মিজান রহমান

  ২২ জানুয়ারি, ২০২৪

সংরক্ষিত নারী আসন পেতে চলছে তদবির

দ্বাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশন বসবে আগামী ৩০ জানুয়ারি। নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের শপথ সম্পন্ন হওয়ার পর থেকেই আলোচনা জোরালো হচ্ছে সংরক্ষিত নারী আসন নিয়ে। কারা সংরক্ষিত ৫০টি আসনে জায়গা পাচ্ছেন এ নিয়ে চলছে তুমুল আলোচনা। এসব সংরক্ষিত আসন যারা প্রত্যাশা করছেন তারা দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন গণভবন, দলীয় কার্যালয়ে। তারা দলের জ্যেষ্ঠ নেতা ও সংসদ সদস্যদের কাছে ধরনা দিচ্ছেন। দলীয় ও স্বতন্ত্র জোট থেকে সংরক্ষিত নারী আসনে মনোনয়ন নিয়ে চলছে নানামুখী হিসাব-নিকাশ। দামি হোটেলে এ নিয়ে হচ্ছে তদবির ও বৈঠক। সংসদে নারী আসন পেতে বিরাট মোটা অঙ্কের টাকা লেনদেনের খবর পাওয়া গেছে।

সংসদ সচিবালয় সূত্রে জানা গেছে, সংসদ অধিবেশন শুরু হওয়ার পরপরই সংরক্ষিত নারী আসনের তফসিল ঘোষণা করা হবে। নির্বাচন কমিশনের এমন ঘোষণার পর সারা দেশের বিভিন্ন স্তরের নারীসহ আওয়ামী লীগের নেত্রীরা ধরনা দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বাসভবনসহ নানা স্থানে। এ বিষয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগের মুখপাত্র ওবায়দুল কাদের এ বিষয়ে কোনো তথ্য প্রকাশ করেননি। আওয়ামী লীগের বাইরে জাতীয় পার্টি নারী আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করতে দেনদরবার করছে। থেমে নেই স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচিত সংসদ সদস্যরাও। তারা জোট করে সংসদে নারী আসনের হিস্যা নেওয়ার চেষ্টায় আছেন বলে জানা গেছে। সংসদের আইন শাখার এক কর্মকর্তা প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, এবার সংসদে আওয়ামী লীগ পেয়েছে ২২৩টি, স্বতন্ত্র ৬২টি ও জাতীয় পার্টি পেয়েছে ১১টি আসন। অন্যান্য দল ৩টি। এর মধ্যে নিয়ম অনুযায়ী, ৬ জন এমপি মিলে একজন নারীকে মনোনয়ন দিতে পারবেন সংরক্ষিত আসনের জন্য। সে অনুয়ায়ী, নারী আসন আওয়ামী লীগের কোঠায় যাবে ৩৭টি। স্বতন্ত্র সদস্যরা ৬২টি আসন পাওয়ায় ১০টি নারী আসন যাবে স্বতন্ত্রদের কোটায়। জাতীয় পার্টি পাবে দুইটি আসন। তিনি বলেন, যেহেতু স্বতন্ত্র প্রার্থী এবার অনেক বেশি তাই এ বিষয়ে কী হবে আলাপ-আলোচনা করা হবে বলে শুনেছি। আইন অনুযায়ী, স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যরা জোট গঠন করে নারী এমপি নির্বাচিত করতে পারবেন। সংসদে সংরক্ষিত নারী আসন ৫০টি।

সংশ্লিষ্ট কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনে মনোনয়ন পেতে তদবির ও ধরনা দিতে শুরু করেছেন প্রত্যাশীরা। শুধু দলীয় নয়, এবার স্বতন্ত্র জোটের মনোনয়ন পেতেও জোর তদবিরে নেমেছেন আওয়ামী লীগ ও বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের পদধারী, ছাত্রলীগের সাবেক নেত্রী, উদ্যোক্তা, অভিনেত্রীসহ বিভিন্ন মাধ্যমের তারকারা। একাদশ সংসদের সংরক্ষিত নারী এমপিরাও পদ ধরে রাখতে ব্যাপক তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে।

