প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ১৩ জানুয়ারি, ২০২৪

তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন আজ

চীনের সঙ্গে ভবিষ্যৎ সম্পর্কের রায় দেবে জনগণ

তাইওয়ানে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে আজ শনিবার। এ নির্বাচনে দ্বীপটির জনগণ নতুন নেতা নির্বাচনের মাধ্যমে ঠিক করবেন তাদের ভবিষ্যৎ সম্পর্ক চীনের সঙ্গে কেমন হবে। তাদের এ সিদ্ধান্ত এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের বাইরেও প্রভাব ফেলবে বলে মনে করা হচ্ছে। খবর বিবিসির।

তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন তিনজন। তাদের মধ্যে বেশি আলোচিত হচ্ছেন তাইওয়ানের ভাইস প্রেসিডেন্ট লাই চিং তে। এরপরই অন্য যে দুই মূল প্রার্থী রয়েছেন, তারা হলেন কুয়োমিনতাং (কেএমটি) পার্টির হো ইয়ু ইহ এবং তাইওয়ান পিপলস পার্টির (টিপিপি) কো-ওয়েনজে। হো ইয়ু ছিলেন নিউ তাইপে সিটির জনপ্রিয় মেয়র এবং সাবেক পুলিশপ্রধান। দেশটির বর্তমান অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে তিনি তাইওয়ানের স্বাধীনতার বিপক্ষে।

আর টিপিপির কো ওয়েন ছিলেন তাইপের সাবেক মেয়র। ২০১৯ সালে তিনি দলটি প্রতিষ্ঠা করেন। যেসব ভোটার বড় দুটি রাজনৈতিক দলের ভূমিকায় বিরক্ত এবং নতুন কিছু চান, তাদের কাছে টানার চেষ্টা করছেন কো-ওয়েন। তবে চীন ইস্যুতে ডিপিপি এবং কেএমটির তুলনায় তার দৃষ্টিভঙ্গি ভিন্ন। কারণ, তিনি (চীনকে) প্রতিরোধ আবার চীনের সঙ্গে যোগাযোগও চান।

তাইওয়ানের ৬৪ বছর বয়সি অজ্ঞিজ্ঞ রাজনৈতিক নেতা লাই চিং তে উইলিয়াম লাই হিসেবেও পরিচিত। প্রেসিডেন্ট পদে তিনি ক্ষমতাসীন স্বাধীনতাপন্থী ডেমোক্রেটিক প্রগ্রেসিভ পার্টির (ডিপিপি) প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ২০২০ সালে তাইওয়ানের ভাইস প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগে তিনি একজন আইনপ্রণেতা ছিলেন। এ ছাড়া ২০১৭ ও ২০১৯ সালে বিদায়ি প্রেসিডেন্ট সাই ইং ওয়েনের প্রধানমন্ত্রী হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। এর আগে দুই মেয়াদে দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর তাইনানের জনপ্রিয় মেয়র ছিলেন তিনি। প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে তিনি পূর্বসূরি সাইয়ের পথই কঠোরভাবে অনুসরণ করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। সাইয়ের নীতি হলো চীন থেকে বিচ্ছিন্ন ভূখণ্ড হিসেবে তাইওয়ানকে স্বাধীন একটি দেশ। তাই সাইয়ের নীতি কী হবে, তা আর বলার দরকার নেই। অথচ চীন ২ কোটি ৪০ লাখ জনগোষ্ঠীর তাইওয়ানকে নিজেদের ভূখণ্ড হিসেবে বিবেচনা করে। প্রয়োজনে তাইওয়ানকে জোরপূর্বক একীভূত করার হুমকিও দিয়ে রেখেছে বেইজিং।

লাই রাজনীতিতে আসার অনুপ্রেরণা পেয়েছেন চীনের কাছ থেকেই। তিনি তাইওয়ানের উত্তরাঞ্চলের একটি দরিদ্র গ্রাম থেকে উঠে এসেছেন। সেই গ্রামে ছিল কয়লাখনি। তার বাবা ছিলেন কয়লাশ্রমিক। তিনি যখন ছোট, তখনই তার বাবা মারা যান। এরপর তার মা একাই ছয় সন্তানকে বড় করেন। লাইয়ের মুখপাত্রের ভাষ্য, শৈশবে দেখা লাইয়ের দুঃখ-কষ্টই তাকে সুবিধাবঞ্চিত ও সংখ্যালঘুদের প্রতি সমব্যথী হতে শিখিয়েছেন। তিনি তাইওয়ানের খ্যাতনামা বিশ্ববিদ্যালয়ে মেডিসিন বিষয়ে পড়াশোনা করেছেন। পরে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জনস্বাস্থ্যের ওপর স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন।

চার দশকের সামরিক শাসন থেকে বেরিয়ে আসার এক দশক পর ১৯৯৬ সালে তাইওয়ানে প্রত্যক্ষ ভোটে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তখন থেকেই ডিপিপির প্রার্থীর পক্ষে কাজ করে রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন লাই। কিন্তু চীন যখন তাইওয়ানে নিজেদের পছন্দের প্রার্থীকে জেতাতে দ্বীপটির উপকূলীয় সাগরে ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে ভয়ভীতি দেখাতে শুরু করে, তখন তার মনে হয়েছে, তার নিজেরই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা উচিত। ওয়াল স্ট্রিট জার্নালে লাই লিখেছেন, ‘তাইওয়ানের গণতন্ত্রে অংশ নেওয়া আমার দায়িত্বের মধ্যে পড়ে এবং যারা এই গণতন্ত্রকে নষ্ট করতে চায়, তাদের হাত থেকে রক্ষা করতে হবে।’

এবারের নির্বাচনে লাইয়ের সঙ্গে থাকা মূল প্রতিদ্বন্দ্বী অন্য দুজন চীনঘেঁষা। জনমত জরিপে লাই কিছুটা এগিয়ে থাকলেও তিনি বিজয়ী হবেন, এটা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close