নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১২ জানুয়ারি, ২০২৪

শেখ হাসিনা বিশ্বের বিস্ময়

পঞ্চমবার প্রধানমন্ত্রী

টানা চুতর্থবার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণের মধ্য দিয়ে ইতিহাস গড়লেন হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠ কন্যা শেখ হাসিনা। উপমহাদেশের অন্যতম প্রাচীন রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের হাল ধরে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ভোটের মাধ্যমে এ নিয়ে পঞ্চমবার দলকে জয়ী করে অনন্য নজিরও সৃষ্টি করলেন তিনি। তার অসীম সাহস, দৃঢ় মনোবল ও অভীষ্ট লক্ষ্যে অবিচল থেকে দেশকে সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় নিয়ে যাওয়া বিশ্বের বিস্ময়। তিনি ব্যক্তির ঊর্ধ্বে গণমানুষের আশাজাগানিয়া বাতিঘর; ‘আঁধার বিদার উদার অভ্যুদয়’। মানবিকতা, অসাম্প্রদায়িকতা, উদার, প্রগতিশীল, গণতান্ত্রিক ও বিজ্ঞানমনষ্ক জীবনদৃষ্টি তাকে করে তুলেছে এক আধুনিক, অগ্রসর রাষ্ট্রনায়ক- ‘মানবতার মা’।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ভোরে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে জাতির প্রাণ নিভিয়ে দিতে গুলি-বারুদ আর ধোঁয়ার সঙ্গে বাঙালি জাতিসত্তার যে হাহাকার ধ্বনিত হয়েছিল, সে খবর তখনকার পশ্চিম জার্মানিতে পৌঁছে যেতে বেশি সময় নেয়নি। ছোট বোন শেখ রেহানার সঙ্গে অবিশ্বাস্য সে খবর শুনে শোকস্তব্ধ শেখ হাসিনা তখনো আশায় ছিলেন, ঘাতকরা হয়তো তার পরিবারের অন্য সদস্যদের রেহাই দিয়েছে। অন্তত শিশু ভাইটি বেঁচে আছে। কিন্তু না, কয়েকদিনের মধ্যে স্পষ্ট হয়, কেউই বেঁচে নেই। শোকের সেই জগদ্দল পাথর সরিয়ে শেখ হাসিনা দীপ্ত প্রত্যয়ে ধীরে ধীরে সোজা হয়ে দাঁড়ান।

প্রবল বাধা ডিঙিয়ে ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে ফিরে আসেন। হাল ধরেন আওয়ামী লীগের। হয়ে ওঠেন গণতন্ত্রের মাসনকন্যা। সেই সময় সামরিক ক্যু, রাজনৈতিক হত্যা, গুম, খুন যেন এক মাৎস্যন্যায় অবস্থা। খুনি খন্দকার মোশতাক থেকে শুরু করে বিচারপতি সায়েমের খাটে লাথি দিয়ে ক্ষমতায় আসা জিয়া বা অবৈধভাবে রাষ্ট্রক্ষমতা গ্রহণ করা এরশাদ, প্রত্যেকে ধ্বংস করেছে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্নকে। সেই স্বপ্নকে লালন করে মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে বাংলাদেশে ফিরে এসেছিলেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। এরপর মুজিবকন্যার একের পর এক ইতিহাস সৃষ্টি। সর্বশেষ গত রবিবার দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনেও বিপুল বিজয়ের মাধ্যমে সৃষ্টি করলেন নতুন ইতিহাস। জনগণ আরো ৫ বছরের জন্য দেশকে উন্নয়নের পথে চালিত করার ম্যান্ডেট তুলে দিয়েছে তার হাতে। টানা চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিলেন তিনি।

