গাজী শাহনেওয়াজ

  ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

আয়ের উৎস ধরে রাখতে মরিয়া বিআইডব্লিউটিসি

ঐতিহাসিক পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় রাজধানীর সঙ্গে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অন্যতম নৌরুটে ফেরি চলাচল সীমিত হয়ে পড়ায় আয়ের উৎস কমে গিয়ে বড় ধাক্কা খেয়েছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি)। নানা সমস্যা ও চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে বিআইডব্লিউটিসি এখন তার বড় ও লাভজনক আয়ের উৎস ফেরি সার্ভিস ধরে রাখতে মরিয়া। বিকল্প নানা পথ ও পথনকশা প্রণয়নের পর কিছুটা উপায় খুঁজে পাওয়ায় আপাতত স্বস্তিতে কর্তৃপক্ষ।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, নতুন পথনকশায় বাড়ছে ফেরির রুট বা জোন। এই রুটগুলো চলতি বছরে চালু করার বিষয়ে কাজ করছে বিআইডব্লিউটিসি। এর আগে বিআইডব্লিউটিএ ও টিসি দুটি সংস্থা যৌথ প্রকল্প গ্রহণের মাধ্যমে ফেরির রুটগুলোয় জেটি, ঘাট, পল্টুন, অ্যাপ্রোচ রোড ও অবকাঠামো নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। মন্ত্রণালয় ও টিসি সূত্রে জানা যায়, নতুন আরো ৭টি এলাকায় ফেরি চালু করার জন্য গত রবিবার নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত একসভায় মন্ত্রণালয়ের একজন যুগ্ম সচিবকে আহ্বায়ক করে কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটির সদস্য রাখা হয়েছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের একজন প্রতিনিধি, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের একজন প্রতিনিধি, বিআইডব্লিউটিসি ও বিআইডব্লিউটিএর একজন করে প্রতিনিধি। গঠিত কমিটি নতুন এই পথনকশা নিয়ে সমীক্ষা করে প্রতিবেদন দেওয়ার পর নতুন পথটি চালু হবে।

এ ব্যাপারে বিআইডব্লিউটিসি পরিচালক (বাণিজ্য) এস এম আশিকুজ্জামান প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, এই সংস্থার যত সার্ভিস রয়েছে একমাত্র লাভজনক হচ্ছে ফেরি সার্ভিস। এই খাত থেকে এখন বার্ষিক আয় হয় ৩১০ থেকে ৩১৫ কোটি টাকা। যার মধ্যে ব্যয় হয় ২৫০ টাকা। আয় আরো বেশি হতো কিন্তু পদ্মা সেতু চালুর পর বড় এই রুটটি মৃতপ্রায়। ফলে লভ্যাংশের বড় একটি অংশ থেকে সংস্থা বঞ্চিত। তাই দেশের আরো গুরুত্বপূর্ণ কিছু রুট বের করে সেগুলোয় ফেরি সার্ভিস চালু করা হবে। সেজন্য আমরা একটা সমীক্ষা চালিয়ে ভবিষৎ পরিকল্পনার অংশ হিসেবে নতুন ৭টি রুট চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। রবিবার মন্ত্রণালয়ে এই রুটগুলো নিয়ে আলোচনার পর একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি সব সম্ভাব্য লাভণ্ডক্ষতি হিসাব কষে একটি প্রতিবেদন দেবে। সেই আলোকে আমরা নতুন রুটে চলতি বছরের মধ্যে ফেরি চালু করার চেষ্টা করব।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন করপোরেশনের আয়ের উৎসের মধ্যে বাণিজ্যিক ও সহায়ক নৌযান রয়েছে। ইউনিটভিত্তিক নৌযানের বাণিজ্যিক নৌযান ১৭৪টি ও সহায়ক নৌযান ৫৬টিসহ মোট ১৮০টি। ফেরি সার্ভিসের মধ্যে ৫৯টি ও ২৭টি পল্টুনসহ ৮৬টি ও টাগ রয়েছে ১১টি। প্যাসেঞ্জার সার্ভিস ইউনিটের মধ্যে প্যাটেল স্টিমার ৪টি, ইনল্যান্ড মটর ভেসেল ৩টি, কোস্টাল ভেসেল ৬টি, সি-ট্রাক ১১টি ও ওয়াটার বাস ১৩টি। এর বাইরে কার্গো সার্ভিস ১৭টি ও জাহাজ মেরামত ইউনিট ১৫টি।

