নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২০ জানুয়ারি, ২০২৪

হাতবদলে ঢাকায় দাম দ্বিগুণেরও বেশি

এবার শীতকালীন সবজির উৎপাদন ভালো। কিন্তু বাজারের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, উৎপাদনস্থলের তুলনায় ঢাকার বাজারে অধিকাংশ সবজির দাম কখনো দ্বিগুণ, কখনো তার চেয়ে আরো বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে। এর কারণ হিসেবে মধ্যস্বত্বভোগীদের দুষছেন ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, কৃষকের কাছ থেকে কেনা সবজি হাতবদলের পর মধ্যস্বত্বভোগীরা দ্বিগুণ থেকে তিনগুণ বেশি দামে বিক্রি করছেন। সিন্ডিকেটের কারণে ভরা মৌসুমে বাজারে সবজির দাম চড়া। ফলে মৌসুমেও রাজধানীতে অনেকটা অস্বাভাবিক দরে সবজি কিনতে হচ্ছে।

চুয়াডাঙ্গায় আলমডাঙ্গার খাদিমপুরের সবজি চাষি তোতা মিয়া পৌর বড় বাজারে বেগুন বিক্রি করেন ৪৫ টাকা কেজি। স্থানীয় এ বাজারে গতকাল শুক্রবার টমেটো বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ২০-৩০ টাকায়। একইদিনে যশোর সদর উপজেলার মথুরাপুর গ্রামের সবজি চাষি মনিরুল ইসলাম বারীনগর পাইকারি সবজির মোকামে ৩০ টাকা কেজিদরে টমেটো এবং ৩৮ টাকায় বেগুন বিক্রি করেন। কিন্তু উৎপাদনস্থলের দামের এ চিত্রের বিপরীতে ঢাকার মগবাজার, মালিবাগ ও শাহজাহানপুর বাজারে বেগুনের কেজি বিক্রি হয়েছে ৮০-১০০ টাকায়। জাতভেদে টমেটোর দাম রাখা হচ্ছিল ৫০-৭০ টাকা।

রাজধানীর মালিবাগ বাজারের সবজি বিক্রেতা মো. স্বপন বলেন, অন্যবার শীতের মাঝামাঝি থেকে সবজির দাম কমতে শুরু করলেও এবার পাইকারিতে এখনো দাম বাড়ছে। গত বুধবার একটা ব্রকলি পাইকারিতে কিনেছিলাম ৪০ টাকা, বৃহস্পতিবার সেটা কিনতে হয়েছে ৭০ টাকায়। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের দাবি, গতবারের তুলনায় এবার উৎপাদনস্থলে বেশি দরে সবজি বিক্রি হচ্ছে। উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় দাম বেড়েছে। তবে কৃষক সবজির যে দাম পাচ্ছেন, তাতে তারা খুশি। সবজির উৎপাদনও অন্যবারের তুলনায় কম হয়েছে বলে মনে করেন অনেকে।

রাজধানীর তিনটি বাজারে শুক্রবার প্রতিটি মাঝারি আকারের ফুলকপি বিক্রি হয়েছে ৫০ থেকে ৬০ টাকায়। বড় আকারের ফুলকপির দাম হাঁকানো হয়েছে প্রতিটি ৮০ টাকা। প্রতিটি বাঁধাকপির দাম ছিল ৫০-৬০ টাকা। প্রতি কেজি শিম বিক্রি হয়েছে মানভেদে ৬০-৮০ টাকায়। ব্রকলি ৭০-৮০ টাকায়। আর ভালোমানের একটি লাউয়ের দাম চাওয়া হচ্ছিল ১০০-১২০ টাকা। ভরা মৌসুমে বাজারে প্রতি কেজি ৫০ টাকার ঘরে সবজি আছে মাত্র তিনটি- পেঁপে, শালগম ও মুলা।