দলীয় ও স্বতন্ত্র জোটের মনোনয়ন নিয়ে শুরু হয়েছে নানা হিসাব-নিকাশ। এক্ষেত্রে সদ্য সমাপ্ত সংসদের নারী এমপিদের অনেককে বাদ দিয়ে আনা হতে পারে নতুন মুখ। বর্তমান নারী এমপিদের আমলনামা এখন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার হাতে। এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য নারীনেত্রীরা গণভবনে যাওয়া-আসা বাড়িয়ে দিয়েছেন। দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গেও যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন তারা। টানা চতুর্থবারের মতো জাতীয় নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পর আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা নতুন মন্ত্রিসভায় দলীয় নেতাদের যেভাবে মূল্যায়ন করেছেন, সেভাবে সংরক্ষিত নারী আসনেও পরিবর্তন আনতে পারেন।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া বলেন, ‘সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনে মনোনয়নের জন্য আওয়ামী লীগ কবে মনোনয়নপত্র বিক্রি শুরু করবে তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। তবে নির্বাচন কমিশন তফসিল ঘোষণা করার পর দ্রুততম সময়ের মধ্যেই দলীয় মনোনয়নপত্র বিক্রির কার্যক্রম শুরু করা হবে।’

এদিকে এবার স্বতন্ত্র কোটায় এমপি হতে জোটের মনোনয়ন পেতে এরই মধ্যে জোর তদবিরে নেমেছেন আওয়ামী লীগ ও বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের পদধারী, ছাত্রলীগের সাবেক নেত্রী, আইনজীবী, উদ্যোক্তা, উন্নয়ন সংস্থার কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী বিভিন্ন স্তরের নারীনেত্রীরা। নারীনেত্রীদের একাংশ স্বতন্ত্র সদস্যদের জোট থেকে মনোনয়ন পাওয়ার তদবিরে নেমেছেন।

এর আগে দশম সংসদে ১৬ স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য মিলে তিনজন সংরক্ষিত নারী আসনের সদস্য নির্বাচিত করেছিলেন। আর একাদশ সংসদে তিনজন সংসদ সদস্য অন্যদের সঙ্গে মিলে একজন নির্বাচিত করেন। এবার স্বতন্ত্র জোট থেকে সংরক্ষিত নারী আসনে মনোনয়ন নিয়ে চলছে নানা হিসাব-নিকাশ। যদিও ৬২ স্বতন্ত্র সদস্যদের ৫৮ জনই আওয়ামী লীগের জেলা-উপজেলার পদধারী ব্যক্তি, তাই তারা স্বতন্ত্রই থেকে যাবেন নাকি দলে ফিরবেন তার সুরাহা এখনো হয়নি। স্বতন্ত্র সদস্যদের কোনো সংসদীয় নেতাও এখনো ঠিক হয়নি। জাতীয় সংসদেও এই বার্তা বহাল থাকলে স্বতন্ত্র সদস্যরা যদি দলীয় এমপি হিসেবে যোগ দেন তাহলে স্বতন্ত্র কোটার ৯টি সংরক্ষিত আসন চলে যাবে আওয়ামী লীগের বলয়ে।

বাকি চার স্বতন্ত্র সদস্য আওয়ামী লীগ দলীয় না হওয়ায় তারা স্বতন্ত্র হিসেবে যদি বিবেচিত হন সেক্ষেত্রে দশম এবং একাদশ সংসদের মতো তারা যৌথভাবে নির্বাচন করতে পারবেন একটি সংরক্ষিত আসন। জাতীয় পার্টি ১১টি আসন পাওয়ায় তারা নির্বাচন করতে পারবেন সম্ভবত ২টি সংরক্ষিত আসন। বাকি তিন দলের (জাসদ, ওয়ার্কার্স পার্টি ও কল্যাণ পার্টি) তিন সদস্য মিলে একজন সংরক্ষিত সদস্য নির্বাচন করতে পারার কথা অবশ্য তারা যদি এতে একমত থাকেন। তবে হিসাব এতটা সরল নাও হতে পারে। এ বিষয়ে স্পিকারের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।