প্রাপ্ত তথ্যমতে, টিসির যতগুলোর আয়ের উৎস রয়েছে, তার মধ্যে ফেরি থেকে বার্ষিক আয় আসে ৩১০-৩১৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে কর্মকর্তাদের বেতন ও সেবা সার্ভিসসহ আয়ের দুই-তৃতীয়াংশ অর্থাৎ আড়াই কোটির টাকা ব্যয় হয়। প্রতি বছর এই খাতে উদ্ধৃত থাকে ৬৫ কোটি টাকা। বর্তমানে ৭টি রুটে চলাচল করছে ৫৩টির মধ্যে ৪০টি ফেরি। ১২টি ফেরি বর্তমানে মেরামত ও ডকিং সার্ভে সম্পন্নের জন্য ডকইয়ার্ডে রয়েছে। এ ছাড়া ৩৫টি জলযান নির্মাণ প্রকল্পের অধীনে ৬টি নতুন ইমপ্রুভম মিডিয়াম ফেরি শিগগিরই বহরে যুক্ত হবে। নতুন যোগ হলে ফেরির সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াবে ৫৯টি।

সূত্র মতে, পদ্মা সেতু চালু হওয়ার আগে ফেরি থেকে আয় হতো প্রায় সাড়ে ৩০০ কোটি টাকার ওপরে। পদ্মা সেতু চালু হলেও টিসি আশা করেছিল, ফেরির আয় কমবে না। মাওয়া-জাজিরা পয়েন্টে নানা যানবাহন ফেরি ধরে নদীর এ প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যাওয়া আসা করবে। এজন্য মোটরসাইকেল সেতুতে চলাচল নিষিদ্ধ করা ও মালবাহী ট্রাকগুলো ফেরি দিয়ে চলাচল করানোর চেষ্টা চালানো হয়। অল্পসময়ে পদ্মা সেতু ধরে পার হওয়ার সুযোগ হাতছাড়া না করার কারণে নৌমন্ত্রণালয়ের সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়। এর ফলে আয়ের উৎসে বড় ধরনের ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

আর্থিক ক্ষতি পুষিয়ে নিতে নতুন রুটের সন্ধানে সমীক্ষায় নামে টিসি। সম্ভাব্য ৭টি নতুন রুট খুঁজে লাভণ্ডক্ষতির হিসাব কষে মাঠে নামে সংস্থাটি। মন্ত্রণালয়ের কাছে নতুন রুটগুলোর সমীক্ষা নিয়ে রবিবার সভা হয়। সভার তথ্যের নথি ঘেঁটে সাতটি নতুন রুট পাওয়া যায়। এগুলো হলো- বামনা-বদনিখালা (বরগুনা), বগীবাজার-চালিতাতলী (বরগুনা জেলা), চট্টগ্রাম-সন্দ্বীপ (সীতাকুণ্ড ফেরিঘাট (বাকখালী)-গাছুয়া-সন্দ্বীপ), রাঙ্গাবালী উপজেলার সঙ্গে পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার মধ্যে পানপট্টি-কোড়ালিয়া রুট, ভোলা লালমোহস উপজেলার সঙ্গে পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার মধ্যে নাজিরপুর-কালাইয়া রুট, নোয়াখালী (চেয়ারম্যানঘাট)-হাতিয়া এবং তজুমদ্দিন (ভোলা)-মনপুরা ভোলা)।

বিআইডব্লিউটিসি নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে ফের ঘুরে দাঁড়ানোর প্রাণপণ চেষ্টা করছে। আশা করছে, নতুন রুট চালু হলে টিসির আয় বাড়বে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close