গাজী শাহনেওয়াজ

  ২০ জানুয়ারি, ২০২৪

প্রশাসনে ফের দুই স্তরে পদোন্নতির প্রস্তুতি

প্রশাসন সার্ভিসে ফের পদোন্নতির কর্মযজ্ঞ শুরু হয়েছে। দুই স্তরে এবার দেওয়া হচ্ছে পদোন্নতি। এর মধ্যে যুগ্ম সচিব থেকে অতিরিক্ত সচিব এবং সিনিয়র সহকারী সচিব থেকে উপসচিব পদ রয়েছে। মূলত নিয়মিত বিসিএস ১৮ এবং ৩০তম ব্যাচকে পদোন্নতিতে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। এর আগে গত বছর এপ্রিলে অতিরিক্ত সচিব এবং ১ নভেম্বর উপসচিব পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়।

এবারের পদোন্নতিতে বিসিএস ১৮তম ব্যাচকে নিয়মিত ব্যাচ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। এ ব্যাচের বড় একটি অংশসহ বাদ পড়া (লেফট আউট) সপ্তম ব্যাচ থেকে ১৭তম ব্যাচ ও অন্য ক্যাডারসহ আগে পদোন্নতিবঞ্চিত শতাধিক কর্মকর্তার চাকরিজীবনের সব তথ্য যাচাই ও বিশ্লেষণ করেছে সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ড (এসএসবি)।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে এসব কর্মকর্তার পদোন্নতির জন্য কয়েক দফা সভা করা হলেও পদোন্নতি কারা পাবেন, তা চূড়ান্ত হয়নি। ওইসব বৈঠকে কর্মকর্তাদের কর্মজীবনের সব নথি, প্রয়োজনীয় নম্বর, চাকরিজীবনের শৃঙ্খলা, দুর্নীতির অভিযোগসহ সামগ্রিক বিষয় বিশ্লেষণ করা হয়েছে। স্বল্পসময়ের মধ্যে আরো দুয়েকটি সভা করে প্রধানমন্ত্রীর সম্মতিসাপেক্ষে পদোন্নতির প্রজ্ঞাপন জারি করা হতে পারে। বর্তমানে প্রশাসনে অতিরিক্ত সচিব পদের বিপরীতে তিনগুণ অতিরিক্ত কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। সর্বশেষ এ পদোন্নতি দেওয়া হলে অতিরিক্ত সচিবের সংখ্যা দাঁড়াবে পাঁচ শতাধিক।

এদিকে সংসদ নির্বাচনের আগে তড়িঘড়ি করে সিনিয়র সহকারী সচিব থেকে উপসচিব পদে পদোন্নতি পান ২৪০ কর্মকর্তা। এ পর্যন্ত বিসিএস ২৯তম ব্যাচ পর্যন্ত কর্মকর্তারা উপসচিব পদে পদোন্নতি পেয়েছেন। এবার বিসিএস নিয়মিত ৩০তম ব্যাচকে উপসচিব পদে পদোন্নতির জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নিয়োগ, পদোন্নতি, পদায়ন ও প্রেষণ (এপিডি) উইং থেকে তথ্য চেয়ে গত বৃহস্পতিবার জনপ্রশাসনের পাবলিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন কম্পিউটার সেন্টার (পিএসিসি) শাখাকে পত্র দিয়েছে। খবর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল সূত্রের।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, প্রশাসনে অতিরিক্ত সচিবের অনুমোদিত পদ ১৩৫টি। বর্তমানে কর্মরত ৪২০ জন। অর্থাৎ অনুমোদিত পদের তিনগুণেরও বেশি। এর সঙ্গে আরো ১০০ জন যুক্ত হলে প্রশাসনের মাথা ভারী হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, প্রশাসনে ভারসাম্য রক্ষার জন্যই বিভিন্ন স্তরে পদসংখ্যার বিন্যাস হয় পিরামিডের মতো। এ পিরামিড আকৃতি নষ্ট হলে প্রশাসনের ভারসাম্যও নষ্ট হয়।

