প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

নতুন আলোচনার জন্ম দিল পাকিস্তানে নির্বাচনী ফলাফল

* অতীত থেকে শিক্ষা নেয়নি পাকিস্তান * আস্থা কমছে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর * বিশ্বজুড়ে সমালোচনার ঝড়

পাকিস্তানে নির্বাচনের ফল পেছানোর ঘটনা এটাই প্রথম নয়। কিন্তু সাম্প্রতিক ইতিহাসে প্রথমবারের মতো নির্বাচনের দিন ও পরের রাতে সারা দেশে মোবাইল ফোন নেটওয়ার্ক বন্ধ রাখা হয় এবং ৪৮ ঘণ্টা পরও পূর্ণাঙ্গ ফলাফল প্রকাশ করা সম্ভব হয়নি। গত দুদিনের ঘটনাবলি দৃশ্যত বিদ্যমান বিভাজন এবং রাজনৈতিক ফাটলকে আরো গভীর করেছে। পরবর্তী সরকারপ্রধান কে হবেন তা নিয়ে জনমনে বিভ্রান্তি রয়েছে। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর আস্থা কমে যাচ্ছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেক ব্যবহারকারীকে একদিকে নির্বাচন কমিশন ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সমালোচনা করতে দেখা গেছে, অন্যদিকে সেনাবাহিনী ও বিচার বিভাগকেও এই বিশৃঙ্খলার জন্য দায়ী করা হচ্ছে। তবে এই বিভাজন, বিভ্রান্তি ও জনরোষের ফল কী হবে, এমন প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার আগে গত ২৪ ঘণ্টার দিকে একবার চোখ বুলিয়ে নেওয়া যাক।

নির্বাচনে যা ঘটেছে : বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টায় ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে গেলে ফলাফল ঘোষণার অপেক্ষা শুরু হয়। সন্ধ্যা ৬টার পর কিছু ভোটকেন্দ্রে গণনা সম্পন্ন হলে সেখান থেকে অসমাপ্ত ও অনানুষ্ঠানিক ফলাফল আসতে শুরু করে। এই প্রাথমিক ফলাফল সবাইকে অবাক করে। কারণ প্রত্যাশার বিপরীতে পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ সমর্থিত একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী এগিয়ে ছিল। তবে কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ফলাফল আসা বন্ধ হয়ে যায়। এ নিয়ে সামাজিক ও মূলধারার গণমাধ্যমে ছিল বিতর্ক, যাতে ছিল নানা প্রশ্ন ও সংশয়।

মানুষের চোখ ছিল পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশনের দিকে, কিন্তু তাদেরও অসহায় দেখাচ্ছিল। রাত ১২টাতেও মোবাইল নেটওয়ার্ক চালু হয়নি এবং ভোট গণনার ফলাফলও বের হচ্ছিল না। পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের প্রার্থী ও সমর্থকরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাদের বিজয়ী ঘোষণা করেন এবং ফলাফল বিলম্বকে ‘কারচুপির চেষ্টা’ বলে অভিহিত করেন।

রাতে একপর্যায়ে আধা ঘণ্টার মধ্যে ফল আসতে শুরু করার কথা বলা হলেও রাত ৩টা পর্যন্তও নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে বিস্তারিত কিছু আসেনি। সকালে আবার একই ঘোষণা দেওয়া হয় এবং বলা হয় ১০টার মধ্যে ফলাফল দেওয়া হবে, কিন্তু তাও করা হয়নি। অন্যদিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য জাতিকে অভিনন্দন জানাতে দেখা গেছে এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মোবাইল নেটওয়ার্ক বন্ধের সিদ্ধান্তের পক্ষে সাফাই গাইতে থাকে।

এর আগে সরকারের পক্ষ থেকেও ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল, ভোটের দিন মোবাইল নেটওয়ার্ক বন্ধ থাকবে না। তবে ভোটগ্রহণ শুরুর মাত্র ১০ মিনিট আগে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সন্ত্রাসবাদের হুমকির আশঙ্কায় দেশজুড়ে মোবাইল নেটওয়ার্ক বন্ধ করে দেয়।

মোবাইল নেটওয়ার্ক বন্ধ থাকায় ইন্টারনেট সুবিধা না থাকায় ফল সংগ্রহের জন্য তৈরি করা নতুন ব্যবস্থায় কাজ করা যাচ্ছে না বলে জানিয়ে দেয় নির্বাচন কমিশন। কিন্তু এই বিবৃতির আগে নির্বাচন কমিশনেই ঘোষণা করেছিল যে ইন্টারনেট ছাড়াও নতুন ব্যবস্থা সক্রিয় থাকবে।

অন্যদিকে পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন) ক্যাম্পাসে ছিল সম্পূর্ণ নীরবতা। তবে মধ্যরাতে প্রকাশিত অনানুষ্ঠানিক ও অসমাপ্ত ফলাফলেও দেখা যায়, সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ নিজেও পিটিআইয়ের আটক ইয়াসমিন রশিদের চেয়ে বিশাল ব্যবধানে পিছিয়ে ছিলেন। শুক্রবার রাত থেকেই পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) সমর্থিত প্রার্থী ও দলীয় সমর্থকরা নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় কারচুপির অভিযোগ করে আসছেন।

ইসলামাবাদ থেকে পিটিআই সমর্থিত প্রার্থী শোয়েব শাহিন বলেন, বিচার বিভাগ, যারা যেকোনো ঘটনার বিষয়ে স্বপ্রণোদিত হয়ে নজর দিতে পারে, তারা মোবাইল নেটওয়ার্ক বন্ধের বিষয়টি খেয়াল করেনি, গত রাতে (বৃহস্পতিবার) ঘটে যাওয়া (কথিত কারচুপি) বিষয়টিও তারা খেয়াল করেনি এবং কেন ফলাফল এত দেরিতে আসছে সেটাও খেয়াল করেনি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close