল বাংলাদেশ করে নারীদের ট্রেনিংসহ তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের সব রকমের ব্যবস্থা আমরা করে দিচ্ছি। কেননা আমরা দেশকে আরো উন্নত করতে চাই, সে ক্ষেত্রে নারী-পুরুষ একত্রে কাজ করতে পারলেই কেবল সেটা সম্ভব হবে।

শেখ হাসিনা মনোনয়ন প্রত্যাশীদের উদ্দেশ্যে বলেন, যারা দরখাস্ত করেছেন তাদের অনেকেই জানেন হয়তো তারা পাবেন না। কিন্তু নিজের অস্তিত্বটাকে জানান দেওয়া, যে আমি আছি। আমরাও যোগ্য, আমরাও পারি। হ্যাঁ আমি এটা নিজেও বিশ্বাস করি সবাই যোগ্য, কেউ অযোগ্য নয়। আমি এখনো বলব- যদি কেউ এখনো পেছনে পড়ে থাকেন তাদের টেনে আনার দায়িত্ব কিন্তু এ রাজনৈতিক নেতৃত্বের। আর সেখানে আমাদের এ বোনেরাই পারবে, কাউকে পেছনে ফেলে রেখে চলব না। সবাইকে নিয়ে এগিয়ে যাব।

চলার পথে পথে প্রতি পদে বাধার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমার একমাত্র শক্তি হলো মানুষের সমর্থন ও মানুষের অনুপ্রেরণা। সে জন্য মানুষের জন্যই তার কাজ করা। ওরা ভেবেছিল রাসেলকে পর্যন্ত হত্যা করেছিল এজন্য যে বঙ্গবন্ধুর রক্তের কেউ যেন আর ক্ষমতায় আসতে না পারে। জানিনা আল্লাহ বাঁচিয়ে রেখেছিলেন বারবার মৃত্যুকে মুখোমুখি দেখেছি কখনো গুলি, কখনো বোমা, কখনো গ্রেনেড হামলা এসব কিছুই আমাকে মোকাবিলা করতে হয়েছে। আমার দলের নেতাকর্মীরা মানব ঢাল রচনা করে বারবার আমাকে রক্ষা করেছে। অনেকে জীবন দিয়ে গেছেন। তাদের সব সময় আমি স্মরণ করি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এত চড়াই উতরাই পার হয়ে আজকের বাংলাদেশ, আওয়ামী লীগ বারবার ক্ষমতায় আসবে এটা কখনো কেউ ভাবতে পারেনি। ৯৬ থেকে ২০০১ এবং এরপর ২০০৮ এর নির্বাচনের পর বারবার জয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে। ২০০৯ এ তিনি যখন সরকার গঠন করেন তখন একটি বিধ্বস্ত অর্থনীতি, বিপর্যস্ত সমাজ ও বিশৃঙ্খল অবস্থা ছিল। সেগুলো কাটিয়ে উঠেই আমাদের উন্নয়নের পথ চলা।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, সুনির্দিষ্ট আদর্শ লক্ষ্য নিয়ে চললে পরে যে কোন অভীষ্ট লক্ষ্য যে অর্জন করা যায় আমরা সেটা প্রমাণ করেছি। আজকের বাংলাদেশ বদলে যাওয়া বাংলাদেশ। আজকের বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। এক সময় বাংলাদেশ নিয়ে বিশ্বে যে নেতিবাচক ধারণা ছিল সেটি পাল্টে দিয়ে আজকে এতটুকু দাবি করতে পারি বিশ্বে বাংলাদেশ আজ একটি মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত হয়েছে। একটি সমাজের উন্নয়নে প্রতিটি ক্ষেত্রে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। ফ্রি প্রাইমারি শিক্ষা থেকে উচ্চশিক্ষার ব্যবস্থা আমরা করেছি। বিনামূল্যে বই দিচ্ছি এবং শিক্ষা ব্যবস্থাটাকে ব্যাপকভাবে সম্প্রসারণ করেছি যাতে একটি শিক্ষিত জাতি গড়ে উঠতে পারে। কেননা স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে গেলে শিক্ষিত জাতিই দরকার। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এ সময় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন। দলের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন।

