নিজস্ব প্রতিবেদক
হলি আর্টিজান
স্মৃতিচারণে অবিন্তার স্বপ্ন এগিয়ে নেওয়ার প্রত্যয়
গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলায় নিহত তরুণী অবিন্তা কবিরের পরিকল্পনায় গড়ে তোলা অবিন্তা কবির ফাউন্ডেশন স্কুলের এক বছর পূর্তিতে তার স্বপ্ন এগিয়ে নেওয়ার কথা বলেছেন এক স্মৃতিচারণ অনুষ্ঠানের বক্তারা। এক বছর আগে রাজধানীর ছিন্নমূল ও সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের মধ্যে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেওয়ার ব্রত নিয়ে যাত্রা করেছিল স্কুলটি। দ্বিতীয় বছরে পদার্পণ উপলক্ষে রাজধানীর ভাটারায় অবিন্তা কবির ফাউন্ডেশন স্কুলে গতকাল শনিবার আয়োজন করা হয় স্মৃতিচারণ অনুষ্ঠানের।
এতে যোগ দিয়েছিলেন ব্র্যাকের চেয়ারপারসন স্যার ফজলে হাসান আবেদ, তার সহধর্মিণী সাইয়্যেদা সারওয়াত আবেদ, জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, বাংলাদেশে মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট, অবিন্তা কবিরের মা ও ফাউন্ডেশনের কো-চেয়ারম্যান রুবা আহমেদ।
যুক্তরাষ্ট্রের আটলান্টার ইমোরি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী অবিন্তা কবির চেয়েছিলেন ২০১৯ সালে পড়াশোনার পর্বটি শেষ করে ফিরবেন দেশে। তারপর লড়বেন বঞ্চিত মানুষের হয়ে। কিন্তু ২০১৬ সালের ১ জুলাই জঙ্গি হামলায় থমকে যায় তার স্বপ্ন। পরে তার পরিবারের সহযোগিতায় ২০১৭ সালের ৪ মার্চ যাত্রা করে অবিন্তা কবির ফাউন্ডেশন। এর কয়েকদিন পর যাত্রা করে স্কুলটি।
মেয়েকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে অবিন্তার মা রুবা আহমেদ বলেন, প্রিয় স্বদেশ বাংলাদেশের সুবিধাবঞ্চিত মানুষের জীবনকে আরো সহজ করতে চেয়েছিল অবিন্তা কবির। এ দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর প্রতি তার গভীর সমবেদনা ও অনুরাগ কাজ করত। সহজবোধ্য উপায়ে সমাজের উচ্চ ও নিম্ন শ্রেণির মানুষের জীবনমান উন্নয়নে তার বিভিন্ন ভাবনার কথা বলত, সেগুলোও লিখে গেছে।
নিজ দেশের অসহায় মানুষের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নের মাধ্যমে সবার জন্য একটি বাসযোগ্য সুন্দর পৃথিবী গড়ে তোলার কথা বলতেন অবিন্তা। তিনি জানতেন, কাজটি খুব সোজা হবে না। কে আমিÑ এই প্রশ্নের মুখোমুখি যখনই তিনি হতেন, তখনই তিনি নিজেকে বাংলার মাটি-জলে পরিপূর্ণ এক বাঙালি মনে করতেন। তিনি গর্ব করতেন বাংলা সংস্কৃতি নিয়ে। খুব বড় কিছু করে ফেলবেন, এটা তিনি বলতেন না। তিনি বলতেন, তার ছোট্ট একটু অবদানের মাধ্যমে বাংলাদেশের একটু পরিবর্তন সম্ভব।
অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, ‘নিজের সামর্থ্যরে সবটুকু দিয়ে অবিন্তা এ দেশের অধিকারবঞ্চিত মানুষের জন্য কাজ করতে চেয়েছিল। মহৎ হৃদয়ের উজ্জ্বল এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছে সে। আমার ভালো লেগেছে সে যে সব সময় সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের কথা ভাবত। অবিন্তা ফাউন্ডেশন তার সেই স্বপ্নগুলো এগিয়ে নিয়ে যাবে আরো দূর।’
ফজলে হাসান আবেদ বলেন, ‘অবিন্তার ভাবনাজুড়ে ছিল এ দেশের দরিদ্র জনগণ। এ দেশের দরিদ্র শিশুদের নিয়ে সে ভাবত। তাদের কথা লিখে গেছে সে। সমাজের ধনী-দরিদ্র বৈষম্য নিয়ে সে চিন্তা করত। স্বপ্ন বাস্তবায়নের তাড়া ছিল তার মনে। তাইতো প্রথমে ডাক্তারি পড়তে গিয়েও পরে সে পথ বাদ দিয়েছিল সে। দরিদ্র মানুষের কল্যাণের জন্য তাকে দ্রুত ফিরতে হতো দেশে। নিজের স্বপ্নগুলো বাস্তবায়ন করে যেতে পারেনি সে। তবে তার চিন্তাপ্রসূত পথ বাস্তবায়ন করে চলেছে তার পরিবার।’
শুধু স্কুলভিত্তিক কার্যক্রমে সীমাবদ্ধ না থেকে দরিদ্র মানুষের জীবনমান উন্নয়নে আরো অনেক কর্মসূচি গ্রহণে ফাউন্ডেশনকে পরামর্শ দেন তিনি।
অবিন্তা কবিরকে স্মরণ করতে গিয়ে অশ্রুসজল হয়ে ওঠেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট। এক বছর আগে স্কুলটির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসেছিলেন তিনি। বার্নিকাট বলেন, নারীর স্বপ্ন বাস্তবায়ন বড় কঠিন ব্যাপার, আর এটা দুনিয়াজুড়েই। স্বপ্ন বাস্তবায়নে পেছন থেকে নানা সীমাবদ্ধতা এসে আঁকড়ে ধরে। নারী সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের সাহসটা দেখাচ্ছে অবিন্তা কবির ফাউন্ডেশন, এর স্কুলটি। এখানে শুধু যে পাঠদান হচ্ছে তা কিন্তু নয়! এখানে এসে দেখলাম, বইয়ের বাইরে এসে শিশুরা জীবনবোধের নানা শিক্ষাও পাচ্ছে।
"