নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১৬ জানুয়ারি, ২০২৪

মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

অনিয়ম-দুর্নীতি করলে কাউকে ছাড়ব না

‘আগামী বাজেট হবে নির্বাচনী ইশতেহারের আলোকে’

অনিয়ম-দুর্নীতি করলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না এমন নির্দেশনা দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, এক্ষেত্রে তার সরকারের অবস্থান জিরো টলারেন্স। এছাড়া দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, নতুন প্রকল্প গ্রহণের আগে জনসম্পৃক্ততা আছে কিনা যাচাই করা, গৃহীত প্রকল্পের যেসব কাজ শেষ পর্যায়ে দ্রুত তা সম্পন্ন করা, সরকারি ক্রয়ে স্বচ্ছতা এবং সরকারি শূন্যপদ পূরণসহ একগুচ্ছ নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নতুন মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকে গতকাল সোমবার তিনি এসব নির্দেশনা দেন।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন সচিবালয়ে ব্রিফিংয়ে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, মন্ত্রিপরিষদের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানানো হয়েছে এবং প্রধানমন্ত্রী তার তরফ থেকে কিছু নির্দেশনা দিয়েছেন। এগুলোর মধ্যে প্রধানমন্ত্রী বেশি জোর দিয়েছেন, মুদ্রাস্ফীতি এবং দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা নিতে মন্ত্রিদের নির্দেশনা দিয়েছেন। আগামী রমজান মাসে যাতে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং সেগুলোর সরবরাহ পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকে সে ব্যাপারে কাজ করার নির্দেশনা দিয়েছেন।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, কৃষি উৎপাদন যেন কোনো অবস্থায়ই ব্যাহত না হয় এবং একই সঙ্গে কৃষিপণ্য সংরক্ষণাগার আরো তৈরি করার নির্দেশনা দিয়েছেন। স্মার্ট বাংলাদেশের জন্য চারটি স্তম্ভের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, স্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট সরকার, স্মার্ট অর্থনীতি এবং স্মার্ট জনগণ- এই চারটি স্তম্ভের ওপর ভিত্তি করে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হবে। যে প্রকল্প প্রায় শেষ পর্যায়ে আছে, সেগুলো দ্রুত শেষ করার নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। যে প্রকল্প থেকে জনগণ উপকার পাবে সে প্রকল্প নিতে বলেছেন। নতুন প্রকল্প নেওয়ার আগে সেটি কীভাবে জনগণের কল্যাণে লাগবে তা খুব ভালোভাবে পরীক্ষা করতে বলেছেন তিনি।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে ওনার (প্রধানমন্ত্রী) জিরো টলারেন্স এবং সব মন্ত্রণালয়কে একই নির্দেশনা অনুসরণের নির্দেশ দিয়েছেন। সরকারি ক্রয়ে স্বচ্ছতা বজায় রাখতে বলেছেন। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি যেগুলো আছে সেগুলো যেন প্রকৃত উপকারভোগীরা পায়, সেটি মনিটর করার জন্য তিনি নির্দেশনা দিয়েছেন। শূন্যপদ পূরণ নিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, সরকারি শূন্যপদ পূরণে নিয়োগের ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন। নারী উন্নয়ন ও নারীর ক্ষমতায়নে সাফল্যের যে ধারা তৈরি হয়েছে, সেটি যাতে কোনো অবস্থাতেই ব্যাহত না হয় সেদিকে নজর দিতে বলেছেন তিনি।

রপ্তানি বহুমুখীকরণের জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন শেখ হাসিনা। নতুন বাজার অনুসন্ধান এবং নতুন বাজারে কীভাবে প্রবেশ করা যায় সে নির্দেশনা দিয়েছেন।

শিক্ষার ক্ষেত্রে তিনি বলেছেন, আইসিটি শিক্ষাকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া যাতে সেটি বেশি কর্মমুখী হয়। ফ্রিল্যান্সিং আরো বাড়তে পারে সে ব্যাপারে নির্দেশনা দিয়েছেন। যুব সমাজকে খেলাধুলা, সংস্কৃতি চর্চার জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি নিতে বলেছেন, যাতে তারা মাদক, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ থেকে বিরত থাকতে পারে।

