প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ০৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

পরাজয়ের মুখে মিয়ানমার সেনাবাহিনী

মিয়ানমারের জান্তা সরকার সেনা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসার তিন বছর পর ধারণা করা হচ্ছে, এ মুহূর্তে সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি পার করছে তারা। বিশ্লেষকরা বলছেন, ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে সামরিক সরকার ক্ষমতা দখলের পর থেকেই উত্তেজনা চলতে থাকলেও এতটা কোণঠাসা পরিস্থিতিতে সেনাবাহিনীকে এর আগে আর পড়তে হয়নি।

গত অক্টোবরে জাতিগত বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর আক্রমণ শুরু হওয়ার পর থেকে সামরিক টহলচৌকি, অস্ত্রাগার ও বেশ কিছু শহরের নিয়ন্ত্রণ চলে গেছে বিদ্রোহীদের হাতে। সবশেষ ঘুমধুম সীমান্তে বিদ্রোহীদের আক্রমণের মুখে মিয়ানমারের ১০৩ জন সীমান্তরক্ষী বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিয়েছে, যাদের অনেকেই আহত।

শুধু বাংলাদেশ নয়, প্রতিবেশী আরো দুটি দেশ চীন ও ভারতেও মিয়ানমারের সেনারা এর আগে আশ্রয় নিয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। এ ধরনের জয় বিদ্রোহী অন্য গোষ্ঠীগুলোকেও সামরিক বাহিনীর ওপর আক্রমণে উৎসাহিত করেছে।

বিদ্রোহীদের শক্তি কতটা : ভয়েস অব আমেরিকার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, মিয়ানমারের বিরোধী সশস্ত্র দলে জাতিগত ২০টি গোষ্ঠীর ১ লাখ ৩৫ হাজার সদস্য, ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্ট-এনইউজির আওতায় পিপলস ডিফেন্স ফোর্সের ৬৫ হাজার সদস্য এবং সিভিল ডিসঅবিডিয়েন্ট মুভমেন্টের অধীনে প্রায় দুই লাখের মতো কর্মী রয়েছে।

এনইউজির আন্তর্জাতিক সহযোগিতাবিষয়ক উপমন্ত্রী ডেভিড গাম অং এর আগে ভয়েস অব আমেরিকাকে বলেন, স্বায়ত্ত শাসনের জন্য লড়ছে এমন কয়েকটি জাতিগত গোষ্ঠীর সঙ্গে ২০২২ সালে জোট গঠন করেছে এনইউজি। এদের এর প্রায় দুই লাখ সেনার একটি বাহিনী রয়েছে, যা আরো বাড়তে থাকবে। এটি জেনারেল মিন অং লাইংয়ের বাহিনীকে মোকাবিলা করার জন্য যথেষ্ট।

অন্যদিকে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীতে প্রায় চার লাখ সেনা রয়েছে বলে মনে করা হয়। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের ইনস্টিটিউট ফর পিসের তথ্য অনুযায়ী, মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীতে প্রায় দেড় লাখের মতো সেনা রয়েছে। এর মধ্যে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত বা ‘কমব্যাট রেডি’ ৭০ হাজার সেনাও অন্তর্ভুক্ত।

মিয়ানমারের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পক্ষে কাজ করা বিশেষজ্ঞদের একটি দল যারা ‘স্পেশাল অ্যাডভাইসরি কাউন্সিল ফর মিয়ানমার’ নামে পরিচিত, তাদের তথ্য অনুযায়ী, দেশটির জান্তা সরকারের ‘পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ’ রয়েছে মাত্র ১৭% ভূখণ্ডের ওপর, ২৩% শতাংশ ভূখণ্ড নিয়ে দ্বন্দ্ব রয়েছে এবং বিদ্রোহী গোষ্ঠীদের দখলে রয়েছে ৫২ শতাংশের মতো ভূখণ্ড। তবে এ তথ্য নিয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

বিবিসির বার্মিজ সার্ভিসের সহকারী সম্পাদক আয় থু সান বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন, ২০২৩ সালের অক্টোবরে তিনটি বিদ্রোহী গোষ্ঠীর জোট থ্রি ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্সের আলোচিত ‘অপারেশন ১০২৭’ শুরুর পর থেকে এখনো পর্যন্ত তারা দেশটির ৩০টি শহরের দখল নিয়েছে।

আর সেনা অভ্যুত্থানের পর থেকে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী গত তিন বছরে দেশের অনেক স্থানের নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে। বর্তমানে সামরিক বাহিনী এমন সশস্ত্র প্রতিরোধের মুখে পড়েছে, যা এর আগে মিয়ানমারের ইতিহাসে কখনো ঘটেনি।

মিয়ানমারের চলমান উত্তেজনা, অস্থিতিশীলতা প্রতিবেশীসহ আঞ্চলিক হুমকি সৃষ্টি করলেও প্রতিবেশী দেশগুলো এখনো কোনো ধরনের সহযোগিতা নিয়ে এগিয়ে আসেনি।

প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে থাইল্যান্ড মিয়ানমার থেকে পালিয়ে যাওয়া শরণার্থীদের আশ্রয় দিয়েছে। কিন্তু নতুন থাই সরকার মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর সঙ্গে তার ঐতিহ্যগত সম্পর্ক এড়িয়ে চলার চেষ্টা করছে, যার কারণে এই এলাকায় প্রবেশাধিকার সীমিত হয়ে আসছে মিয়ানমারের নাগরিকদের জন্য।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close