উখিয়া (কক্সবাজার) প্রতিনিধি
মিয়ানমারে সহিংসতা ফের আসছে রোহিঙ্গা
মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর গত পাঁচ দিন ধরে ফের শুরু হয়েছে সেদেশের সামরিক বাহিনীর নিপীড়ন-নির্যাতন। এ কারণে আবারও সেখান থেকে পালিয়ে দলে দলে বাংলাদেশে আসছে শত শত রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ। কক্সবাজারের উখিয়ার বালুখালী ও কুতুপালং রোহিঙ্গা বস্তিতে আশ্রয় নিয়েছে অন্তত পাঁচ শতাধিক রোহিঙ্গা।
আবু তৈয়ব নামে এক রোহিঙ্গা জানান, মিয়ানমার সেনাবাহিনী তাদের বাড়ি ধ্বংস করে ফেলেছে। তরুণদের আটক করছে। এই পরিস্থিতিতে তিনি তার পরিবারের সাত সদস্যকে নিয়ে পালিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, ‘তারা আমার ছোট ভাইকে আটক করেছে এবং তার দুই বছর বয়সী শিশুকে বুট দিয়ে আঘাত করেছে। আমি নাফ নদী দিয়ে পালিয়ে প্রাণ নিয়ে চলে এসেছি।
বাংলাদেশ সরকারের মতে, কক্সবাজারে শরণার্থী শিবিরে প্রায় চার লাখ শরণার্থী আশ্রয় নিয়েছে। গত বছরের অক্টোবরে ৭০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আসে। মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ধর্ষণ, নিপীড়ন ও হত্যার শিকার হয়ে তারা বাংলাদেশে এসেছিল বলে তারা জানায়। বিজিবি জানায়, তারা নাফ নদী সীমান্তে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে।
এদিকে, কক্সবাজারের উখিয়ার ক্রাইম জোন খ্যাত বালুখালী ও কুতুপালং শরণার্থী শিবিরে সন্ত্রাসী ও অস্ত্রধারী ক্যাডারদের আনাগোনা বৃদ্ধি পেয়েছে। ক্যাম্পের চার পার্শ্বে সীমানা প্রাচীর না থাকায় বিভিন্ন এলাকায় অপরাধ সংঘটিত করে সন্ত্রাসীরা নির্বিঘেœ ক্যাম্পের রোহিঙ্গাদের সঙ্গে মিশে যেতে পারে। অনেক শরণার্থী বিভিন্ন এলাকার নাম-ঠিকানা ব্যবহার করে বাংলাদেশি পাসপোর্ট জোগার করে বিভিন্ন দেশে পাড়ি জমাচ্ছে। গত দুই মাস আগেও বালুখালী নতুন রোহিঙ্গা বস্তির এক কিলোমিটারের মধ্যে বালুখালী পানবাজার এলাকা থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় কক্সবাজার গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) তিনটি অস্ত্র, দুই রাউন্ড কার্তুজ এবং পাঁচটি ধারালো কিরিচ উদ্ধার করে। এ ঘটনায় পুলিশ কাউকে আটক করতে পারেনি।
নিয়ম রয়েছে, কোনো রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে বের হলে ক্যাম্প ইনচার্জের লিখিত অনুমতি নিয়ে বের হতে হয়। কিন্তু এ ক্যাম্পে অবস্থানরত রোহিঙ্গারা কেউ এ নিয়ম মানছে না। অভিযোগ উঠেছে, ক্যাম্পের পাশে ১০০-১৫০ দোকান ও ৫-৬টি ভিসিআর (মিনি সিনেমা) হল থাকায় বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে ক্যাম্পে অবস্থানরত নিরাপত্তা বাহিনীর লোকজনকে ম্যানেজ করে এবং কৌশলে রোহিঙ্গারা ক্যাম্প থেকে বের হয়। সম্প্রতি বিভিন্ন গণমাধ্যমে রোহিঙ্গা যুবকদের জঙ্গি প্রশিক্ষণের কথা উঠে এসেছে। যার সত্যতা স্বীকার করেছে অনেক রোহিঙ্গা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন রোহিঙ্গা মাঝি জানান, কুতুপালং এবং বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মাঝামাঝি একটি এলাকায় কিছু অপরিচিত লোকজন রোহিঙ্গা যুবকদের নিয়ে রাতে বৈঠক করে। এ বিষয়ে কুতুপালং শরণার্থী শিবিরের ক্যাম্প ইনচার্জ রেজাউল করিম বলেন, এ ধরনের খবর আমি অসমর্থিত সূত্রে শুনেছি। তবে বাস্তবে কেউ এর প্রমাণ দেখাতে পারেনি বিধায় এ ব্যাপারে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব নয়।
"