গত ১৫ বছরে দেশকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিশ্বের বিস্ময় হয়ে উঠেছেন তিনি। তার নেতৃত্বে এরই মধ্যে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে ওঠার মানদ- পূরণ করেছে বাংলাদেশ। অর্থনীতির আকারের দিক থেকে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে ৪৩, আর ক্রয়ক্ষমতা বিবেচনায় বিশ্বের ৩৪তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ। যুক্তরাজ্যভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা প্রাইসওয়াটার কুপার হাউস (পিডব্লিউসি) বলছে, ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে বিশ্বের ২৮তম বড় অর্থনীতির দেশ, ২০৫০ সালে আরো ৫ ধাপ এগিয়ে আসবে ২৩ নম্বরে। বাংলাদেশকে ‘ইমার্জিং টাইগার’ উল্লেখ করে বিশ্বখ্যাত সংবাদমাধ্যম বিজনেস ইনসাইডার গত এপ্রিলে বলেছে, এশিয়ায় টাইগার বলতে এতদিন সবাই হংকং, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া ও তাইওয়ানকে বুঝত।

এর বাইরেও এশিয়ায় একটি ইমার্জিং টাইগার রয়েছে, যেটি হলো বাংলাদেশ। আন্তর্জাতিক মানদ-ে এবং উন্নয়নের সব ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এগিয়ে চলেছে। দেশের দারিদ্র্যের শৃঙ্খল ভেঙে তিনি এগিয়ে যাচ্ছেন সচ্ছলতার দিকে। এ মুহূর্তে তিনি যা কিছু স্পর্শ করছেন, তা-ই তার হাতের ছোঁয়ায় সোনা হয়ে যাচ্ছে। সাবমেরিন ক্যাবল (২০২০ সালে শুরু হয়েছে, শেষ হবে ২০২৪ সালে) থেকে শুরু করে ফ্লাইওভার, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট স্থাপন, যমুনা নদীর বঙ্গবন্ধু সেতু থেকে শুরু করে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ পদ্মা সেতু, কর্ণফুলী টানেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রমাণ করে আওয়ামী লীগের এ ১৫ বছরে উন্নয়নের চিত্র কতটা অর্থপূর্ণ ছিল।

২০০৮ সালে যখন আওয়ামী লীগ দেশের শাসনভার গ্রহণ করে, তখন কত দুরবস্থাই না ছিল। কিন্তু জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের গড়া এ দল ও তার উত্তরসূরি যে কি না, তারই সুযোগ্য কন্যা টানা ১৫ বছরের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদৃষ্টিসম্পন্ন নেতৃত্বের বলে বাংলাদেশ একটি অপার সম্ভাবনার দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তিনি বাংলাদেশকে এ সময়ের মধ্যেই বিশ্বের বুকে উন্নয়নের রোলমডেল হিসেবে দাঁড় করিয়েছেন। এ সময়ে বাংলাদেশের অনেক উন্নয়নই হয়েছে। তবে যেসব উন্নয়ন দেশকে বদলে দিয়েছে বা দিচ্ছে, সেই মেগা প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন আওয়ামী লীগের সফলতার স্বাক্ষর বহন করছে। এ প্রকল্পগুলো বিশ্বের বুকে বাংলাদেশকে সম্মানের জায়গায় নিয়ে গেছে।

অদম্য সাহসিকতার পদ্মা সেতু : আওয়ামী লীগ সরকারের টানা ১৫ বছরে সবচেয়ে বড় সাফল্য বলা যেতে পারে পদ্মা সেতু। ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার বাস্তবায়ন হয় ২০০১ সালে এ সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে। এরপর মাঝের কয়েক বছর দেশের ক্ষমতায় না থাকার কারণে এ সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা ঝুলে যায়। ২০০৮ সালে দেশের ক্ষমতায় আসার পর আবার এ পদ্মা সেতুর কাজ শুরু হয়। ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি ৩৮ লাখ ৭৬ হাজার ব্যয়ে নির্মিত হয় বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ স্বপ্নের এ পদ্মা সেতু। এর মধ্য দিয়ে দক্ষিণাঞ্চলের ১৯ জেলাকে রাজধানীর সঙ্গে যুক্ত করে এ সেতু। নির্মাণ ও আধুনিকতায় এ সেতু বিশ্বে অন্যতম মাইলফলক হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।

