প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ২৪ জানুয়ারি, ২০২৪

নিম্নআয়ের মানুষ ভালো নেই

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে নিম্ন মধ্যবিত্ত ও নিম্নআয়ের মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। চাল কিনলে, তেল কিনতে পারছেন না। বাজারে গিয়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনার সময় কাটছাঁট করতে হচ্ছে তালিকা। বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, চাল, ডালসহ সব ধরনের পণ্যের দামই আগের চেয়ে বেড়েছে। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

গাজীপুর : গাজীপুরে রিকশা চালান ময়মনসিংহের ভালুকার মো. আনোয়ার হোসেন। স্ত্রী ও চার সন্তান নিয়ে ছয় সদস্যের সংসার তার। আনোয়ার হোসেন বলেন, একবেলা রিকশা চালিয়ে জমার দেওয়ার পর ২০০ থেকে ২৫০ টাকার বেশি হাতে থাকে না। তিনি বলেন, বড় ছেলে ভ্যানগাড়ি চালায় এবং স্ত্রী অন্যের বাড়িতে রান্নার কাজ করেন। তিনজনের রোজগার দিয়েও সংসার চলে না। খুব কষ্টে আছি। তিনি বলেন, আগে সপ্তাহে এক দিন মাংস খেতেন, এখন মাসে একবারও মাংস খাওয়া হয় না।

শহরের জয়দেবপুর বাজারের জয় মা দুর্গা রাইস স্টোরের দোকানি সুরঞ্জিত রায় বলেন, নির্বাচনের পরে চালের দাম প্রকার ভেদে বেড়েছিল ৪ থেকে ৫ টাকা করে। তবে গত সপ্তাহ থেকে চালের দাম কেজিতে ২ থেকে ৩ টাকা করে কমেছে। বর্তমানে প্রকার ভেদে বাজারে চালের মূল্য ৫০ থেকে ৭৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

মেহেরপুর : প্রচণ্ড শীতে শ্রমজীবীদের কাজ কমে গেছে। এর মধ্যে নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতিতে দিশাহারা হয়ে পড়েছেন নিম্ন আয়ের এসব মানুষ।

সরেজমিনে দেখা গেছে, সব ধরনের মাংসের দাম বেড়েছে কেজিপ্রতি ১০০ থেকে ১৫০ টাকা। ব্রয়লার মুরগি, আটাসহ আরো কয়েকটি পণ্যও বাড়তি দরে বিক্রি হচ্ছে। চালের পাশাপাশি তেল, ডাল, আটা-ময়দার দামও বেড়েছে। ২৫ কেজির প্রতি কেজি মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৪, মাঝারি মানের চাল ৫৮ থেকে ৬০ টাকা। আর ভালো মানের চাল বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৭৫ টাকা। ফলে সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে যাচ্ছে। এ কারণে ওএমএসের ডিলার পয়েন্টে নিম্নআয়ের মানুষের সারি দীর্ঘ হচ্ছে। চার কেজি চাল পেতে আগের দিন সন্ধ্যায় শীত উপেক্ষা করে লাইনে অবস্থান নিচ্ছে এসব মানুষ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক চাল ব্যবসায়ী জানান, হঠাৎ করে মিলাররা চালের দাম বাড়িয়েছেন। তাদের কাছ থেকে বেশি দামে কিনতে হয়েছে। তাই আমরা বেশি দামে বিক্রি করছি। মিলারদের অজুহাত, ধানের দাম বেশি হওয়ায় চালের দামও বেড়েছে।

এনজিওকর্মী আরিফ হোসেন বলেন, পরিবারের সদস্য সংখ্যা ৬ জন। বেতন পাই ২০ হাজার টাকা। এ বেতনে সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। বর্তমানে বয়লার মুরগি, ডিম, মাছ কেনা বন্ধ করে দিয়েছি।