দ্রব্যমূল্য বাড়তির কারণে মানুষের কষ্ট লাঘবের জন্য তিনি এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন। দ্রব্যমূলের ঊর্ধ্বগতি থাকলেও প্রশাসনের কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না- এ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, আজকে প্রথম মন্ত্রিসভার বৈঠক হলো। সেখানে প্রধানমন্ত্রীর তরফ থেকে সুস্পষ্ট নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আপনারা দেখেন কালকে থেকে কী হয়। কালকে থেকে নিশ্চয়ই কার্যক্রম দেখবেন আমি আশা করছি। দুর্ভিক্ষ নিয়ে শঙ্কার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী কিছু বলেছেন কিনা জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, আমাদের কৃষিপণ্যের উৎপাদন বৃদ্ধি ও সংরক্ষণাগার তৈরির নির্দেশনা দিয়েছেন।

বাজার স্থিতিশীল রাখা হবে : এদিকে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রেখে নিত্যপণ্যের বাজার স্থিতিশীল রাখতে সরকার কার্যকর পদক্ষেপ নেবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। একইসঙ্গে রোজাকে সামনে রেখে যা যা দরকার সবই আগাম ক্রয় করার ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছেন। গতকাল আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের এক যৌথসভায় এসব কথা বলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানুষের সবচেয়ে কষ্টের জিনিস হচ্ছে দ্রব্যমূল্য। তবে মানুষের ক্রয়ক্ষমতাও বেড়েছে। আমরা টিসিবির পারিবারিক কার্ড করে দিচ্ছি, যাতে কার্ডের মাধ্যমে স্বল্প মূল্যে তারা পণ্য কিনতে পারে।

ইশতেহার অনুযায়ী আগামী বাজেট প্রণয়ন করার কথা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, দেশের ভেতরে ফ্রিল্যান্সাররা যাতে আরো উদ্যোগী হয় সেই ব্যবস্থা নিচ্ছি। স্টার্টআপ প্রোগ্রাম শুরু করেছি। এতে নতুন কর্মসংস্থান হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা জনগণের জন্য কাজ করেছি, সেজন্য মানুষ আমাদের ভোট দিয়েছে। এখন দেশের কল্যাণে কাজ করতে হবে।

বিএনপি নির্বাচনে আসেনি উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আসলে আমাদের বিরুদ্ধে যে দল, তারা তো গণতান্ত্রিক পরিবেশে নির্বাচন করে অভ্যস্ত না। জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে যেসব জরিপ হয়েছিল, সেখানে বিএনপি তাদের জোট নিয়ে নির্বাচনে অংশ নিলে সরকার গঠন করবে না, সেই সংখ্যক সিট তারা পাবে না। একমাত্র আওয়ামী লীগই সরকার গঠনের জন্য পর্য?াপ্ত সিট পাবে। সেই কথা শোনার পরে তারা নির্বাচনে অংশ নেয়নি।

‘তাছাড়া ওদের সৃষ্টি হচ্ছে অবৈধভাবে অস্ত্র হাতে নিয়ে ক্ষমতা দখল করা, জনগণের ভোট চুরি করা- এসব কালচার তো বিএনপির আমলেই সৃষ্টি। ওদের কাজ হচ্ছে দুর্নীতি করা আর মানুষ খুন করা, এটাই তো বিএনপির চরিত্র। তাদের নেতা দুর্নীতির দায়ে সাজাপ্রাপ্ত। এই অবস্থায় আমরা সরকার গঠন করেছি। জনগণের আস্থা বিশ্বাস আমরা পেয়েছি। এই বিশ্বাসের মর্য?াদায় এগিয়ে যেতে হবে।’

এ সময় আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য, উপদেষ্টা পরিষদ, ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ আওয়ামী লীগ এবং সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন, ঢাকা জেলার শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close