নিজস্ব প্রতিবেদক

  ৩১ মার্চ, ২০২৪

প্রকল্পের জমি নিয়ে বিরোধ

আদালতের আদেশ অমান্য, টাঙ্গাইলে ৪ জন আটক

আদালতের নির্দেশ মানছেন না টাঙ্গাইল জেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ মোজাম্মেল হক। জমি কব্জায় নিতে জোরপূর্বক বেসরকারি সংগঠন ইসলামিক রিসার্চ ইনস্টিটিউট ও সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট প্রকল্পে (এসডিএস) ঢুকে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। আদালতের আদেশ উপেক্ষা করে ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে স্থানীয় কর্মীদের দিয়ে প্রকল্পে বেআইনিভাবে কাজ করার অপরাধে গতকাল শনিবার চারজনকে আটক করেছে সদর থানা পুলিশ। গতকাল বিকেল ৫টা পর্যন্ত আটকদের বিরুদ্ধে মামলা হয়নি।

থানা কর্তৃপক্ষ জানান, মামলা রুজুর প্রক্রিয়া চলমান আছে, সন্ধ্যার পর উপরের আদেশ পেলে আটকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে চারজনের মধ্যে দুজনের বয়স ১২ বছরের কম হওয়ায় তাদের মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়ার ইঙ্গিত দেন থানার একজন দায়িত্বপ্রাপ্ত উপপরিদর্শক।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১৫ সালে প্রকল্পের চেয়ারম্যান ইসমাইল হোসেন সিরাজীর অনুপস্থিতিতে ভুয়া মালিক সাজিয়ে প্রকল্পের একটি অংশ নিজ নামে লিখে নেন জাপা নেতা মোজাম্মেল হক। এ নিয়ে মামলা-মোকদ্দমা চলমান। কিন্তু আজ পর্যন্ত জাপা নেতা তার কেনা দলিলের বৈধতা প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি। এসব ভুয়া মালিকের ভিডিও ও অডিও এ প্রতিবেদকের কাছে সংরক্ষিত আছে। তারা জানান, মোজাম্মেল হক একজন সন্ত্রাসী ও ভূমিদস্যু। তিনি ও তার বাহিনী অস্ত্রের মুখে জোরপূর্বক আমাদের কাছ থেকে জমি লিখে নেন। আমরা বলেছিলাম, এ জমির প্রকৃত মালিক সিরাজী। কিন্তু এসবের তোয়াক্কা করেননি।

তবে পার্টির পদ ও অবৈধ ক্ষমতা ব্যবহার করে জোরপূর্বক এসডিএস প্রকল্পের জমি দখলের অপতৎপরতা অব্যাহত রেখেছে। সম্প্রতি স্থাপনা গড়ে অবৈধ দলিলের বৈধতা প্রতিষ্ঠায় সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে এলাকায় পাকা দেয়াল ও ঘর নির্মাণ শুরু করেন। একই সঙ্গে ভেকু দিয়ে প্রকল্পের মাটি কেটে তা বড় বড় ট্রাকে করে মোটা অঙ্কের বিনিময়ে বিভিন্ন ইটভাটাসহ প্রভাবশালীদের কাছে বিক্রি করে আসছে। দীর্ঘদিন ধরে ভুয়া দলিলে জমি দখল এবং ওটাকে পুঁজি করে অবৈধভাবে প্রকল্পের মাটি কেটে বিক্রির অভিযোগে গত ২৪ মার্চ টাঙ্গাইলে ইসলামিক রিসার্চ ইনস্টিটিউট ও এসডিএস প্রকল্প থেকে একটি ভেকু ও ৫টি মাটি কাটার ট্রাক স্থানীয় সদর থানা পুলিশ সদর উপজেলার পোড়াবাড়ী এলাকায় অভিযান চালিয়ে জব্দ করে। কিন্তু বাদীর অজান্তে সেগুলো থানা কর্তৃপক্ষ ছেড়ে দেয়। পরে জমি রক্ষার লক্ষ্যে আদালতে নির্দেশনা চেয়ে মামলা করেন জমির প্রকৃত মালিক ও প্রকল্পের চেয়ারম্যান ইসমাইল হোসেন সিরাজী।