সংসদে প্রধানমন্ত্রী : দেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থ উদ্ধারের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় তথ্য, সাক্ষ্য-প্রমাণ ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় সহায়তা নিতে ১০টি দেশের সঙ্গে আইনগত সহায়তা চুক্তির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শিগগিরই মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে বলেও জানান তিনি। গতকাল বুধবার বিকেলে জাতীয় সংসদের অধিবেশনে বিরোধী দলের চিফ হুইপ মুজিবুল হক চুন্নুর এক প্রশ্নের লিখিত জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ তথ্য জানান। এ সময় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন। বুধবার প্রশ্ন উত্তর টেবিলে উপস্থাপিত হয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, অর্থ পাচার রোধে বর্তমানে বাংলাদেশে ‘মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২’ বলবৎ রয়েছে যা সর্বশেষ গত ২৬ নভেম্বর ২০১৫ তারিখে সংশোধিত হয়। এই আইনের বিধান অনুসারে বৈধ বা অবৈধ উপায়ে অর্জিত অর্থ বা সম্পত্তি নিয়মবহির্ভূতভাবে বিদেশে পাচারকে মানিলন্ডারিং অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। মানিলন্ডারিং অপরাধের ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন ৪ (চার) বৎসর এবং সর্বোচ্চ ১২ বৎসর পর্যন্ত কারাদণ্ড এবং এর অতিরিক্ত অপরাধের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সম্পত্তি রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্তকরণ ও সংশ্লিষ্ট সম্পত্তির দ্বিগুণ মূল্যের সমপরিমাণ বা ১০ লক্ষ টাকা (এর মধ্যে যা অধিক) অর্থদণ্ডের বিধান রয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিদেশে পাচারকৃত অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনা সহজীকরণে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে পারস্পরিক আইনগত সহযোগিতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে অপরাধ সম্পর্কিত বিষয়ে ‘পারস্পরিক সহায়তা আইন, ২০১২’ জারি করা হয়েছে। এই আইনের আওতায় অপরাধ সম্পর্কিত বিষয়ে পারস্পরিক সহায়তা প্রদানকল্পে কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষ হিসেবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কাজ করছে। এছাড়া, অ্যাটর্নি জেনারেলের নেতৃত্বে বিদেশে পাচার সম্পদ বাংলাদেশে ফেরত আনার বিষয়ে গঠিত টাস্কফোর্স পাচারকৃত অর্থ উদ্ধারে কাজ করে যাচ্ছে। বাংলাদেশ থেকে পাচারকৃত অর্থ উদ্ধারের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় তথ্য, সাক্ষ্য-প্রমাণ ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় সহায়তা গ্রহণের জন্য প্রাথমিকভাবে ১০টি দেশের সঙ্গে পারস্পরিক আইনগত সহায়তা চুক্তি স্বাক্ষরের বিষয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। পাচারকৃত অর্থ উদ্ধারের বিষয়ে একটি কৌশলপত্র প্রণয়ন করা হয়েছে, যা মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসী কার্যে অর্থায়ন প্রতিরোধে গঠিত জাতীয় সমন্বয় কমিটি কর্তৃক অনুমোদনের পর ওই কৌশলপত্রের সুপারিশগুলো বাস্তবায়নের জন্য সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থায় প্রেরণ করা হয়েছে। এ ব্যতীত পাচারকৃত অর্থ উদ্ধারের বিষয়ে বিএফআইইউ কর্তৃক একটি গাইডলাইন প্রণয়ন করা হয়েছে, যা জাতীয় সমন্বয় কমিটি অনুমোদন করেছে।

শিগগিরই মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আসবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়নসহ গুরুত্বপূর্ণ অর্থনীতিসমূহে ২০২৪ সালে মূল্যস্ফীতি উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমে আসবে বলে পূর্বাভাস রয়েছে। এ অবস্থায় বিশ্ববাজারে জ্বালানি, খাদ্যপণ্য ও সারের মূল্য কমে আসা, জ্বালানি তেলের মূল্য সমন্বয় এবং খাদ্য সরবরাহ পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার জন্য সরকারি উদ্যোগের প্রভাবে শিগগিরই মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে বলে আশা করা যায়। পরিশেষে বলা যায়, সামষ্টিক অর্থনীতিতে নানা চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও বাংলাদেশ এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে একটি দ্রুতবর্ধনশীল অর্থনীতির দেশ হিসেবে অবস্থান বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close