প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ২১ মার্চ, ২০২৪

রাজনৈতিক উত্তরসূরি নেই অপ্রতিদ্বন্দ্বী এ নেতার

পুতিনের পর রাশিয়ার হাল ধরবেন কে?

পঞ্চমবারের মতো রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন পুতিন। ৮৭.৮ শতাংশ ভোট পেয়েছেন তিনি। স্থানীয় সময় রবিবার বুথফেরত জরিপে এ তথ্য জানা গেছে। এর মধ্য দিয়ে দেশটির ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘ মেয়াদে ক্ষমতায় থাকা প্রেসিডেন্ট হলেন তিনি। পুতিন অমর নন। তিনিও এক দিন মারা যাবেন। প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতায় থাকাকালেই যদি ৭১ বছর বয়সি এ নেতার মৃত্যু হয়, সে ক্ষেত্রে কে ধরবেন রাশিয়ার হাল? এ প্রশ্নের উত্তর দেওয়া বেশ কঠিন। কারণ পুতিনের কোনো রাজনৈতিক উত্তরসূরি নেই, আবার তার কোনো জীবিত প্রতিদ্বন্দ্বীও নেই।

২০০০ সালে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই বিজয় নিশ্চিত করার জন্য নিখুঁতভাবে নির্বাচনে জালিয়াতির পরিকল্পনা করেছেন পুতিন। ভোট কেনা, ব্যালটের ভুল গণনা, আগে থেকে সিল দেওয়া ব্যালট বিতরণ, ব্যালট বাক্সের কারচুপি, ভোটারদের ভোটদানে বাধা এবং ভয় দেখানোর মতো সব পদ্ধতিই অবলম্বন করেছেন পুতিন অনুগতরা, যা তাকে সব নির্বাচনে সুনিশ্চিত বিজয় এনে দিয়েছে। এছাড়া তিনি তার রাজনৈতিক বিরোধীদের মধ্যে কারো কারাদণ্ড দিয়েছেন, কারো নির্বাসিত করেছেন। আর সুষ্ঠু নির্বাচনে তাকে চ্যালেঞ্জ জানানোর সক্ষমতা যে কারো আছে, তাও তিনি অস্বীকার করেছেন।

এ ছাড়া পুতিন বরিস নেমতসভের মতো বিরোধী ব্যক্তিত্বদের হত্যা করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। সম্প্রতি কারাগারে আলেক্সি নাভালনির মৃত্যুতেও তার হাত রয়েছে বলে অভিযোগ করছেন বিরোধীরা। তবে পরিহাসের বিষয় হলো, পুতিন গত ২৪ বছর ধরে নিজের যেতে পারবেন না বা শান্তির সঙ্গে তার অবসর উপভোগ করতে পারবেন না। একজন সরকারি কর্মচারী হিসেবে তিনি তার মেয়াদকালে অভূতপূর্ব সম্পদ এবং ক্ষমতা সঞ্চয় করেছেন যেগুলোর প্রতি তিনি অনেক বেশি নির্ভরশীল।

নিখুঁত সুরক্ষা বলয় : পুতিন যদি অবসর গ্রহণের পরও তার প্রাসাদ ও ইয়টগুলো (জাহাজ) তার দখলে রাখতে পারেন, তাহলেও যে তিনি নিরাপদে থাকবেন তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। পুতিন ক্ষমতা ছেড়ে দিলে তার পরে তার উত্তরসূরি আসতে পারে। পুতিনের ব্যক্তিগত কর্তৃত্ব, ক্যারিশমা ও প্রভাব সর্বদা তার উত্তরাধিকারীর জন্য হুমকি হয়ে থাকবে।

বেশির ভাগ স্বৈরশাসকই তাদের উত্তরসূরির নাম প্রকাশ করে না। এর অন্যতম কারণ হলো, তারা অবসরে যাওয়ার আগে বা মারা যাওয়ার আগেই ক্ষমতার তিক্ত লড়াই শুরু হয়ে যেতে পারে। সেদিক থেকে যদি ?পুতিন কোনো উত্তরসূরির নাম ঘোষণা করেন, তাহলে সে ব্যক্তি অন্য প্রতিযোগীদের আক্রোশের শিকার হয়ে উঠবে।

এমনকি পুতিনের নিজের বন্ধুদের মধ্যেও তিক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা রয়েছে। যদিও পুতিন এসব বিষয়কে নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করেন। কিন্তু ২০২৩ সালে ওয়াগনার প্রধান ইয়েভজেনি প্রিগোজিন যিনি একসময় পুতিনের খুব কাছের লোক ছিলেন, তিনিই তার (পুতিন) বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন।

এ থেকে বোঝা যায় যে, ক্ষমতার প্রতিযোগিতা কতটা মারাত্মক হতে পারে। তবে প্রিগোজিন ২০২৩ সালের আগস্টে একটি বিমান দুর্ঘটনায় নিহত হন। যার আসল কারণ এখনো অজানা। হয়তো কখনো জানাও যাবে না। তবে সন্দেহ করা হয়, এর পেছনে পুতিনেরই হাত রয়েছে।

পুতিনকে সমর্থনকারী অভ্যন্তরীণ ধনী ব্যক্তিদের প্রত্যেকের পেছনে দুর্নীতিবাজদের একটি বড় নেটওয়ার্ক রয়েছে। পুতিন বাদে অন্য কোনো প্রতিদ্বন্দী যদি ক্ষমতায় আসেন, তাহলে তারা তাদের ক্ষমতা, সম্পদ এবং এমনকি স্বাধীনতাও হারাবে। তাই পুতিনের মৃত্যুর পরপরই একটি রক্তক্ষয়ী ক্ষমতার লড়াই শুরু হতে পারে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close