নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২৫ জানুয়ারি, ২০২৪

শীতের দাপট থাকবে মাসজুড়ে

ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় গতকাল বুধবার ছিল ঘন কুয়াশা। দক্ষিণের জনপদ বাগেরহাটের মোংলায় গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিও রেকর্ড করেছে আবহাওয়া অফিস। এদিন দেশের ২১টি জেলায় মৃদু শৈত্যপ্রবাহ ছিল। আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, বৃহস্পতিবার তাপমাত্রা কিছুটা বাড়তে পারে। তবে এরপর থেকে আবার তাপমাত্রা কমে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। এতে দেখা যাচ্ছে, শীতের দাপট থাকবে জানুয়ারি মাসজুড়েই।

বুধবার সন্ধ্যায় রাজধানীতে বৃষ্টি হয়েছে। সন্ধ্যা সাড়ে ৫টার দিকে বৃষ্টি শুরু হয়। এ সময় গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি শরীর না ভেজালেও শীত একটু যেন বাড়িয়ে দিয়েছে। এদিকে বৃষ্টির কারণে অফিসফেরত মানুষ পড়েছেন ভোগান্তিতে। বৃষ্টির আগে বাড়ি ফেরার তাড়ায় সড়কেও কিছুটা বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি হয়।

ভ্রাম্যমাণ দোকানিরা বৃষ্টির কারণে ভোগান্তিতে পড়েছেন। গরম কাপড় এবং জুতাসহ বিভিন্ন দোকানিদের এ সময় ব্যবসা সাময়িকভাবে গুটিয়ে নিতেও দেখা যায়। এদিকে রাজধানী ছাড়াও খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বৃষ্টির খবর পাওয়া গেছে।

গতকাল সকালের দিকে দেশের চার জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কথা জানায় আবহাওয়া অফিস। সকাল সাড়ে ১০টা তারা জানায়, সর্বনিম্ন তাপমাত্রা গতকাল উত্তরের জনপদ পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায়, ৮ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে এ তাপমাত্রা আগের দিনের চেয়ে বেড়েছে। মঙ্গলবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল সিরাজগঞ্জ ও চুয়াডাঙ্গায়, ৬ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এটা ছিল এ মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মো. হাফিজুর রহমান গতকাল বলেন, রংপুর ও রাজশাহী বিভাগ, কিশোরগঞ্জ ও চুয়াডাঙ্গাসহ মোট ১৮ জেলায় মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বইছে। সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৮ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে সেখানে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ থাকে বলে গণ্য করা হয়। ৬ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা নামলে তা হয় মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ। ৪ থেকে ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা হলো তীব্র শৈত্যপ্রবাহ।

তাপমাত্রা বাড়ার প্রবণতা আগামী দুই দিন থাকতে পারে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদ হাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, এরপর থেকে আবার তাপমাত্রা কমতে পারে। সে অনুযায়ী জানুয়ারি মাসজুড়েই শীতের দাপট থাকতে পারে।

ঘন কুয়াশায় শাহজালালে নামতে পারল না পাঁচ ফ্লাইট : ঘন কুয়াশার কারণে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামতে পারেনি পাঁচটি যাত্রীবাহী বিমান। এগুলো পরে চট্টগ্রাম ও কলকাতায় চলে যায়। বেলা বেড়ে যাওয়ার পর থেকে শাহজালালে উড়োজাহাজ চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম গতকাল বুধবার বেলা ১১টার দিকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

কিশোরগঞ্জ (নীলফামারী) : প্রতিকূল আবহাওয়ায় বোরো ধানের বীজতলা নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে। বীজতলা ঢেকে রাখা, পানি দেওয়া এবং ছত্রাক নাশক স্প্রে করেও ক্ষতি ঠেকানো যাচ্ছে না। এতে চারা সংকটে বোরো মৌসুমে ধানের উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা করছেন কৃষকরা। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে ৬৫০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের বীজতলা রয়েছে। ১১ হাজার ১১০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। রণচন্ডী ইউনিয়নের দক্ষিণপাড়া গ্রামের কৃষক বাদশা মিয়া ও নুরুল ইসলাম জানান, অতিরিক্ত ঠাণ্ডায় বোরো বীজতলা হলুদ রং ধারণ করেছে।

মৌলভীবাজার : গতকাল সকাল ৯টায় মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল আবহাওয়া পর্যবেক্ষণকেন্দ্রে তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা আগের দিন ছিল ৯ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

তীব্র শীতের কারণে শীতজনিত রোগে আক্রান্তের সংখ্যা হঠাৎ বেড়ে গেছে। মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যা হাসপাতালের পরিসংখ্যান অফিস সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে সদর হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ২২৮। তাদের মধ্যে ১১১ জন ভর্তি হয়েছেন আগের ২৪ ঘণ্টায়। গত মঙ্গলবার হাসপাতালের বহির্বিভাগে ৮৫৩ রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। মৌলভীবাজারের সিভিল সার্জন ডা. চৌধুরী জালাল উদ্দীন মুর্শেদ বলেন, তীব্র শীতের কারণে অনেক লোক অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

কুড়িগ্রাম : ঠাণ্ডায় বিপাকে পড়েছেন শ্রমজীবী ও নিম্নআয়ের মানুষজন। শীত উপেক্ষা করে বাড়ি থেকে বের হলেও কাজ পাচ্ছে না অনেকে। শীতে হাসপাতালগুলোয় বাড়ছে ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট, সর্দি-কাশিসহ শীতজনিত রোগীর সংখ্যা। সদরের যাত্রাপুর ইউনিয়নের মিরাজুল বলেন, ‘ঠাণ্ডায় বাইরে কাজ করতে যাচ্ছি। খুবই সমস্যা হচ্ছে, দুদিন ধরে সর্দি-কাশিতে ভুগছি। অভাবের সংসার সন্তানদের গরমের কাপড় কিনব তাও পারছি না।’ প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছেন নীলফামারী, মৌলভীবাজার ও কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close