উন্নত ও স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে জনপ্রতিনিধি এবং সরকারি কর্মকর্তাদের একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘জনপ্রতিনিধি ও সরকারি কর্মকর্তারাই সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বাস্তবায়নের মূল চালিকাশক্তি। জনপ্রতিনিধি ও সরকারি কর্মকর্তারা একসঙ্গে প্রচেষ্টা নিলে যেকোনো অসাধ্য কাজও বাস্তবায়ন সম্ভব হয়। তাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উন্নত ও স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার যে লক্ষ্যমাত্রা আমাদের জন্য নির্ধারণ করে দিয়েছেন তা সফল করতে গেলে জনপ্রতিনিধি ও সরকারি কর্মকর্তাদের একসঙ্গে কাজ করতে হবে।’

গতকাল শনিবার কুমিল্লার লাকসামে পৌর কনফারেন্স হলে এক মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন মো. তাজুল ইসলাম। এতে সভাপতিত্ব করেন কুমিল্লা জেলা প্রশাসক খন্দকার মু. মুশফিকুর রহমান। সভায় কুমিল্লা জেলা, লাকসাম পৌরসভা, লাকসাম ও মনোহরগঞ্জ উপজেলার সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী।

সভায় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জেলার পুলিশ সুপার আবদুল মান্নান, বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ডের (বিআরডিবি) মহাপরিচালক আ. গাফফার খাঁন, বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমির (বার্ড) মহাপরিচালক মো. হারুন অর রশিদ মোল্লা, সমবায় অধিদপ্তরের নিবন্ধক ও মহাপরিচালক মো. শরিফুল ইসলাম, কুমিল্লার সিভিল সার্জন নাছিমা আকতারসহ জেলার সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের প্রধানরা।

এতে জনপ্রতিনিধিদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন লাকসাম উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ইউনুস ভূঁইয়া, মনোহরগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. জাকির হোসেন, লাকসাম পৌরসভার মেয়র মো. আবুল খায়েরসহ অন্যরা।

স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সরকারি যেকোনো কাজে কোয়ালিটি (গুণগতমান) নিয়ে ছাড় দেওয়া নয় বরং নিম্নমানের কাজ করলে ঠিকাদারের শাস্তি ও লাইসেন্স বাতিলের নির্দেশনা দেন। এছাড়া ঠিকাদার ও নির্মাণশ্রমিদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে স্বল্প সময়ে কাজের গুণগতমান বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেন মন্ত্রী।

সভায় স্থানীয় সরকারমন্ত্রী বেশকিছু বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা দেন। এর মধ্যে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধে নিয়মিত বাজার তদারকি, জেলার স্বাস্থ্য খাতে নারী, শিশু ও বয়োজ্যেষ্ঠদের চিকিৎসাসেবার জন্য কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোর সেবার মান উন্নতকরণ, শিক্ষা খাতে সরকারি ও বেসরকারি বিদ্যালয়ে নিয়মিত শিক্ষাদানের সঙ্গে সঙ্গে গুণগতমান উন্নয়ন, কৃষকের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তি নিশ্চিতকরণ, রাস্তাঘাটসহ অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং স্যানিটেশন সেবায় গুণগতমান বজায় রেখে কাজ করার নির্দেশনা দেন মন্ত্রী।

কুমিল্লা জেলাকে মাদকমুক্ত করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়ে সভায় বিস্তারিত আলোচনা হয়। মাদক সমাজ ও পরিবারকে ধ্বংসের কারণ উল্লেখ করে মো. তাজুল ইসলাম বলেন, ‘কুমিল্লাকে একটি অনন্য জেলা হিসেবে গড়ে তুলতে হলে অবশ্যই মাদকমুক্ত করতে হবে।’

শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার কারণ নিয়ে অনুসন্ধান ও তার প্রতিকারে ব্যবস্থা নিতে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী। এছাড়া দ্রুত সময়ের মধ্যে লাকসাম মডেল মসজিদের কাজ শেষ করার নির্দেশনা দেন তিনি।

মো. তাজুল ইসলাম বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা এরই মধ্যে নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছি। বর্তমানে আমাদের মাথাপিছু গড় আয় ২ হাজার ৮০০ ডলারের বেশি। আমাদের মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হতে গেলে ৪ হাজার ৫০০ ডলার এবং উন্নত দেশের কাতারে পৌঁছাতে হলে ১২ হাজার ৫০০ ডলার মাথাপিছু আয় অর্জন করতে হবে। এ লক্ষ্যমাত্রা তখনই অর্জন সম্ভব যখন আমরা সরকারি কর্মকর্তা ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা নিজেদের সর্বোচ্চটুকু উজাড় করে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বপ্নকে বাস্তবায়নের জন্য কাজ করে যাব।’

পরে একইদিন বিকেলে মো. তাজুল ইসলাম লাকসাম উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে শুভেচ্ছা জ্ঞাপন অনুষ্ঠান ও মতবিনিময় সভায় অংশগ্রহণ করেন। কুমিল্লা-৯ (লাকসাম ও মনোহরগঞ্জ) আসন থেকে টানা চারবারসহ পাঁচবারের মতো সংসদ সদস্য এবং দ্বিতীয়বারের মতো স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী হওয়ায় তাকে এই শুভেচ্ছা জানানো হয়।

শুভেচ্ছা জ্ঞাপন অনুষ্ঠানে লাকসাম উপজেলা ও পৌরসভা আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেন, ‘এই অর্জন আমার একার নয়, লাকসাম-মনোহরগঞ্জবাসীর সন্তান হিসেবে এ কৃতিত্ব আপনাদের সবার।’

মতবিনিময় সভা শেষে লাকসাম উপজেলা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, মহিলা লীগ, ছাত্রলীগসহ স্থানীয় বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে ফুলেল শুভেচ্ছা গ্রহণ করেন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী।

"