মেট্রোরেলের যাত্রা : বাংলাদেশে এক দিন মানুষ আকাশপথে রেলে চলাচল করবে, দীর্ঘদিনের চলার পথে যানজটমুক্ত জীবন উপভোগ করবে- এটা ছিল দেশের মানুষের স্বপ্ন। সেই স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। উত্তরা থেকে আগারগাঁও হয়ে মতিঝিলে এখন ছুটছে মেট্রোরেল।

বঙ্গবন্ধু টানেল : চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে নির্মিত বঙ্গবন্ধুর টানেল। এ টানেল চালু হওয়ার পর কক্সবাজারের সঙ্গে সড়কে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরত্ব কমে গেছে। ৯.৪২ কিলোমিটার দীর্ঘ এ টানেল নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা। এটি শুধু বাংলাদেশের অভ্যন্তরেই নয়, প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমার ও ভারতের সঙ্গে যোগাযোগেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে : দ্রুত এগিয়ে চলেছে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণ। এর দৈর্ঘ্য হবে ৪৬.৭৩ কিলোমিটার। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে শুরু হয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম হাইওয়ের কুতুবখালীতে শেষ হবে। এ প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ১৬ হাজার ৯০১ কোটি টাকা। প্রকল্পটি ২০২২ সালের নভেম্বরে উদ্বোধন হয়েছে। এটির নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা উদ্বোধন হওয়ার ৪ বছরের মধ্যে। আওয়ামী লীগের ১৫ বছরে অনেক কিছুই হয়েছে, যা আগে বাঙালি দেখেনি। উন্নত বাংলাদেশের পথে দ্রুতগতিতে হাঁটছে বাংলাদেশ। সেই পথের যাত্রায় উল্লেখ করা উন্নয়নের ভিত্তি ছাড়াও সাবমেরিন ক্যাবল, পায়রা সমুদ্রবন্দর, মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি বিশেষ উল্লেখযোগ্য। এ ১৪ বছরে বাংলাদেশের দারিদ্রের হার ৪০ শতাংশ থেকে ২০ শতাংশে নেমে এসেছে। মাথাপিছু আয় ৫৪৩ ডলার থেকে ২ হাজার ৮২৪ ডলারে উন্নীত হয়েছে। শিক্ষায় তো আমূল পরিবর্তন হয়েছে। নতুন শিক্ষানীতি চালু হয়েছে।

এছাড়া গণহত্যার শিকার মিয়ানমারের ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়ে শেখ হাসিনা বিশ্বে বাংলাদেশকে পরিচিত করেছেন মানবতাবাদী দেশ হিসেবে। রোহিঙ্গা ইস্যুতে তিনি বিশ্বকে জাগিয়ে তুলেছেন। ২০১৬ সালে শান্তিতে নোবেলজয়ী কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট হোসে ম্যানুয়েল সান্তোস শেখ হাসিনাকে ‘বিশ্বমানবতার বিবেক’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন। আরেক নোবেলজয়ী কৈলাশ সত্যার্থী শেখ হাসিনাকে ‘বিশ্বমানবতার আলোকবর্তিকা’ হিসেবে তুলনা করেছেন। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান অভিহিত করেন, ‘বিরল মানবতাবাদী নেতা’। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ বলেন, ‘বাবার মতোই বিশাল হৃদয় তার।’ ইন্ডিয়া টুডে তাদের দীর্ঘ এক প্রতিবেদনে লেখে, ‘শেখ হাসিনার হ্রদয় বঙ্গোপসাগরের চেয়েও বিশাল, যেখানে রোহিঙ্গাদের আশ্রয়ে কার্পণ্য নেই।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close