মেহেদী হাসান

  ৩১ মার্চ, ২০২৪

কম দামেও তরমুজ কিনছে না মানুষ

রমজানের শুরুতে তরমুজের দাম ছিল মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে। মাত্র সপ্তাহখানেকের ব্যবধানে তরমুজের দাম নেমেছে অর্ধেকে। তারপরও ক্রেতাশূন্য তরমুজের বাজার। তরমুজের ক্রেতা না থাকায় হুহু করে কমেছে দাম। বেড়েছে আমদানি। পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছে থেকে খুচরা বিক্রেতারা তরমুজ কিনে এখন কম দামেও বিক্রি করতে পারছেন না। ফলে লাভের তরমুজ এখন ফল ব্যবসায়ীদের গলার কাঁটা হয়ে বিঁধছে।

গতকাল শনিবার রাজধানীর কারওয়ানবাজার, মগবাজার, হাতিরঝিল কাঁচাবাজারসহ কয়েকটি এলাকার তরমুজের দোকান ঘুরে দেখা যায়, তরমুজের আড়ত ও খুচরা দোকানগুলোয় ভিড় নেই ক্রেতার। বিক্রেতারা অলস সময় পার করছেন। যে তরমুজ রমজানের শুরুতে ৮০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে ঠিক একই আকারের তরমুজ ৪০ টাকায় কেজিতেও নিতে চাচ্ছেন না ক্রেতারা। ৮ থেকে ১০ কেজি তরমুজের দাম যেখানে ৪০০ টাকার ওপরে হওয়ার কথা সেখানে বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকার মধ্যে।

ক্রেতারা বলছেন, বাজারে তরমুজের দাম কম তবে অনেকটা স্বাদহীন। তরমুজে পানির পরিমাণ অনেকটা বেশি। ফলে দাম কমলেও ভালো তরমুজ পাওয়ার আশায় গুড়েবালি হচ্ছে ক্রেতাদের। এ ছাড়া একেক জায়গায় একেক দামে তরমুজ বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে বিক্রেতারা বলছেন, কয়েক দিনের বৃষ্টিতে কৃষকরা ক্ষতি এড়াতে তরমুজ বাজারে নিয়ে আসছেন। এ ছাড়া ফলন ভালো হওয়ায় বিক্রির পরিমাণও বেড়েছে। ফলে কম দামে তরমুজ কিনতে পারছেন ক্রেতারা। রমজানের শুরুতে স্বাদ ও রংহীন সাদা তরমুজ কিনে ঠকেছেন অনেক ক্রেতা।

কারওয়ান বাজারের তরমুজ বিক্রেতা সাইফুল ইসলাম বলেন, তরমুজের দাম কমে অর্ধেকে নেমেছে। রোজার শুরুতে ৭০ টাকা কেজি তরমুজ বিক্রি হলেও এখন পিস হিসেবে বিক্রি করছি। পাঁচ থেকে সাত কেজি ওজনের তরমুজ বিক্রি করছি ২০০ থেকে ২৫০ টাকা।

কারওয়ান বাজার থেকে ১০০ পিস তরমুজ কিনে ভ্যানে করে তেজগাঁও এলাকায় বিক্রি করছিলেন রাকিব হোসেন। জানতে চাইলে তিনি বলেন, তরমুজ কেউ কিনতে চায় না। গতকাল একটা ৭ কেজি ওজনের তরমুজ বিক্রি করেছি। পরে সেই তরমুজ ফেরত দিয়েছে ক্রেতা। কারণ বেশি পাকার কারণে পচা ‘গন্ধ’ হয়েছে। আবার তাকে আরেকটি তরমুজ ফ্রিতে দিতে হয়েছে। যে তরমুজ বিক্রি করতে হবে দুদিনে সেই তরমুজ চার দিনেও বিক্রি হচ্ছে না। মানুষের মধ্যে তরমুজ কেনার আগ্রহ কমেছে।

মগবাজার চৌরাস্তা মোড়ের আসিফ মাহমুদ নামের এক তরমুজ বিক্রেতা জানান, বৃষ্টি শুরু হওয়ার কারণে খেত থেকে সব তরমুজ কৃষকরা তুলে বিক্রির জন্য বাজারে নিয়ে আসছেন। আমদানি বাড়ার কারণে দামে ধস নেমেছে। অর্ধেকেরও কম দামে তরমুজ বিক্রি করতে হয়েছে। সামনে আরো দাম কমবে। ব্যবসা ধরে রাখতে অল্প করে কিনে বিক্রির চেষ্টায় আছি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বর্তমানে বিভাগীয় নগরী রংপুরে ধরণভেদে তরমুজ ৪০-৪৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। কোথাও কোথাও পরিপক্ব তরমুজ কেজিপ্রতি ৫০ টাকা নেওয়া হচ্ছে। তবে গ্রামে তরমুজের দাম এর চেয়েও কম। পীরগাছা উপজেলায় তরমুজ বিক্রি হচ্ছে ২৫-৩০ টাকা কেজিতে। তারপরও আশানুরূপ ক্রেতা না থাকায় মাইকিং করে তরমুজ বিক্রি করছেন একজন ফল ব্যবসায়ী।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তরমুজ না কেনার জন্য চালানো হয় জোরালো প্রচারণা। এ ছাড়া খোদ কৃষি মন্ত্রণালয় তরমুজের দাম কমানোর জন্য উদ্যোগ নেয়। ‘কৃষকের পণ্য, কৃষকের দামে’ এই স্লোগানে বাংলাদেশ এগ্রি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বাফা) ব্যবস্থাপনায় রাজধানীর পাঁচ স্থানে তরমুজ বিক্রির ঘোষণা দেয়। কারওয়ান বাজার এলাকার আশপাশে কৃষকের দামে ৫ কেজির বেশি ওজনের তরমুজ ১০০ টাকা, ৭ কেজির বেশি ওজনের তরমুজ ১৫০ টাকা, ৯ কেজির বেশি ওজনের তরমুজ ২০০ টাকা এবং ১১ কেজির বেশি ওজনের প্রতি পিস তরমুজ বিক্রি শুরু হয় ২৫০ টাকায়।

বাফার সভাপতি এ কে এম নাজিব উল্লাহ জানান, ‘কৃষক দাম পাচ্ছে না, আবার ভোক্তা বেশি দামে কিনে খাচ্ছেন’- এরকম খবর এখন গণমাধ্যমে নিত্যনৈমিত্তিক বিষয়। বিগত কয়েক দিনে আমরা গণমাধ্যমে দেখছি যে বেগুন, লাউ, মুলাসহ বিভিন্ন শাকসবজি কৃষক ও উৎপাদক পর্যায়ে খুবই কম দামে বিক্রি হচ্ছে; বিপরীতে ঢাকায় ভোক্তা পর্যায়ে দাম অনেক বেশি। এমন পরিস্থিতিতে, মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য হ্রাস, কৃষক যেন তার উৎপাদিত পণ্য বিক্রি করে ন্যায্যমূল্য পায় এবং ভোক্তারাও যাতে সুলভমূল্যে পণ্য কিনতে পারেন- এ লক্ষ্যে বাংলাদেশ এগ্রি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাফা) কৃষকের খেতের তরমুজ সরাসরি ভোক্তার হাতে তুলে দেওয়ার এই উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close