কাজী আবুল মনসুর, চট্টগ্রাম

  ১৩ জানুয়ারি, ২০২৪

নওফেলের চমক, জাবেদ মন্ত্রী না হওয়ায় বিস্ময়!

চট্টগ্রামের দুজন মন্ত্রিত্ব পেয়েছেন। চট্টগ্রাম কতোয়ালীর সংসদ সদস্য মহিবুল হাসান নওফেল আর রাঙ্গুনিয়ার ড. হাছান মাহমুদ। একজনের প্রমোশন, অন্যজনের দপ্তর বদল। সংসদ সদস্যদের মধ্যে বেশির ভাগই অনভিজ্ঞ, নতুন। এ বি এম মহিউদ্দিনের ছেলে মহিবুল হাসান নওফেল উপমন্ত্রী থেকে পূর্ণমন্ত্রী আর অন্যজন আকতারুজ্জামান চৌধুরীর ছেলে আনোয়ারার সংসদ সদস্য ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ মন্ত্রী না হওয়া। এটির একটি চমক, অন্যটি বিস্ময়!

এবার চট্টগ্রাম থেকে মন্ত্রী কম থাকবেন এটি ধারণা করছিলেন সবাই। কারণ নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের মধ্যে ৮ জনই নতুন মুখ। এবারই প্রথম। বাকিদের মধ্যে যারা ছিলেন তাদের মধ্যে থেকে মন্ত্রী হতে ইচ্ছুক ছিলেন প্রায় সবাই। তবে বিষয়টি যে হাইকমান্ডের হাতে। তাই ছিল না আগাম উচ্ছ্বাস। তবে নির্বাচন শেষে চট্টগ্রামের এমপিদের মধ্যে কারা হচ্ছেন মন্ত্রী এ নিয়ে কৌতুহলের অন্ত ছিল না। এক না একাধিক মন্ত্রী থাকছেন চট্টগ্রাম থেকে এ নিয়ে চলে আলোচনা। এমপিদের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান সম্পন্নের পর চট্টগ্রামে শুরু হয় নানা জল্পনা-কল্পনা। শুরু হয়ে যায় নানা লবিং-তদবিরও। তবে সব কিছুর চাবি যে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার হাতে রয়েছে এ কথাও অনেকে জানতেন। এ নিয়ে নিজ নিজ এমপির সমর্থকদের মাঝে উৎসাহ-উদ্দিপনা থাকলেও কোনো উচ্চবাচ্য ছিল না। চট্টগ্রামের প্রতিটি আসনের এমপির সমর্থকরা বিশ্বাস করছেন তাদের এমপিকে এবার মন্ত্রী করা হবে।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ৭ জানুয়ারি। ১১ জানুয়ারির আগেই গঠিত হয় নতুন মন্ত্রিসভা। এমপিদের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান শেষ হবার পর থেকে মন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে ঢাকায় ব্যস্ত দিন কাটিয়েছেন চট্টগ্রামের সংসদ সদস্যরা। এমপিদের অনেক কর্মীরাও অবস্থান নেয় ঢাকায়। নেতা মন্ত্রী হলে তাকে ঘিরে কি কি আয়োজন হতে পারে এ নিয়ে হিসেব নিকেশে ব্যস্ত ছিল কর্মী-সমর্থকরা। নির্বাচিত কয়েকজন এমপি নেত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে নানা ছবি ফলাও করে প্রচার করেছেন। বড় বড় নেতাদের সঙ্গে এমপিদের দেওয়া ফুলের তোড়ার ছবিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাদের নেতাকর্মীরা ফলাও করে প্রচার করেছে। স্থানীয় নেতারা এটি ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন। নির্বাচনে চট্টগ্রামের ১৬ আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগের ১২টি, স্বতন্ত্র ৩টি আর জাতীয় পার্টি ১টি আসন পেয়েছে। মূলত একটি ছাড়া সবই আওয়ামী লীগের। তাই চট্টগ্রাম থেকে কারা মন্ত্রী হচ্ছেন এ নিয়ে কৌতুহলের অন্ত ছিল না।

শেষপর্যন্ত মন্ত্রী তালিকায় ছিলেন চট্টগ্রামের মাত্র দুজন। চট্টগ্রাম কতোয়ালীর সংসদ সদস্য মহিবুল হাসান নওফেল আর রাঙ্গুনিয়ার ড. হাছান মাহমুদ। একজনের প্রমোশন, অন্য জনের দপ্তর বদল। এবারের সরকারে মাত্র দুজন দেখে চলছে নানা আলোচনা। কারও মতে সামনে আরো নতুন মুখ আসবে। কারও মতে চট্টগ্রামে নেত্রীর আস্থাশীল নেতার অভাব রয়েছে।

