জুনাইদ কবির, ঠাকুরগাঁও

  ২০ জানুয়ারি, ২০২৪

জীবন-জীবিকা

ফেরিওয়ালার রুটি রুজি

‘লেইস ফিতা লেইস, চুড়ি, ফিতা, রঙিন সুতা রঙিন করিবে মন! লেইস ফিতা লেইস’- সংগীতশিল্পী জেমসের সেই গানের কথা নিশ্চয়ই সবার মনে আছে। ‘নিঃশব্দে, কোলাহলে ঈমান আলী হেঁকে বেড়ান লেইস ফিতা লেইস! পথে পথে তিনি বেচে বেড়ান বাক্সবন্দি কিছু স্বপ্নসুখ! সেই ঈমান আলীকে নিয়ে আমাদের লেইস ফিতা লেইস’- এই কথাগুলো এই গানের মিউজিক ভিডিওর শুরুতেই লেখা। ৯০-এর দশকে এত চমৎকার ভিডিও বানানো হয়েছিল, ভাবতেই অবাক লাগে! এই গানের মতোই জীবন চলে লেইস, চুড়ি ও ফিতাওয়ালা মাহাবুবুর রহমানের। গানে আছে সুর তাল লয় ও রাগ-রাগিণীর ওঠানাম। তার জীবনেও তাই। এখন তার মতো ফেরিওয়ালাদের ব্যবসায় ভাটা। তারপরও সংসার চালাতে টাকা রুজি করার জন্য তাকে এই হাড়কাঁপানো শীতেও নামতে হয় রাস্তায়। তবে সময় এখন তার বৈরী।

৯০-এর দশকের সেই লেইস ফিতাওয়ালাদের এখন আর আগের মতো দেখা মেলে না। শহরের ইট-কাঠ-দালানের ভিড়ে হারিয়ে গেছেন লেইস ফিতাওয়ালারা, যাদের সঙ্গে থাকত রং-বেরঙের মনোহারি দ্রব্য। তবে মফস্বল বা গ্রামের পথেও তাদের পদচারণা কদাচিৎ এখনো ঘটে। আধুনিক সভ্যতা কেড়ে নিয়েছে সেই লেইস ফিতাওয়ালাদের বিচরণ। তাই সচরাচর আর চোখে পড়ে না কাগজের কার্টনের ওপর সাদা বা লাল কাপড় পেঁচিয়ে পুঁটলি কাঁধে ঝুলিয়ে আরেক হাতে কাচের ঢাকনাওয়ালা বাক্স বহনকারী লেইস ফিতাওয়ালাদের।

সে সময় দুপুরের পর যখন অন্দরমহলের নারীরা মধ্যাহ্নভোজ সেরে উঠানের আড্ডার জন্য প্রস্তুত, তখন রাস্তা দিয়ে হেঁকে যেতেন লেইস ফিতাওয়ালারা। তাদের সে ডাক শুনে খুকুমণিরা বায়না ধরত ফিতাণ্ডচুড়ি বা নেইলপলিশের। নারী বরাবরই প্রসাধনপ্রিয়, খুকুমণির আবদারে খুকুমণির মায়েরও দেখতে ইচ্ছা করত, কী আছে ফেরিওয়ালার বাক্সে! এটা থেকে ওটা পরখ করে নারীরা কিনে নিতেন স্নো, পাউডার ক্রিম বা কদুর তেল। খুকুমণির কাঁধঝোলানো চুলে বেঁধে দেওয়া হতো লাল টুকটুকে ফিতা।

এমন এক লেইস ফিতাওয়ালার দেখা হয় ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার আকচা ইউনিয়নের কাজিপাড়া এলাকায়। কাঁধে চুরি ফিতার বাক্স আর হাতে ডুগডুগি বাজিয়ে গ্রামে গ্রামে ঘুরছেন মাহাবুবুর রহমান। তিনি এসেছেন পার্বতীপুরের ৪ নম্বর পলাশবাড়ীর চকবারিয়া, কোয়েলপাড়া এলাকা থেকে।

মাহাবুবুর রহমান জানান, এখন আর আগের মতো গ্রামে কেউ চুড়ি-ফিতা কেনে না। মার্কেটে সবরকম প্রসাধনসামগ্রী আর সাজগোজের জিনিস পাওয়া যায়। এখন সবাই মার্কেটে যান। পেটের দায়ে ও পুঁজির অভাবে এ ব্যবসায় আজও লেগে আছি।

তিনি আরো বলেন, আগে কাপড়ের ব্যবসা করতাম, লোকসান হওয়ায় এ ব্যবসায় নেমেছি। আমি ঠাকুরগাঁওয়ে ২৪-২৫ বছর ধরে এ ব্যবসা করছি। ঠাণ্ডার কারণে বেচাকেনা কমে গেছে। দৈনিক ৪০০/৫০০ টাকার জিনিসপত্র বিক্রি করতে পারি। ছেলের অসুস্থতার কারণে ছেলে, বউ, পুত্রবধূ এবং ২ নাতির সংসার একাই চালান বলে জানান তিনি।

ছোটবেলার স্মৃতিচারণ করে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার মাস্টারপাড়ার বাসিন্দা রুবিনা আক্তার বলেন, ছোটবেলায় লেইস ফিতাওয়ালার কাছ থেকে জিনিস কিনতাম। এখন আর তাদের দেখা যায় না। সবাই একসঙ্গে এটা সেটা দেখে অনেক মজা করে চুড়ি-ফিতা, নেইলপলিশ কিনতাম। আগের দিনগুলো সত্যি অনেক মজার ছিল।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close