মাগুরা : জেলায় চাল, ডাল, আটা ও সবজির দাম বৃদ্ধিতে বিপাকে পড়েছেন সাধারণ ক্রেতারা। সবজির দাম কমার কোনো লক্ষণ নেই। বাজার করতে আসা আজম শিকদার বলেন, একটা লাউ আগে যেখানে ছিল ৩০ থেকে ৪০ টাকা। এখন সেই লাউ ৭০ থেকে ৮০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে বলে জানান তিনি।

সবজি ব্যবসায়ী কাইয়ুম হোসেন বলেন, প্রতিদিন পাইকারি কাঁচাবাজার থেকে ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি দরে কিনতে হচ্ছে। তাই বাড়তি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মাগুরার সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ মামুনুল হাসান বলেন, বাজারের অস্থিরতা ঠেকাতে আমরা নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান পরিচালনা করেছি।

কুষ্টিয়া : কুষ্টিয়ার বাজারে সব ধরনের চালের দাম বেড়েছে। গতকাল মঙ্গলবার কুষ্টিয়া পৌর বাজরে গিয়ে দেখা গেছে, আঠাশ চাল ৫৪ টাকা, কাজললতা ৬০ ও মিনিকেট ৬৪ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। গত কয়েক দিনে কেজিতে ৪ টাকা করে কমেছে। ক্রেতা সুমন জানান, দিন দিন নিত্যপণ্যের দাম বাড়ছে। ইচ্ছা থাকলেও অনেক কিছুই কিনতে পারছি না।

নরসিংদী : নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধির ফলে ভালো নেই জেলার মধ্যবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত ও নিম্নআয়ের মানুষ। যেসব শ্রমীজীবী মানুষ দিন শেষে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা মজুরি পায়, দিন শেষে সেই টাকা দিয়ে তাদের সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। শ্রমজীবী মানুষের প্রতিদিন কাজ জোটে না। ফলে বাধ্য হয়ে বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার কাছ থেকে (এনজিও) উচ্চ হারে সুদে ঋণ নিয়ে সংসার চালাতে হয়। নিম্ন আয়ের মানুষদের জন্য মাছ-মাংস খাওয়া যেন স্বপ্ন দেখার মতো হয়ে পড়েছে।

সরেজমিনে বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে চাল ভেদে দাম বেড়েছে বস্তা প্রতি ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা পর্যন্ত। গতকাল মঙ্গলবার সকালে পলাশের খানেপুর বাজারে একটি গরুর মাংসের দোকানে সামনে ঘোরাঘুরি করতে দেখা যায় অটোরিকশাচালক হারিজ মিয়াকে। তিনি জানান, সন্তানদের ইচ্ছা পূরণ করতে এক কেজি গরুর মাংস কিনতে এসেছিলেন। কিন্তু দাম বেশি হওয়ায় খালি হাতেই ফিরতে হচ্ছে তাকে।

চাকরিজীবী আবদুল খন্দকার বলেন, বেতন পান ২২ হাজার টাকা। তিনি বলেন, বাজারে সবকিছুর দামই স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি। তাই প্রয়োজন আর ইচ্ছা থাকলেও কাটছাঁট করে প্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে হচ্ছে। এ রকম অবস্থা বাজার করতে আসা প্রায় প্রতিটি মানুষেরই।

বগুড়া : আগেই মাসের প্রায় দিনই মাছ মাংস থাকত খাবারের তালিকায় তবে এখন অনেক পরিবর্তন করতে হয়েছে। সপ্তাহে এক দিন মাংস, অন্য এক দিন মাছ, ডিম আর ব্রয়লার মুরগির মাংস খাবার তালিকায় যুক্ত হয়েছে। এরপরও মাসের শেষ সপ্তাহে হাতে নগদ টাকা প্রায় শূন্যের কোঠায় নেমে আসে। গত কয়েক বছর ধরে এভাবেই চলছে চাকরিজীবী মাহমুদ হাসানের পরিবার।

শুধু মাহমুদ হাসান নয়, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম দাড়ায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন মধ্যবিত্ত পরিবারের মানুষও। সংসার চালাতে তারাও ঘাম ঝড়ছে। বাজারের তালিকায় করতে হচ্ছে কাটছাঁট।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close