গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী) প্রতিনিধি ও নিজস্ব প্রতিবেদক

  ০৭ জানুয়ারি, ২০২৪

বেনাপোল এক্সপ্রেসে আগুন

রাজবাড়ীর তিন যাত্রী নিখোঁজ

ঢাকার গোপীবাগে বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে আগুনের ঘটনায় এখন পর্যন্ত রাজবাড়ী জেলার তিন যাত্রীর খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। গত শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা ৩৩ মিনিটে রাজবাড়ী রেলস্টেশন থেকে ঢাকার উদ্দেশে বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে যাত্রা করেন তারা।

তারা হলেন রাজবাড়ী শহরের নূরপুর গ্রামের সাইদুর রহমান বাবুর মেয়ে এলিনা ইয়াসমিন (৪৩), কালুখালী উপজেলার মৃগী ইউনিয়নের বড়ইচারা গ্রামের আবদুল হক মণ্ডলের ছেলে আবু তালহা (২৪) ও রাজবাড়ী সদর উপজেলার খানগঞ্জ ইউনিয়নের রঘুনাথপুর গ্রামের চিত্তরঞ্জন প্রামাণিকের মেয়ে চন্দ্রিমা চৌধুরী (২৪)। চন্দ্রিমার ভাই শোভন প্রামাণিক বলেন, সে আমার ছোট বোন। একটি বেসরকারি বিদ্যালয় থেকে ফার্মাসিস্ট বিভাগে পড়ালেখা করেন। আমার সঙ্গেই ঢাকার মোহাম্মদপুরে থাকেন। কয়েক দিন আগে বাড়িতে এসেছিল। বেনাপোল এক্সপ্রেসের ‘চ’ নম্বর বগিতে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেয়। দুর্ঘটনার পর থেকে চন্দ্রিমা নিখোঁজ রয়েছে।

আবু তালহার চাচাতো ভাই রিপন মাহমুদ বলেন, তার দুই চাচাতো ভাই আবু তালহা ও আবু তাসলাম একসঙ্গে ঢাকায় যাচ্ছিল। দুর্ঘটনার পর আবু তাসলাম ট্রেন থেকে নেমে যেতে পারলেও আবু তালহাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।

এলিনা ইয়াসমিনের ভাসুর মুরাদ হোসেন বলেন, এলিনা ১০ দিন আগে তার বাবার মৃত্যুতে বাড়িতে আসেন। শুক্রবার সন্ধ্যায় বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে ঢাকায় ফিরছিলেন। তার পাঁচ মাসের সন্তানকে পাওয়া গেছে। কিন্তু এলিনা এখনো নিখোঁজ।

রাজবাড়ী রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার আবদুর রহমান বলেন, যশোর থেকে ছেড়ে যাওয়া বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনটি গত শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা ৩৩ মিনিটে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায়। এ সময় রাজবাড়ী থেকে ৬৫ জনের মতো যাত্রী এ ট্রেনে গিয়েছিল।

এদিকে নিখোঁজ এলিনা ইয়াসমিনের বোন ডেইজি আক্তার ঢাকার শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন। তিনি জানান, সেই সময়ের হৃদয়বিদারক ঘটনা। তিনি বলেন, ‘কেউ একজন পেছন থেকে বলল, আগুন লেগেছে। মুহূর্তে দাউ দাউ আগুন, কালো ধোঁয়া। আমি আরফানকে এক হাতে বুকে জড়িয়ে ধরি। আরেক হাত দিয়ে ছোট ছেলেকে ধরে ট্রেনের দরজা দিয়ে লাফ দিই। ঠিক পেছনেই ছিল বোন (এলিনা ইয়াসমিন)। নামার পর পেছনে তাকিয়ে দেখি ও নেই।’

ডেইজির শ্বাসনালি কিছুটা পুড়ে গেছে। তিনি এখন শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের ৫২০ নম্বর কক্ষে চিকিৎসাধীন।

পুড়ে যাওয়া তিনটি কোচের একটি ‘চ’তে ছিলেন ডেইজি, তার স্বামী সাউথইস্ট ব্যাংকের কর্মকর্তা মো. ইকবাল বাহার খান, দুই ছেলে আরহাম ইউসুফ খান (১০) ও রাইয়ান ইউসুফ খান (৭), মামাতো বোন (নিখোঁজ) এলিনা ইয়াসমিন ও তার ছয় মাসের ছেলে সৈয়দ আরফান হোসেন। ট্রেনে আরফান ছিল খালা ডেইজির কোলে।

ডেইজি জানান, আগুন লাগার পর তার বড় ছেলে ট্রেনের এক আসন থেকে আরেক আসনে লাফিয়ে লাফিয়ে দরজার কাছে পৌঁছায়। তিনি আরফানকে বুকে জড়িয়ে ও ছোট ছেলেকে হাতে নিয়ে দরজার কাছে যান। ঠিক পেছনেই ছিলেন এলিনা। তারা একসঙ্গে সবাই ছিলেন। তারা দরজা দিয়ে আর তার স্বামী জানালা দিয়ে লাফিয়ে নামেন। নামার পর এলিনাকে না পেয়ে তারা এদিক-ওদিক ছোটাছুটি করতে থাকেন। ওই সময় আশপাশের সব লোক আগুন নেভানোর চেষ্টা করছিলেন। অনেকক্ষণ ছুটেও কোথাও এলিনাকে খুঁজে পাননি তারা।

আগুনে ডেইজির স্বামী ও দুই সন্তানের শ্বাসনালি পুড়েছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। আর ছয় মাসের আরফানকে রুটিন পরীক্ষা করে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এলিনা স্বামী ও সন্তান নিয়ে রাজধানীর মিরপুরের ৬০ ফুট রোডের একটি বাসায় ভাড়া থাকতেন। তার ভাগনি তাসলিমা আফরোজ জানান, গত ২৭ ডিসেম্বর এলিনার বাবা সাইদুর রহমান মারা যান। সে উপলক্ষে তিনি রাজবাড়ীতে গ্রামের বাড়িতে যান। শুক্রবার ঢাকায় ফিরছিলেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close