এবারের মন্ত্রী সভায় চট্টগ্রামের মানুষের জন্য ছিল দুটি চমক। একটি হলো আনোয়ারার সংসদ সদস্য ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের মন্ত্রিত্ব না পাওয়া, অন্যটি হলো মহিউদ্দিসন চৌধুরী ছেলে মহিবুল হাসানের উপমন্ত্রী থেকে পূর্ণ মন্ত্রীতে প্রমোশন। সাবেক সিটি মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর সন্তান মহিবুল হাসান নওফেল এবারের নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়ী হবেন এটা প্রায় নিশ্চিত ছিলেন সবাই। কারণ এরই মধ্যে নওফেল শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে উপমন্ত্রী থাকাকালে ইতিবাচক ভূমিকা, টেলিভিশনের টক শো থেকে শুরু করে দলের বিভিন্ন পর্যায়েও নানা ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছেন। বিশেষ করে চট্টগ্রামের সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর সন্তান হিসেবে নওফেল এমনিতেই জনপ্রিয় ছিলেন। চট্টগ্রামের সবচেয়ে মূল্যবান আসন বলে চিহ্নিত চট্টগ্রাম-৯ আসনটি। এ আসনে তরুণ প্রজন্মের প্রতিনিধি হিসেবে নওফেলকেই এমনিতেই দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা মনোনয়ন দেন। নির্বাচনে নওফেল ১ লাখ ৩০ হাজার ৯৯৩ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। ১৯৮৩ সালের ২৬ জুন চট্টগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন নওফেল। ছোটবেলা থেকেই মেধাবী নওফেল বাবা মহিউদ্দিন চৌধুরীর রাজনীতির প্রতি আগ্রহ ছিলেন। দেশ-বিদেশে পড়াশুনা করেন নওফেল। লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিক্স থেকে স্নাতক করার পর ব্যারিস্টারি পাস করেন। বিগত বাংলাদেশে ওয়ান-ইলেভেন সরকারের সময় লন্ডনে দলের নেত্রী শেখ হাসিনাকে যখন গ্রেপ্তার করা হয়; তখন জনমত গঠনে ভূমিকা রাখেন। রাজনৈতিক পরিবারে জন্ম নেওয়া নওফেলের নানা কর্মকান্ড ছিল চট্টগ্রাম ঘিরে। বাবার মতো চট্টগ্রামের মানুষকে ভালোবাসেন। ২০১০ সালে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বাবার পক্ষ হয়ে চট্টগ্রামের মানুষের কাছে ভোট চাইতে মাঠে নামেন নওফেল। এ সময় তার প্রতিভা দেখে অনেকে নওফেলকে বাবা মহিউদ্দিনের উত্তরসূরি হিসেবে চিহ্নিত করেন। এরই মধ্যে নওফেল যুবলীগের রাজনীতিতে যোগ দেন। ২০১৪ সালে নগর কমিটির নির্বাহী সদস্য হন। পরবর্তীতে তাকে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রিয় কমিটিতে সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়।

তার যোগ্যতা ও রাজনৈতিক দূরদর্শিতার ওপর ভিত্তি করে তাকে আওয়ামী লীগ হতে চট্টগ্রাম-৯ আসনে মনোনয়ন দেওয়া হয়। বিপুল ভোটে বিজয়ের মাধ্যমে নওফেল দ্বিতীয় বারের মতো চট্টগ্রাম থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

নির্বাচিতদের মধ্যে নওফেল ছাড়াও চট্টগ্রামে মন্ত্রী হিসেবে আলোচনায় ছিলেন আনোয়ারার সংসদ সদস্য ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাভেদ, রাঙ্গুনিয়ার সংসদ সদস্য তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, রাউজানের সংসদ সদস্য এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরীর নাম। এ ছাড়াও টেকনোক্রেট মন্ত্রী হিসেবে চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা খোরশেদ আলম সুজন, আনোয়ারার ওয়াসিকা খান ও হাটহাজারীর এম এ সালামের নাম। তবে শেষপর্যন্ত আলোচনায় থাকাদের মধ্যে ড. হাসান মাহমুদকে তথ্যমন্ত্রী থেকে দপ্তর পরিবর্তন করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়। ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামানকে প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ট হিসেবে মনে করেন চট্টগ্রামবাসী। যেহেতু বর্ষিয়ান নেতা আকতারুজ্জামানের যথেষ্ট অবদান দলে ছিল। সেই হিসেবে জাভেদ মন্ত্রী হবেন এটি প্রায় নিশ্চিত ছিলেন সবাই। তবে নির্বাচনের আগে লন্ডনে প্রচুর বাড়ির মালিক বলে গণমাধ্যমে প্রচার হওয়া সংবাদটি তার মন্ত্রিত্বে শেষ পেরেক টুকে দেয়।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close