নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২৫ জানুয়ারি, ২০২৪

উত্তরা-মতিঝিল

মেট্রোরেলে যাত্রীর চাপ বাসে লোকসান

যানজটে আটকাপড়ার যন্ত্রণা নেই মেট্রোরেলে * দিনে প্রায় আড়াই লাখ যাত্রীর চলাচল * সকালে প্রতিটি ট্রেনে ১৮০০-২০০০ যাত্রী হয় * তিন দিনে ২০ হাজার এমআরটি পাস, যুক্ত হবে নতুন বগি

রাজধানীর উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত সারাদিন মেট্রোরেল চলাচল শুরুর পর থেকে যাত্রী কমে যাচ্ছে ওই রুটের বাসগুলোয়। অনেক বাস মালিক ও পরিবহন শ্রমিক জানিয়েছেন, লোকসান গুণছেন তারা।

বিকল্প পরিবহনের একটি বাসের মালিক মাকসুদুর রহমান বলেন, সারাদিন ট্রেন চলাচল শুরুর আগ পর্যন্ত আমাদের ব্যবসা ভালোই চলছিল। কিন্তু এখন আমাদের লোকসান হচ্ছে।

মতিঝিল-মিরপুর-১২ রুটে ৩৫টি বাস চলাচল করে এই পরিবহনের। বিকল্প পরিবহন গত নভেম্বর থেকে যাত্রাবাড়ী পর্যন্ত রুট সম্প্রসারণ করে এ আশায় যে তাদের ব্যবসায় যাতে কোনো প্রভাব না পড়ে। গত মঙ্গলবার কোম্পানিটির মাত্র ২৭টি বাস চলাচল করে, বাকিগুলো পার্কিং করে রাখা হয়।

মাকসুদুর রহমান জানান, সাপ্তাহিক কাজের দিন সন্ধ্যায় তার বাস মতিঝিল থেকে মিরপুর-১২ পর্যন্ত গেলে প্রতিবার দেড় হাজার টাকার বেশি আয় হতো। এখন মাত্র ১ হাজার ১০০ থেকে ১ হাজার ৩০০ টাকা বা তারও কম আয় হয়। ২০১৯ সালে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে তিনি বাসটি কিনেছিলেন। ঋণ পরিশোধের জন্য তিনি এখন অন্য রুটে বাস চালাবেন কিনা তা নিয়ে ভাবছেন।

আজিমপুর-মিরপুর-১২ রুটে চলাচলকারী মিরপুর সুপার লিংকের চারটি বাসের মালিক মোহাম্মদ জসিম বলেন, মেট্রোরেলের প্রভাব অকল্পনীয়। সকালে ব্যস্ত সময়ে প্রতিটি বাস মিরপুর থেকে আজিমপুর গেলে তার আয় হতো দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা। এখন তা কমে ১ হাজার ২০০-১ হাজার ৪০০ টাকায় নেমে এসেছে। সম্প্রতি মিরপুর সুপার লিংক বাস মালিকরা এ রুটে ৫০টির পরিবর্তে ৩০টি বাস চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

মাওয়া থেকে মিরপুর-১২ রুটে চলাচলকারী স্বাধীন এক্সপ্রেসের হেড সুপারভাইজার জাহিদ হোসেন জানান, তার ক্রেতাদের প্রায় অর্ধেকই পল্লবী থেকে গুলিস্তানে যাতায়াতকারী। কিন্তু এখন সেই হার নেমে এসেছে প্রায় ১০ ভাগে। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশন ও বিহঙ্গ পরিবহনের কর্মচারীরাও তাদের ব্যবসার একই হিসাব দিয়েছেন।

মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, প্রতিদিন প্রায় আড়াই লাখ যাত্রী এই পরিষেবা নিচ্ছেন। সকালে পিক আওয়ারে প্রতিটি ট্রেনে উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ১ হাজার ৮০০-২ হাজার যাত্রী যাতায়াত করে। এর প্রভাব পড়েছে বাস ব্যবসায়।

পল্লবী থেকে মতিঝিলে যাতায়াত করা ৪২ বছর বয়সি ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আলম বলেন, মেট্রো সার্ভিস তাকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে কাটানোর যন্ত্রণা থেকে বাঁচিয়েছে। কখনো কখনো আমার ১৪ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে তিন ঘণ্টা লাগত। এখন সময় লাগে মাত্র ৩০ মিনিট।

বিশ্বব্যাংকের ২০১৭ সালের এক বিশ্লেষণ অনুযায়ী, বিশ্বের অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ শহর ঢাকায় যানজটের কারণে প্রতিদিন ৩২ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট হয়।