এদিকে যশোর, চুয়াডাঙ্গা ও বগুড়ার বাজারের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এসব বাজারে পাইকারিতে প্রতি কেজি শিম ২৫-৩০ টাকা, প্রতিটি ফুলকপি ২৮-৩০ ও লাউ ৪০-৫০ টাকায় বিক্রি করছেন। অন্যান্য সবজির মধ্যে পেঁপে, শালগম, মুলা ও করলার দামও ঢাকার তুলনায় অর্ধেক বা তার চেয়ে কম দামে বিক্রি হচ্ছে স্থানীয় পাইকারি বাজারে। গ্রীষ্মের সবজি হিসেবে পরিচিত ঝিঙা, ধুন্দুল, ঢ্যাঁড়শ ও চিচিঙ্গার মতো সবজির দামেও একই অবস্থা।

চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার আলোকদিয়া ইউনিয়নের সবজি চাষি ইনারুল হক বলেন, গত বছর সাড়ে ৩ বিঘা জমিতে ১২ রকম সবজির আবাদ করেছিলাম। খরচ বেশি হওয়ায় এবার ১৯ কাঠা জমিতে তিন জাতের সবজি চাষ করেছি। তবে দাম ভালো। খেত থেকেই প্রতিটি লাউ ৪০ টাকা দরে কিনে নিয়ে যাচ্ছে, গত বছর যা ৫ থেকে ৮ টাকা দরে বিক্রি করেছিলাম।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর চুয়াডাঙ্গার উপপরিচালকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত বছর জেলায় ৮ হাজার ৪৬০ হেক্টর জমিতে শীতকালীন সবজির আবাদ করা হয়েছিল। এ বছর সেখানে ৮ হাজার ৮০ হেক্টর জমিতে সবজি আবাদ হয়েছে। উৎপাদন পর্যাপ্ত না হওয়ার পাশাপাশি হাতবদলেও বাড়ছে সবজির দাম। তাতে মৌসুমেও রাজধানীতে অনেকটা অস্বাভাবিক দরে সবজি কিনতে হচ্ছে।

বগুড়া জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মতলুবর রহমান বলেন, কৃষকের কাছ থেকে কেনা সবজি হাতবদলের পর মধ্যস্বত্বভোগীরা দ্বিগুণ থেকে তিনগুণ বেশি দামে সবজি বিক্রি করছেন। সিন্ডিকেটের কারণে ভরা মৌসুমে বাজারে সবজির দাম চড়া। কৃষি উপকরণের দাম বৃদ্ধিতে উৎপাদন খরচ কিছুটা বাড়লেও আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলনে কমতি নেই বলে জানান তিনি।

বাজারে চালের মূল্য আরেক দফা বৃদ্ধির পর নতুন করে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। সরকার বাজার তদারক করলেও তার প্রভাব নেই। আটা-ময়দা, ডাল, ভোজ্যতেল ও চিনির মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য উচ্চমূল্যে স্থিতিশীল। মাছ, মাংস ও ডিমের দামও বেশ চড়া। প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২০০-২১০ টাকায়। সোনালি মুরগির কেজি পড়ছে ৩১০-৩৩০ টাকা। গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৬৫০-৭০০ টাকা কেজি।

ডিমের দাম গত সপ্তাহের তুলনায় ডজনে ৫ টাকা বেড়েছে। ফার্মের মুরগির বাদামি রঙের ডিমের ডজন বিক্রি হচ্ছে ১৩০-১৩৫ টাকায়। চাষের তেলাপিয়া ও পাঙাশ মাছ বিক্রি হচ্ছে ২২০-২৫০ টাকায়। চাষের রুই মাছের কেজি পড়ছে ৩০০-৪০০ টাকা। মাছের আকার বড় হলে দাম একটু বেশি চাওয়া হচ্ছে। শাহজাহানপুর বাজারের ক্রেতা আবদুল মালেক বলেন, কোনো কিছুর দাম কমে না। গরুর মাংসের দাম একটু কমেছিল, তা আবার বেড়েছে। তবে এবার শীতে বেশি কষ্ট হচ্ছে সবজি কিনতে। আগে এত দাম দিয়ে কখনো সবজি কিনতে হয়নি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close