উল্লেখ করা যেতে পারে, প্রায় সাড়ে ৩ বছর ধরে যুগ্ম সচিবের পদে চাকরি করার পর ১৮তম ব্যাচকে অতিরিক্ত সচিব করা হচ্ছে। এ ব্যাচে ১০০ কর্মকর্তা ১৯৯৯ সালে যোগদান করে। এর মধ্যে কাজ করছেন ৯২ কর্মকর্তা। এর মধ্যে ৮৯ কর্মকর্তা উপসচিব হয়েছেন। এর মধ্যে যুগ্ম সচিব হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেছেন ৮৩ কর্মকর্তা, যাদের মধ্যে থেকে ৭৬ জনকে যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়। এসব কর্মকর্তার পাশাপাশি পদোন্নতিবঞ্চিত ৭ম ব্যাচের দুজনসহ ধাপে ধাপে অন্যান্য ব্যাচের কর্মকর্তাদের এবার বিবেচনায় নেওয়া হচ্ছে। সাধারণত দুই বছর হলেই অতিরিক্ত সচিব করার দৃষ্টান্ত রয়েছে। পদোন্নতিকে ঘিরে অবশ্য প্রশাসনে দ্বিমুখী সংকট দীর্ঘদিনের। একদিকে পদোন্নতির যোগ্য কর্মকর্তার সংখ্যা বাড়ছে, কিন্তু সে তুলনায় পদসংখ্যা না বাড়ানোয় প্রশাসনিক জটিলতা তৈরি হয়।

বলা হচ্ছে, পদোন্নতি ওপরের দিকে ন্যায্য কারণেই দিতে হচ্ছে, কিন্তু মাথায় জট লেগে যাচ্ছে, তা দূর করার কোনো উদ্যোগ নেই। পদোন্নতি পাওয়ার পরও অধস্তন পদেই কাজ করতে হচ্ছে বছরের পর বছর। বিশেষ করে উপসচিব থেকে অতিরিক্ত সচিব পর্যন্ত এ ধরনের অব্যবস্থাপনা বেশি। অনেকের বসার জায়গা পর্যন্ত নেই। কাচ দিয়ে ঘেরা ছোট ছোট খুপড়ির মধ্যে বসে অতিরিক্ত সচিব, যুগ্ম সচিবদের কাজ করতে হয়। এটা নিতান্তই পরিবেশগত দিক থেকে কাজের অনুকূল নয়- বলছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতির কাজ চলছে। প্রক্রিয়া শেষে শিগগিরই প্রজ্ঞাপন জারি হবে।

এদিকে গত নভেম্বর মাসে জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব এবং সমপর্যায়ের পদে কর্মরত ২৪০ কর্মকর্তাকে উপসচিব পদে পদোন্নতি দিয়েছিল সরকার। এবার নতুন করে ৩০তম বিসিএসের প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের পদোন্নতির জন্য বিবেচনায় নেওয়া হয়। পাশাপাশি লেফট আউট ছাড়াও অন্য ক্যাডারের কর্মকর্তাদের পদোন্নতির জন্য আমলে নেওয়ার নিদের্শনা রয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এপিডি উইংয়ের। এ লক্ষ্যে জনপ্রশাসনের পিএসিসি শাখায় এপিডি উইং থেকে বৃহস্পতিবার তালিকা চেয়ে পত্র দেওয়ার কথা রয়েছে। সেখানে কয়েক ধরনের কর্মকর্তার তালিকা না পাঠাতে চিঠিতে উল্লেখ করা হচ্ছে। এর মধ্যে যাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপরাধে মামলা এবং আদালতে বিবেচনাধীন রয়েছে এবং আদালত অবমাননা হয় এমন কর্মকর্তাদের তালিকা না পাঠানো, সিনিয়র সহকারী সচিব পদে চাকরির মেয়াদ ৫ বছর পূর্ণ না হওয়া ও বিসিএস ৩০তম ব্যাচের পরের নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের তালিকা না পাঠানোর বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close