টাঙ্গাইল সদরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট পিটিশন নং-১৭৪/২৪। প্রকৃত কাগজপত্র যাচাই করে ওই প্রকল্পে সব ধরনের কাজ বন্ধ ও স্থাপনা বন্ধে ১৪৪ ধারা জারি করে আদালত আদেশ জারি করে। গত ২৮ মার্চ এই আদেশ জারি করা হয়। কিন্তু ভূমিদস্যু মোজাম্মেল গংরা এসব আদালতের নির্দেশ বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে প্রকল্পের জমিতে পাকা ওয়াল ও ভবন নির্মাণকাজ অব্যাহত রাখে। ফলে বাদী ইসমাইল হোসেন সিরাজী নিরুপায় হয়ে আদালতের নির্দেশনা সদর থানার নজরে নিয়ে আসেন। এরপর এ্যাকশনে যায় পুলিশ। সেখানে গিয়ে পুলিশ জানতে পারেন মোজাম্মেল এর নির্দেশে প্রকল্পে অবৈধ অনুপ্রবেশকারী ও কয়েকজন কর্মরত শ্রমিককে হাতেনাতে আটক করে থানায় নিয়ে আসে। বিকেল ৫টা পর্যন্ত তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়নি বলে জানা যায়।

টাঙ্গাইল সদর থানার এসআই মো. শামীম প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, আদালতের নির্দেশ উপেক্ষা করে স্থানীয় জাপা নেতার হুকুমে এসডিএস প্রকল্পে পাকা নির্মাণকাজ করার সময় চারজনকে আটক করা হয়েছে। তাদের নাম ঠিকানা এখনো লিপিবদ্ধ করা হয়নি। মামলা হবে কি না কিংবা ১৬৪ এ তাদের চালান দেওয়া হবে কি না- সেটি সন্ধ্যার পর উপরের নির্দেশে বলা যাবে। তবে দুজন নাবালক হওয়ায় তাদের মুচলেকা দিয়ে ছেড়ে দেয়া হতে পারে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইসলামিক রিসার্চ ইনস্টিটিউট ও এসডিএসের ৭১২ শতাংশ জমিতে দীর্ঘদিন ধরে জেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ মোজাম্মেল হক অবৈধভাবে মাটি কেটে বিক্রি করে আসছিলেন। এ বিষয়ে টাঙ্গাইলের যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ আদালতে মামলা করেছেন প্রতিষ্ঠান দুটির চেয়ারম্যান ইসমাইল হোসেন সিরাজী। এ ছাড়া থানায়ও লিখিত অভিযোগ করেন তিনি।

সদর উপজেলার পোড়াবাড়ী ও গদুরগাতি মৌজার ৭১২ শতাংশ ভূমি ১৯৮৭ সালে প্রতিষ্ঠিত ইসলামিক রিসার্চ ইনস্টিটিউট (আইআরআই) ও সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট সংসদের (এসডিএস) মালিকানাধীন। জমিগুলো ব্যাংকে মর্টগেজ রেখে ঋণ নেওয়া হয়। নানাবিধ কারণে মামলার পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিষ্ঠান দুটির সভাপতি ও চেয়ারম্যান ইসমাইল হোসেন সিরাজী ২০০২ সালে গ্রেপ্তার হন। ওই সময় দুটি প্রতিষ্ঠানের স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি বিক্রি বা হস্তান্তরের ওপর টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক নিষেধাজ্ঞা জারি করেন।

তবে এ বিষয়ে মোজাম্মেল হক কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে তার নিজের জমিতেই স্থাপনা করছেন বলে স্বীকার করেন তিনি। আর প্রকল্পের চেয়ারম্যান ইসমাইল হোসেন সিরাজী ন্যায়বিচার পাবেন বলে আশা প্রকাশ করেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close