এদিকে, ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) কোম্পানি সচিব (যুগ্ম সচিব) মোহাম্মদ আবদুর রউফ মেট্রোরেলের চলাচলের মধ্যবর্তী সময় কমানোর বিষয়ে বলেন, এটা আমরা চিন্তা করছি। এক সপ্তাহের মধ্যে আমরা দেখছি বিষয়টা। আমাদের টিম কাজ করছে। সার্ভে করে আমরা দেখবো মেট্রোরেল চলাচলের মধ্যবর্তী সময়টা কতটা কমিয়ে আনা যায়।

গত তিন দিনে প্রায় ২০ হাজার এমআরটি পাস কিনেছেন যাত্রীরা-এ তথ্য জানিয়ে মোহাম্মদ আবদুর রউফ বলেন, এখন যে ভিড় হচ্ছে তার কারণ এখন নতুন অনেকে মেট্রোরেল ব্যবহার শুরু করছেন। তারা একক টিকিট কেটে যাতায়াত করছেন। তাদের অনেকেই এরইমধ্যে এমআরটি পাস কিনে ফেলবেন। গত তিন দিনে আমাদের এমআরটি পাস কিনেছেন প্রায় ২০ হাজার লোক। তারা কিন্তু আর লাইনে দাঁড়াবেন না।

সমস্যা সমাধানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা সংযোজিত হবে জানিয়ে মোহাম্মদ আবদুর রউফ বলেন, আমাদের বগি বাড়ানোর চিন্তাও আছে। যে সিস্টেমে আছে সেখানে প্রত্যেক কোচে আরো দুটি বগি যুক্ত করতে পারবো। এছাড়া নতুন কোচ প্রয়োজন হলে ভাবা হবে।

শিডিউল ফেল সমস্যার সমাধান : মেট্রোরেলের শিডিউল ফেলের বিষয়ে জানতে চাইলে মোহাম্মদ আবদুর রউফ বলেন, প্রত্যেকটা ট্রেন তার যাত্রীর ওজন ক্যালকুলেট করে ওই অনুযায়ী প্রত্যেক স্টেশনে অটো ব্রেক করে। এ সিস্টেম সিগন্যালে কোনো মেসেজে টেকনিক্যাল ইস্যু যদি হয় তাহলে সেটা স্টেশনের ট্রেনে ঢোকার জন্য যে দরজাগুলো আছে তার আগে অথবা পরে থেমে যায়। তখন সেটাকে ম্যানুয়ালি সঠিক জায়গায় সেট করতে হয়। তখন দুই তিন মিনিট লাগে। এটা এড্রেস করানোর জন্য আমরা আমাদের কনট্রাকটরসহ আরো যারা আছে তাদের সঙ্গে মিটিং করেছি। শিগগিরই এ সমস্যার সমাধান হবে। এছাড়াও অতিরিক্ত যাত্রীর কারণে ট্রেনের দরজা খোলা বন্ধ নিয়ে সমস্যা হয়। তখন স্টেশন থেকে ট্রেন ছাড়তে লেট হয়। আরো যেসব জায়গায় কাজ করতে হবে তা ডিএমটিসিএল কাজ করছে জানিয়ে তিনি বলেন, নতুন একটা সিস্টেম চালু হয়েছে। জনগণও অভ্যস্ত হয় নাই। আমাদেরও প্রতিনিয়তই নতুন বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করতে হচ্ছে। আমরা সমাধান খুঁজে বের করবো।

২০২২ সালের ২৮ ডিসেম্বর উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রোরেল উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে গত ৪ নভেম্বর আগারগাঁও থেকে মতিঝিল অংশের উদ্বোধন করেন তিনি। গত ৩১ ডিসেম্বর সর্বশেষ মেট্রোরেলের শাহবাগ ও কারওয়ানবাজার স্টেশন চালু হয়। এর মধ্য দিয়ে এমআরটি-৬ লাইনের উত্তরা দিয়াবাড়ি থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ১৬ স্টেশনে চালু হলো মেট্রোরেল। মেট্রোরেলের ১৬টি স্টেশন হলো- উত্তরা উত্তর, উত্তরা সেন্টার, উত্তরা দক্ষিণ, পল্লবী, মিরপুর-১১, মিরপুর-১০, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, আগারগাঁও, বিজয় সরণি, ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, শাহবাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ সচিবালয় এবং মতিঝিল। গত ২০ জানুয়ারি থেকে উত্তরা উত্তর স্টেশন থেকে মতিঝিল অংশে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চলাচল করছে মেট্রোরেল।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close