বিশেষ প্রতিবেদক

  ১২ জানুয়ারি, ২০২৪

দীপ্ত শপথে মন্ত্রিসভার যাত্রা

বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে এবারের নতুন মন্ত্রিসভায়। স্থান পাননি বিদায়ি মন্ত্রিসভার ২৮ জন। প্রথমবারের মতো মন্ত্রিসভার সারথি হয়েছেন ১৪ জন। প্রধানমন্ত্রীসহ নতুন মন্ত্রিসভার সদস্য ৩৭ জন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় শপথ নেন নতুন মন্ত্রিসভার সদস্যরা। এর আগে বুধবার নতুন মন্ত্রিসভার জন্য ডাক পান ২৫ জন মন্ত্রী ও ১১ জন প্রতিমন্ত্রী। তিন দশকের মধ্যে এ মন্ত্রিসভাই সবচেয়ে ছোট পরিসরের।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বঙ্গভবনে শপথ নিয়েছেন নতুন মন্ত্রিসভার সদস্যরা। তাদের শপথবাক্য পাঠ করান রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সন্ধ্যা ৭টায় শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান শুরু হয়। প্রথমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে শপথবাক্য পাঠ করান রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন। এরপর মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীদের শপথবাক্য পাঠ করানো হয়। বঙ্গভবনে ওই শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন। এ শপথ নেওয়ার মাধ্যমে টানা চতুর্থ ও পঞ্চমবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হলেন তিনি। এবার সরকার গঠনের মাধ্যমে স্বাধীনতার পর পঞ্চমবারের মতো ক্ষমতায় এলো আওয়ামী লীগ। শপথ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সরকারের পদস্থ কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী, কূটনীতিক, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিসহ আমন্ত্রিত অতিথিরা।

শপথ অনুষ্ঠানে অংশ নিতে সন্ধ্যা ৬টা ৫০ মিনিটে প্রধানমন্ত্রীর গাড়িবহর বঙ্গভবনে প্রবেশ করে। বিকেল সাড়ে ৫টা থেকে বঙ্গভবনে প্রবেশ করতে শুরু করেন ডাক পাওয়া মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে পাঠানো গাড়িতে তারা শপথ নিতে সেখানে যান। নিরাপত্তার স্বার্থে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের বহনকারী গাড়িগুলোয় ব্যাপক তল্লাশি করা হয়। অনুষ্ঠান পরিচালনা করতে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেন বিকেল সাড়ে ৫টায় বঙ্গভবনে প্রবেশ করেন। এর আগে বুধবার সকালে শপথ নেন নির্বাচিত নতুন সংসদ সদস্যরা। শপথ শেষে অনুষ্ঠিত সংসদীয় দলের সভায় শেখ হাসিনাকে সংসদ নেতা নির্বাচিত করা হয়। এরপর একই দিন সন্ধ্যার পর বঙ্গভবনে যান আওয়ামী লীগ সভাপতি। সেখানে রাষ্ট্রপতি তাকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগের সিদ্ধান্ত দেন। একইসঙ্গে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নতুন মন্ত্রিসভা গঠনের সম্মতি দেন।

বৃহস্পতিবার মন্ত্রিসভার সদস্যদের নিয়োগ দেন রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গঠিত নতুন মন্ত্রিসভার ৩৬ জনের তালিকাসংবলিত প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়, বাংলাদেশের সংবিধানের ৫৬ অনুচ্ছেদের ২ দফা অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি নিম্নলিখিত ব্যক্তিদের বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী পদে নিয়োগদান করেছেন। গতকাল মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের জারি করা প্রজ্ঞাপনে নতুন মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীদের দপ্তর বণ্টন করা হয়।

কে কোন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেলেন : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (গোপালগঞ্জ-৩) : মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ; প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়; সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ; বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়; সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়; শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়; আ ক ম মোজাম্মেল হক (গাজীপুর-১) : মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়; ওবায়দুল কাদের (নোয়াখালী-৫) : সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়; নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন (নরসিংদী-৪) : শিল্প মন্ত্রণালয়; আসাদুজ্জামান খান কামাল (ঢাকা-১২) : স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়; ডা. দীপু মনি (চাঁদপুর-৩) : সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়; মো. তাজুল ইসলাম (কুমিল্লা-৯) : স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়; মুহাম্মদ ফারুক খান (গোপালগঞ্জ-১) : বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়; আবুল হাসান মাহমুদ আলী (দিনাজপুর-৪) : অর্থ মন্ত্রণালয়; আনিসুল হক (ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪) : আইন মন্ত্রণালয়; আবদুস সালাম (ময়মনসিংহ-৯) : পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়; নারায়ণ চন্দ্র চন্দ (খুলনা-৫) : ভূমি মন্ত্রণালয়; মোহাম্মদ হাছান মাহমুদ (চট্টগ্রাম-৭) : পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়; মো. আবদুস শহীদ (মৌলভীবাজার-৪) : কৃষি মন্ত্রণালয়; সাধন চন্দ্র মজুমদার (নওগাঁ-১) : খাদ্য মন্ত্রণালয়; র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী (ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩) : গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়; মো. আবদুর রহমান (ফরিদপুর-১) : মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়; মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল (চট্টগ্রাম-৯) : শিক্ষা মন্ত্রণালয়; ফরহাদ হোসেন (মেহেরপুর-১) : জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়; মো. ফরিদুল হক খান (জামালপুর-২) : ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়; মো. জিল্লুল হাকিম (রাজবাড়ী-২) : রেলপথ মন্ত্রণালয়; সাবের হোসেন চৌধুরী (ঢাকা-৯) : পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়; জাহাঙ্গীর কবির নানক (ঢাকা-১৩) : বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়; নাজমুল হাসান পাপন (কিশোরগঞ্জ-৬) : যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়; স্থপতি ইয়াফেস ওসমান (টেকনোক্র্যাট) : বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়; ডা. সামন্ত লাল সেন (টেকনোক্র্যাট) : স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়।

