প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ০৫ জানুয়ারি, ২০২৪

গণহত্যায় বিচারের মুখোমুখি হতে যাচ্ছে ইসরায়েল

* শুনানির দিন ঘোষণা জাতিসংঘ আদালতের * মামলার বিপক্ষে দাঁড়াল যুক্তরাষ্ট্র * মার্কিন কর্মকর্তার পদত্যাগ

ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় অভিযানরত ইসরায়েলি বাহিনীর বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ তুলে করা মামলার শুনানি শুরুর দিন ঘোষণা করেছে জাতিসংঘের অন্যতম অঙ্গ সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিস (আইসিজে)। গত ৩০ ডিসেম্বর দক্ষিণ আফ্রিকা এ মামলাটি করেছিল। আইসিজের ঘোষণা অনুযায়ী, আগামী ১১ এবং ১২ জানুয়ারি এ মামলার শুনানি হবে।

মামলার আবেদন করার সময় আবেদনপত্রের সঙ্গে ৮৪ পৃষ্ঠার একটি নথি সংযুক্ত করে দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, গাজায় ইসরায়েলি বাহিনী আন্তর্জাতিক অপরাধ, যেমন- মানবতাবিরোধী অপরাধ এবং যুদ্ধাপরাধ, এর পাশাপাশি গণহত্যা বা এ সম্পর্কিত অপরাধের সীমারেখা লঙ্ঘন করেছে বলে তথ্য পাওয়া গেছে।

আবেদনে আরো বলা হয়েছিল, ইসরায়েলের এ আচরণ গণহত্যামূলক। কারণ তারা ফিলিস্তিনি জাতির একটি উল্লেখযোগ্য অংশকে ধ্বংস করার উদ্দেশ্য নিয়েই হামলা চালাচ্ছে। গত ৩০ তারিখ আবেদনপত্র জমা দেওয়ার সময় আইসিজেকে দ্রুত এ বিষয়ে শুনানির অনুরোধ করেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। সেই অনুরোধে সাড়া দিয়েই ১১ জানুয়ারি শুনানি শুরুর দিন ধার্য করা হয়েছে বলে এক বিবৃতিতে জানিয়েছে আইসিজে। পাশাপাশি শুনানিতে উপস্থিত থাকতে ইসরায়েলকে প্রতিনিধি পাঠানোর জন্য সমনও পাঠিয়েছে জাতিসংঘের আদালত।

আইসিজের সমনের প্রতিক্রিয়ায় জাতিসংঘে ইসরায়েলি মিশনের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এই মামলার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ইসরায়েলের মানহানির চেষ্টা করা হচ্ছে এবং ইসরায়েল অবশ্যই সেই চেষ্টা ব্যর্থ করে দেবে। গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলীয় ইরেজ সীমান্তে হামাস যোদ্ধারা অতর্কিত হামলা চালানোর পর ওইদিন থেকেই গাজায় অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি বিমানবাহিনী। ২৮ অক্টোবর থেকে অভিযানে যোগ দেয় স্থলবাহিনীও।

ইসরায়েলি বাহিনীর টানা দেড় মাসের অভিযানে কার্যত ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে গাজা উপত্যকা, নিহত হয়েছে ২২ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি। এই নিহতদের ৭০ শতাংশই নারী, শিশু, অপ্রাপ্তবয়স্ক কিশোর-কিশোরী এবং বয়স্ক লোকজন।

আহত হয়েছে আরো ৫৪ হাজার ৯৬৮ এবং এখনো নিখোঁজ রয়েছে ৭ হাজার জন। এছাড়া হাজার হাজার পরিবার বাড়িঘর-সহায় সম্বল হারিয়ে আশ্রয় নিয়েছে বিভিন্ন স্কুল, সরকারি প্রতিষ্ঠান ও হাসপাতাল প্রাঙ্গণে।

অন্যদিকে, হামাসের গত ৭ অক্টোবরের হামলায় ইসরায়েলে নিহত হয়েছিলেন ১ হাজার ২০০ জন ইসরায়েলি ও অন্যান্য দেশের নাগরিক। পাশাপাশি, ইসরায়েলের ভূখণ্ড থেকে ২৪২ জন ইসরায়েলি ও অন্যান্য দেশের নাগরিককে সেদিন জিম্মি হিসেবে ধরে নিয়ে যান হামাস যোদ্ধারা। তাদের মধ্যে এখনো মুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে ১২৯ জন জিম্মি। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, হামাসকে সম্পূর্ণ ধ্বংস এবং গাজাকে পরিপূর্ণভাবে নিরস্ত্রীকরণ করার আগ পর্যন্ত এই যুদ্ধ চলবে।

গাজায় গণহত্যা হয়নি - দাবি যুক্তরাষ্ট্রের : এদিকে, ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনীর সাম্প্রতিক অভিযানে কোনো গণহত্যা হয়নি বলে মনে করে যুক্তরাষ্ট্র। জাতিসংঘের অন্যতম অঙ্গ সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট ফর জাস্টিসে (আইসিজে) ইসরায়েলকে অভিযুক্ত করে গাজায় গণহত্যা মামলার জন্য দক্ষিণ আফ্রিকার সমালোচনাও করেছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

আইসিজের এ আদেশের প্রতিক্রিয়ায় বুধবার মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক ব্রিফিংয়ে মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার বলেন, গণহত্যা খুবই ঘৃণ্য ধরনের নৃশংসতা। বিশ্বে যত রকম নৃশংসতাণ্ডনিষ্ঠুরতা দেখা যায়, সেসবের মধ্যে গণহত্যা সবচেয়ে ন্যক্কারজনক অপরাধগুলোর একটি।

তাই এ ব্যাপারটিকে হালকাভাবে নেওয়ার কিছু নেই। তবে যদি এ ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়া হয়, তাহলে আমরা বলব, গণহত্যার স্বীকৃত সংজ্ঞায় যা উল্লেখ করেছে- গাজায় তা ঘটেনি এবং যারা মামলা করেছে, তারা কোনো ফলপ্রসূ পদক্ষেপ নেয়নি।

আলাদা এক ব্রিফিংয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন কিরবি বলেন, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ ভিত্তিহীন। দক্ষিণ আফ্রিকা যে মামলা করেছে, তা থেকে কোনো ফলাফল আসবে না।

আগামী ১১ ও ১২ জানুয়ারি সেই মামলার ওপর শুনানির দিন ধার্য করেছে ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিস। শুনানির সময় উপস্থিত থাকতে ইসরায়েলকে তলবও করেছেন আইসিজে।

বাইডেন প্রশাসনের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার পদত্যাগ : এদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের গাজানীতির প্রতিবাদে পদত্যাগ করেছেন তার প্রশাসনের একজন জ্যেষ্ঠ শিক্ষা কর্মকর্তা।

এমনকি গাজা ইস্যুতে আগামী নির্বাচনে বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ভোট হারাতে পারেন বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন বাইডেনের নির্বাচনী প্রচারণায় যুক্ত ১৭ জন কর্মী। গতকাল বৃহস্পতিবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের গাজায় সংঘাত পরিচালনার কথা উল্লেখ করে মার্কিন শিক্ষা বিভাগের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বুধবার পদত্যাগ করেছেন। গাজায় চলমান যুদ্ধে নিহতের সংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে মার্কিন প্রশাসনে ভিন্নমতের ব্যক্তিদের সরে যাওয়ার ঘটনাও ঘটছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close