বরিশাল ও ঢাকা বিভাগের দু-এক জায়গায় হালকা বৃষ্টি অথবা গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হতে পারে। নওগাঁ জেলাসহ রংপুর বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বিস্তার লাভ করতে পারে। এছাড়া সারা দেশের রাতের তাপমাত্রা দু-এক ডিগ্রি সেলসিয়াস হ্রাস পেতে পারে এবং দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। এছাড়া এ মাসের শেষের দিকে বৃষ্টি ও বজ্রবৃষ্টি হতে পারে। মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত সারা দেশে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে এবং তা কোথাও কোথাও দুপুর পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। ঘন কুয়াশার কারণে বিমান চলাচল, অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন এবং সড়ক পরিবহন চলাচল ব্যাহত হতে পারে। বৃহস্পতিবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে দিনাজপুরে ৮ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

আবহাওয়ার সিনপটিক অবস্থা সম্পর্কে বলা হয়, উপমহাদশেীয় উচ্চচাপ বলয়ের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে এবং এর বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে।

বছরের প্রথম শৈত্যপ্রবাহ শুরু হয় জানুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে যা শুরুতে রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের কয়েকটি জেলার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু তৃতীয় সপ্তাহ থেকে শৈত্যপ্রবাহ অন্যান্য জেলাতেও ছড়িয়ে পড়ে। বুধবার পর্যন্ত সারা দেশের ২১টি জেলার ওপর দিয়ে শৈত্যপ্রবাহ বয়ে গেছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

এদিকে একটি শৈত্যপ্রবাহ শেষ হতে না হতেই আরো একটি শৈত্যপ্রবাহের আভাস দিচ্ছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর। চলতি মাসের শেষে বা আগামী মাসের শুরুর দিকে শৈত্যপ্রবাহটি আসতে পারে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদ খন্দকার হাফিজুর রহমান। জানুয়ারির শেষ বা ফেব্রুয়ারির শুরুতে এটি বয়ে যেতে পারে। এটি এখনকার মতোই মৃদু থেকে মাঝারি আকারের হতে পারে। তাপমাত্রা ৮ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে সেটিকে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বলা হয়। এছাড়া ৬ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নামলে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ এবং ৪ থেকে ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে সেটিকে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বলা হয়। আর তাপমাত্রা ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে গেলে হয় অতি তীব্র শৈত্যপ্রবাহ। এ বছর এখন পর্যন্ত কেবল চুয়াডাঙ্গা জেলায় তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে দেখা গেছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের হিসেব বলছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি শীত পড়েছিল ২০১৮ সালে। ওই বছরের ৮ জানুয়ারি পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় তাপমাত্রা নেমেছিল ২.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বনিম্ন তাপমাত্রার রেকর্ড। একই দিনে সৈয়দপুরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ২.৯ ডিগ্রি। এছাড়া নীলফামারীর ডিমলায় ৩ ডিগ্রি, কুড়িগ্রামের রাজারহাটে ৩.১ ডিগ্রি এবং দিনাজপুরে ৩.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। এছাড়া সেদিন রংপুর বিভাগের ৮ জেলার সবকটিতেই সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৫ ডিগ্রির কম ছিল বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। সে বছর দফায় দফায় তীব্র শৈত্যপ্রবাহও বয়ে যেতে দেখা গিয়েছিল।

এছাড়া ২০১৩ সালে ১০ জানুয়ারি সৈয়দপুরে ৩ ডিগ্রি, ২০০৩ সালের ৯ জানুয়ারি রাজশাহীতে ৩.৪ ডিগ্রি এবং ১৯৯৬ সালে দিনাজপুরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৩.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয় বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

এর বাইরে ২০১৯ সালে তেঁতুলিয়ায় ৪.৯ ডিগ্রি, ২০১১ সালের ১২ জানুয়ারি যশোরে ৪.৫ ডিগ্রি এবং ২০১৭ সালে কুড়িগ্রামে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয় ।

আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, বুধবার থেকে সারা দেশেই তাপমাত্রা আগের কয়েক দিনের তুলনায় কিছুটা বেড়েছে। ফলে শীতের প্রকোপ কিছুটা কমে আসতে পারে। তবে আগামী তিন দিন দেশের বেশিরভাগ অঞ্চলে আগের মতোই ঘন কুয়াশা দেখা যাবে। খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের কয়েক জায়গায় হালকা বা গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে।

২৩ জানুয়ারি মঙ্গলবার চুয়াডাঙ্গা ও সিরাজগঞ্জে মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৬.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এদিন ঢাকাতেও বছরের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে আবহাওয়া অধিদপ্তরের হিসেবে সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে ঢাকায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ২০১৩ সালে ৭.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এরপর দ্বিতীয় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ২০১৮ সালের ৮ জানুয়ারি ৯.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর ২০২৩ সালের শীতে ঢাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ১১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক জানান, স্বাভাবিক সময়ে সূর্যের কিরণকাল ৮ থেকে ১২ ঘণ্টা হলেও এখন তা কমে দাঁড়িয়েছে ৩ থেকে ৪ ঘণ্টায়। এতে ভূপৃষ্ঠ উত্তপ্ত হতে না পারায় দিনের ও রাতের তাপমাত্রার পার্থক্য অনেকটাই কমে গেছে। ফলে শীতও বেশি অনুভূত হচ্ছে। পুরো জানুয়ারি মাসজুড়েই শীতের এমন অনুভূতি থাকতে পারে বলে জানিয়েছেন তিনি।

আবহাওয়াবিদ খন্দকার হাফিজুর রহমান জানান, পরের শৈত্যপ্রবাহটি শেষ হলে ফেব্রুয়ারিতে তাপমাত্রা ধীরে ধীরে বাড়তে থাকবে। তখন শীতও কম অনুভূত হবে।

"