আওয়ামী লীগ এককভাবে সংরক্ষিত আসনগুলোর অন্তত ৩৫টি যে পাচ্ছে তাতে কোনো সংশয় নেই। এ সংখ্যা আরো বাড়তে পারে। স্বতন্ত্ররা দলীয় সংসদ সদস্যদের সঙ্গে যুক্ত হলে সংরক্ষিত ৫০ নারী আসনের ৪৫টি নির্বাচনের এখতিয়ার চলে যাবে আওয়ামী লীগের সংসদ নেতার হাতে।

এদিকে স্বতন্ত্র কোঠায় এমপি করতে মাঠে নেমেছে একটি চক্র। এমপি বানিয়ে দেবে এমন আশ্বাসে দেনদরবার চলছে। স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নিয়ে জোট করে এমপি বানাবে এ নিয়ে টাকা-পয়সা লেনদেন হয়েছে এমন খবরও পাওয়া যাচ্ছে।

এছাড়া ১১টি আসনে বিজয়ী জাপার দুটি সংরক্ষিত আসনে দলের দুই কো-চেয়ারম্যান শেরীফা কাদের ও সালমা ইসলামের মনোনয়ন অনেকটা নিশ্চিত। এর বাইরে ৪৮ জনের মনোনয়ন সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর নির্ভর করছে। তাই আওয়ামী লীগের সাবেক এমপিদের পাশাপাশি অনেকেই প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টায় আছেন।

জাতীয় নির্বাচনের পর দ্বাদশ জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনে নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশন ও রাজনৈতিক দলগুলোও এরই মধ্যে প্রস্তুতি শুরু করেছে। আইন অনুযায়ী, জাতীয় নির্বাচনের ফলের গেজেট প্রকাশের ৯০ দিনের মধ্যে সংরক্ষিত নারী আসনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে হবে। গত ৯ জানুয়ারি বিজয়ীদের গেজেট প্রকাশিত হওয়ায় আগামী ৮ এপ্রিলের মধ্যে সংসদের সংরক্ষিত আসনের ভোট করতে হবে নির্বাচন কমিশনকে।

নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের মধ্যে যারা শপথ গ্রহণ করেছেন, তাদের তথ্য এরই মধ্যে নির্বাচন কমিশনে দাখিল করা হয়েছে। দ্বাদশ নির্বাচনের ফলাফল গেজেট আকারে প্রকাশের ৩০ দিনের মধ্যে সংরক্ষিত নারী আসনে নির্বাচনের উদ্দেশে সাধারণ আসনে নির্বাচিত সদস্যদের রাজনৈতিক দল বা জোটওয়ারি পৃথক তালিকা প্রস্তুত করবে ইসি। আসন বণ্টন সংক্রান্ত বিদ্যমান আইন অনুযায়ী সংরক্ষিত আসনের নারী সদস্যদের জন্য কোনো নির্ধারিত নির্বাচনী এলাকা নেই। তারা কেবল দলীয় বা জোটের সদস্য হিসেবে পরিচিত হবেন। এক্ষেত্রে দল বা জোটের প্রাপ্ত আসনের ভিত্তিতে নারী আসন বণ্টিত হবে। ইসি সচিবালয়ের যুগ্ম সচিব ফরহাদ আহম্মদ খান প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, সংসদ অধিবেশন শুরু হওয়ার পরপরই সংরক্ষিত নারী আসনের তফসিল ঘোষণা করা হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close