রাজবাড়ী ও মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি

  ১৮ জানুয়ারি, ২০২৪

পাটুরিয়ার পদ্মায় ৯ ট্রাক নিয়ে ফেরিডুবি

দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে পদ্মায় ছোট-বড় ৯টি ট্রাকসহ নোঙর করা রজনীগন্ধা নামের একটি ফেরি ডুবে গেছে। গতকাল বুধবার সকাল সোয়া ৮টার দিকে পাটুরিয়ার ৫ নম্বর ঘাটের অদূরে নোঙর করে রাখা ফেরিটি ডুবে যায়। ডুবে যাওয়া ফেরি থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত ১০ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। ঘটনার পর থেকে ফেরির যান্ত্রিক চালক হুমায়ুন হোসেন নিখোঁজ রয়েছেন। দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে বিআইডব্লিউটিসি ও নৌপুলিশের ভিন্ন বক্তব্য মিলছে। বিআইডব্লিউটিসি বলছে, ঘন কুয়াশার মধ্যে দেখতে না পেয়ে একটি বাল্কহেড ধাক্কা দেওয়ায় এ দুর্ঘটনা ঘটেছে। তবে নৌপুলিশ বলছে পুরোনো ফেরির তলা ফেটে ঘটেছে এ দুর্ঘটনা। ঘটনা তদন্তের দুটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।

ফেরি রজনীগন্ধার স্টাফদের বরাত দিয়ে বিআইডব্লিউটিসির আরিচা কার্যালয়ের উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএমণ্ডবাণিজ্য) শাহ মোহাম্মদ খালেদ নেওয়াজ বলেন, ঘন কুয়াশার কারণে ফেরিটি পাটুরিয়া ঘাট থেকে অদূরে নদীতে নোঙর করে ছিল। সকাল ৮টার দিকে বালুবাহী একটি বাল্কহেড ফেরিটিকে সজোরে ধাক্কা দিয়ে চলে যায়। এরপরই এক পাশ কাত হয়ে ফেরিটি নদীতে ডুবে যায়। তবে ঘন কুয়াশার কারণে বাল্কহেডটি চিহ্নিত করা সম্ভব হয়নি।

ফরিদপুর নৌপুলিশের পুলিশ সুপার সৈয়দ মুশফিকুর রহমান জানান, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন নৌপুলিশ। ফেরিতে থাকা গাড়িচালকদের সঙ্গে আলাপ করে তিনি জানতে পারেন ফেরির সঙ্গে বাল্কহেড বা কোনো নৌযানের ধাক্কা লাগেনি। তলা ফেটে পানি উঠার কারণেই ফেরিডুবির ঘটনা ঘটেছে বলে তিনি ধারণা করেন।

ফেরিতে থাকা প্রত্যক্ষদর্শী চুয়াডাঙ্গা থেকে আসা পণ্যবাহী কাভার্ডভ্যান চালক মনি বলেন, চুয়াডাঙ্গা ট-১১-০৭২৭ সিরিয়ালের গাড়িটি গতকাল বিকেলে ভুট্টাবোঝাই করে ঢাকা গাজীপুরের উদ্দেশে রওনা করেন তিনি। রাত ১টার দিকে দৌলতদিয়া ৭ নম্বর ফেরিঘাটে এসে ইউটিলিটি ফেরি রজনীগন্ধায় ওঠে তার গাড়ি। ফেরি ছেড়ে দেওয়ার ২০ থেকে ৩০ মিনিট পর মাঝ নদীতে নোঙর করে ফেরিটি। ফেরিতে পানি উঠতে থাকলে সবাই চিৎকার করতে থাকেন। তখন নোঙর খুলে ঘাটের দিকে যেতে থাকে ফেরি। ঘাট থেকে ১০০ থেকে ১৫০ মিটার দূরে থাকতেই ৯টি পণ্যবাহী ট্রাকসহ ডুবে যেতে থাকে ফেরি। প্রাণ বাঁচাতে তিনিসহ ফেরিতে থাকা সবাই পানিতে ঝাঁপিয়ে পাড়ে উঠার চেষ্টা করেন। তীব্র শীতে পদ্মা সাঁতরে পাড়ে উঠতে গিয়ে আধামরা অবস্থা হয় তাদের। এ সময় একটা ট্রলার এসে তাদের উদ্ধার করে। পরে আগুন জ্বালিয়ে তাদের উষ্ণ করেন স্থানীয় কয়েকজন। তিনি বলেন, অন্য কোনো ফেরি, বাল্কহেড বা নৌযানের সঙ্গে ধাক্কার কোনো ঘটনা ঘটেনি।

ফায়ার সার্ভিস ঢাকা অঞ্চলের সহকারী পরিচালক আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমরা ৮টার সময় প্রথম সংবাদ পাই। সংবাদ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ২৫-৩০ জনের একটা টিম সংবাদ রওনা দেয়। যার মধ্যে ১০ জনের ডুবুরি দল রয়েছে। এসেই দেখি ৯টি ট্রাক নিয়ে ফেরিটি ডুবে যাচ্ছিল। তখন আমরা স্পিডবোড নিয়ে ঘটনাস্থলে যাই। সকাল ৯টার মধ্যে ফেরিটি পুরোপুরি ডুবে যায়।’

আরিচা অঞ্চলের ফেরি সেক্টরের উপমহাব্যবস্থাপক শাহ মোহাম্মদ খালেদ নেওয়াজ জানান, ডুবে যাওয়া ফেরিটি উদ্ধারে কাজ করছে ফায়ার সার্ভিস ও নৌপুলিশের উদ্ধারকারী দল। এছাড়া ফেরিডুবির প্রায় চার ঘণ্টা পর দুপুর ১২টার দিকে উদ্ধারকারী জাহাজ হামজা ঘটনাস্থলে এসে পৌঁছায়। তবে দুপুর ১টার দিকে উদ্ধারকাজ শুরু হলেও এখন পর্যন্ত দুইটা কভার্ডভ্যান ছাড়া ফেরি উদ্ধারের কোনো অগ্রগতি দেখা যায়নি।

এ ঘটনায় জেলা প্রশাসন ও বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ-বিআইডব্লিউটিএ দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। দুটি কমিটিই পাঁচ সদস্যের। মানিকগঞ্জের ডিসি রেহেনা আক্তার ও নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. মোস্তফা কামাল গতকাল বুধবার দুপুরে কমিটি দুটি গঠন করার কথা জানান। জেলা প্রশাসন গঠিত কমিটির নেতৃত্বে আছেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সানজিদা জেসমিন। সাত কার্যদিবসের মধ্যে কমিটি দুটিকে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।

এর আগে ২০২১ সালের অক্টোবরে মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ঘাটেই ডুবে যায় আমানত শাহ নামের একটি ফেরি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close