প্রতিমন্ত্রীদের কে কোন দপ্তর পেলেন : বেগম সিমিন হোসেন রিমি (গাজীপুর-৪) : মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়; নসরুল হামিদ (ঢাকা-৩) : বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়; জুনাইদ আহমেদ পলক (নাটোর-৩) : ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়; মোহাম্মদ আলী আরাফাত (ঢাকা-১৭) : তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়; মো. মহিববুর রহমান (পটুয়াখালী-৪) : দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়; খালিদ মাহমুদ চৌধুরী (দিনাজপুর-২) : নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়; জাহিদ ফারুক (বরিশাল-৫) : পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়; কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা (খাগড়াছড়ি) : পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়; শফিকুর রহমান চৌধুরী (সিলেট-২) : প্রবাসী কল্যাণ ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়; আহসানুল ইসলাম টিটু (টাঙ্গাইল-৬) : বাণিজ্য মন্ত্রণালয়; বেগম রুমানা আলী : প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।

নতুন মন্ত্রিসভায় স্থান পাননি বিদায়ি মন্ত্রিসভার ২৮ মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রী। মন্ত্রিসভায় স্থান পাননি সদ্য সাবেক কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুন্শি, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন, অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, পাট ও বস্ত্রমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী, প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদ, সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ, বন, পরিবেশ ও জলবায়ু বিষয়ক মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন, পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈ সিং, রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন, ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার।

জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ গতকাল সন্ধ্যায় বঙ্গভবনে শপথ পাঠ অনুষ্ঠানে গিয়ে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, বাংলাদেশের ইকোনমিক সাইকেল বিদ্যুৎ-জ্বালানির ওপর নির্ভর করে। এটাকে স্থিতিশীল রাখাই বড় চ্যালেঞ্জ হবে। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব একটি বড় দায়িত্ব। প্রধানমন্ত্রী এ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী। তার সঙ্গে এত বছর কাজ করতে পারাটা অনেক ভাগ্যের ব্যাপার।

ছোট পরিসরের মন্ত্রিসভা : ১৯৯১ সালের পর এবারই সবচেয়ে ছোট মন্ত্রিসভা গঠন করা হলো। ১৯৯১ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ৬টি রাজনৈতিক সরকার দেশ পরিচালনা করেছে। সর্বশেষ সরকারের মন্ত্রিসভার সদস্য ছিলেন ৪৭ জন। ২০০৯-১৪ মেয়াদে সরকারের মন্ত্রিসভার আকার ছিল সবচেয়ে বড় ৬২ জনের। ১৯৯১-৯৬ মেয়াদে সরকারের মন্ত্রিসভার মন্ত্রী ছিলেন ২৫, প্রতিমন্ত্রী ২২ এবং উপমন্ত্রী ৩ জন। ১৯৯৬-০১ মেয়াদে সরকারের মন্ত্রিপরিষদে ছিলেন মন্ত্রী ২২, প্রতিমন্ত্রী ২৪ এবং উপমন্ত্রী ৩ জন। ২০০১-০৬ মেয়াদে সরকারের মন্ত্রিপরিষদে ছিলেন মন্ত্রী ২৮, প্রতিমন্ত্রী ২৮ এবং উপমন্ত্রী ৪ জন। ২০০৯-১৪ মেয়াদের সরকারে মন্ত্রিসভায় ছিলেন মন্ত্রী ৩৮ ও প্রতিমন্ত্রী ২৪ জন। ২০১৪-১৯ মেয়াদে সরকারের মন্ত্রিপরিষদে ছিলেন মন্ত্রী ৩৬, প্রতিমন্ত্রী ২১ এবং উপমন্ত্রী ২ জন। ২০১৯-২৪ মেয়াদে সরকারে মন্ত্রীর সংখ্যা ছিল ২৪, প্রতিমন্ত্রী ১৮ এবং উপমন্ত্রী ৩ জন।

গত ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টিসহ ২৮টি রাজনৈতিক দল অংশ নেয়। নির্বাচনে ৩০০ আসনের মধ্যে ২৯৯টি আসনে ভোটগ্রহণ হয়। এর মধ্যে গোলযোগের কারণে একটি আসনের ফল স্থগিত রাখা হয়েছে। বাকি ২৯৮টি আসনের ফল প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন। এর মধ্যে ২২২ আসনে জয় পেয়েছে আওয়ামী লীগ। জাতীয় পার্টি পেয়েছে ১১টি আসন। বাকি ৬৫ আসনের মধ্যে ৬২টিতে জয় পেয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। জাসদ, ওয়ার্কার্স পার্টি ও কল্যাণ পার্টি পেয়েছে একটি করে আসন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close