ধামরাই (ঢাকা) প্রতিনিধি

  ৩০ মার্চ, ২০২৪

ধামরাইয়ে প্রতারক চক্রের কথায় জমি কিনে সর্বস্বান্ত

ঢাকার ধামরাইয়ে জমি কিনতে গিয়ে হাজি সোহরাব হোসেন নামে এক ব্যক্তি প্রতারণার শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। গোলাম মোস্তফা নামের এক ব্যক্তি কৌশলে ওই প্রতারণা করেন। সম্প্রতি মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার সাটুরিয়া বাসস্ট্যান্ড এলাকার সাটুরিয়া মৌজায় ৮ শতাংশ জমি নিয়ে ওই প্রতারণার ঘটনা ঘটে। ভুক্তভোগী হাজি সোহরাব হোসেন ধামরাই উপজেলার আমতা ইউনিয়নের নান্দেশ্বরী গ্রামের রহিমউদ্দিনের ছেলে। সে পেশায় একজন ব্যবসায়ী। এ প্রতারণার সঙ্গে যুক্ত গোলাম মোস্তফা চরসাটুরিয়া এলাকার আবদুল মজিদের ছেলে। স্থানীয়রা বলেছেন, আরএস ২৮২ নম্বর দাগের।

ভুক্তভোগী ও অনুসন্ধান সূত্রে জানা গেছে, তিন মাস আগে স্থানীয় মো. হাসান ও রুবেল নামের দুই ব্যক্তির মাধ্যমে জমিটি বিক্রি হবে জানান গোলাম মোস্তফা। জমির মালিক মোস্তফার নাবালক দুই শিশু দীন ইসলাম কায়িফ ও আফজাল মাহামুদ জারিফ। এজন্য আদালতের মাধ্যমে তাদের বাবা গোলাম মোস্তফা জমিটি বিক্রি করবেন জানান। এজন্য গোলাম মোস্তফা, হাসান ও রুবেল এবং হাজি সোহরাব একত্রে বসে ওই জমির মূল্য নির্ধারণ করা হয় ৫৫ লাখ টাকা। গত ২৯ জানুয়ারি জমি ক্রয়ের জন্য নগদ ৩৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা গোলাম মোস্তাফাকে দেন হাজি সোহরাব হোসেন। টাকার প্রমাণ হিসেবে ভুক্তভোগী লিখিত স্ট্যাম্প করতে চাইলে গোলাম মোস্তফা ন্যাশনাল ব্যাংকের একটি চেকে ৩৫ লাখ টাকা উল্লেখ করে সোহরাব হোসেনকে একটি চেক দেন। ওই সময় তারা সিদ্ধান্ত নেন যেহেতু জমি মালিকরা নাবালক তাই আদালতের আদেশ এনে জমি রেজিস্ট্রি করা হবে। এরপর থেকেই আদালতের অনুমতি মিলছে না জানিয়ে রেজিস্ট্রি নিয়ে তালবাহানা শুরু করে গোলাম মোস্তফা। একপর্যায়ে সোহরাব জানতে পারেন, একই জমি স্থানীয় মনজুর রহমান, আলমগীর হোসেন ও মেহেদী হাসান নামে তিন ব্যক্তির কাছে ৬২ লাখ টাকা দাম নির্ধারণ করে বায়নানামা রেজিস্ট্রি করেন মোস্তফা। প্রতারকদের ফাঁদে পড়েছেন বুঝতে পেরে দৌড়িয়ে মধ্যস্থতাকারী হাসান ও রুবেলকে নিয়ে গোলাম মোস্তফার কাছে গেলে তিনি বায়নার টাকা ফেরত দেবেন বলে জানান। টাকা ফেরত দেননি, উল্টো সোহরাব হোসেনের নামে সাটুরিয়া থানায় গিয়ে চেক হারানোর একটি জিডি করেন মোস্তফা। এরপর সোহরাব হোসেন টাকা না পেয়ে সোহরাব ব্যাংক চেক ডিজঅনার করে গোলাম মোস্তফাকে উকিল নোটিস পাঠান।

এই বিষয়ে হাজি সোহরাব হোসেন বলেন, ধারদেনা করে জমি কিনতে এতগুলো টাকা বায়না করেছিলাম। সেই টাকা না পেয়ে নোটিস পাঠানোর পর থেকেই আমাকে হয়রানি করছে গোলাম মোস্তফা। পুলিশসহ নানা দপ্তরে মিথ্যা অভিযোগ করে ও আদালতে একটি মামলাও করেছে মোস্তফা, যা পিবিআই তদন্ত করছে। আমি এখন সর্বস্বান্ত হয়ে গেলাম। এজন্য সরকার ও প্রশাসনের কাছে দাবি, এই বিষয়ে সঠিক তদন্ত করে তারা যেন আইনের যে উপায় আছে, সেভাবে শাস্তির ব্যবস্থা করেন।

মধ্যস্থতাকারী হাসান ও রুবেল জানান, তাদের উপস্থিতিতেই গোলাম মোস্তফা টাকা নিয়েছিলেন। তিনি টাকা ফেরতও দিতে চেয়েছেন। কিন্তু এখন চালাকি করে হাজি সাহেবকে হয়রানি করছেন।

এ বিষয়ে গোলাম মোস্তফা বলেন, আমার কিছু টাকার প্রয়োজন হলে আমি রুপসী বাংলা এনজিও থেকে ৫০ হাজার টাকা ঋণ নেয়। রুপসী বাংলা থেকে টাকা নেওয়ার সময় জামানত হিসেবে ব্যাংকের একটি চেক নেয় তারা। হাজি সোহরাব হোসেন রুপসী বাংলা এনজিও থেকে সেই চেকটি নিয়ে ৩৫ লাখ টাকা বসিয়ে আমার নামে উকিল নোটিস পাঠায়। মূলত আমি কোনো টাকা নিইনি তার কাছ থেকে। সোহরাব হোসেন আমার জমি নেওয়ার জন্য এই কৌশল নিয়েছে। এই জন্য আমি কোর্টে মামলা করেছি। এছাড়া থানায় ও ইউএনওর কাছে অভিযোগ দিয়েছি।

সাটুরিয়া থানার ওসি মো. সফিকুল ইসলাম মোল্লা এই বিষয়ে বলেন, বিষয়টি নিয়ে আদালতে দুই পক্ষের মামলা চলছে। ফলে বিষয়টি নিয়ে মন্তব্য করতে পারি না।

এই বিষয়ে সাটুরিয়া উপজেলার ইউএনও মো. শান্তা রহমান বলেন, চেকের বিষয়ে একটি অভিযোগ পেয়েছি। অন্য বিষয়ে পাইনি। চেকের বিষয় তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। তদন্তে প্রমাণ হলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close