নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২০ জানুয়ারি, ২০২৪

নৌ-বিমায় ন্যূনতম প্রিমিয়াম হার ০.৩০

বাড়তি ব্যয় চাপছে ভোক্তার ঘাড়ে

দেশের নৌ-বিমা খাতে বর্তমানে ন্যূনতম প্রিমিয়াম হার ০.৩০ শতাংশ, যা আন্তর্জাতিক হারের তুলনায় অস্বাভাবিক রকমের বেশি। এর ফলে ব্যবসায়িক ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে, যা শেষ পর্যন্ত ভোক্তাদের ঘাড়ে গিয়েই চাপছে।

বিশেষজ্ঞ ও উদ্যোক্তারা বলছেন, বিমা প্রিমিয়ামের ন্যূনতম হার নির্ধারণ বিদ্যমান মুক্তবাজার অর্থনীতি ও প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

আন্তর্জাতিক হারের চেয়ে অনেক বেশি ন্যূনতম হার নির্ধারণের করার মাধ্যমের প্রতিযোগিতা আইন লঙ্ঘন করা হয়েছে। বাংলাদেশ ছাড়া এরকম বিমার ন্যূনতম হার নির্ধারণ কোনো দেশেই নেই। বাংলাদেশে যেখানে ন্যূনতম প্রিমিয়াম হার ০.৩০ শতাংশ, আন্তর্জাতিক বিমা বাজারে সেটি ০.০১ শতাংশ থেকে ০.১ শতাংশের মধ্যে। প্রতিবেশী দেশ ভারত ও পাকিস্তানেও একই হার। বাংলাদেশ মেরিটাইম ল’ সোসাইটির প্রেসিডেন্ট অ্যাডভোকেট ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন আবদুুল কাদের বলেন, আন্তর্জাতিক মেরিটাইম আইনে ন্যূনতম প্রিমিয়াম হার নির্ধারণের বিষয়ে কিছু বলা নেই। উন্নত দেশগুলোয়ও ন্যূনতম হার নির্ধারণ করা হয় না। বিমার বাজার সবসময় মুক্ত থাকে। বাংলাদেশে ন্যূনতম হার নির্ধারণে প্রতিযোগিতার পরিবেশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এছাড়া বাংলাদেশে নৌ-বিমার প্রিমিয়াম হার তুলনামূলক বেশি। আমদানি খাতের এ ব্যয় ভার শেষ পর্যন্ত ভোক্তাকে বহন করতে হয়। বাংলাদেশের আমদানিনীতি অনুযায়ী, দেশীয় কোম্পানির কাছেই নৌ-বিমা করতে হয়।

সেন্ট্রাল রেটিং কমিটির (সিআরসি) সুপারিশের ভিত্তিতে বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) সাধারণ বিমার প্রিমিয়ামের হার, সুযোগ-সুবিধা ও শর্তসমূহ নির্ধারণ করে। দেশের নৌ-বিমার প্রিমিয়ামের ন্যূনতম হারও তারা নির্ধারণ করে থাকে। নৌ-বিমায় ঝুঁকি বিবেচনায় ইনস্টিটিউট কার্গো ক্লজেস (আইসিসি) অনুসারে তিন ক্যাটাগরির বিমার প্রচলন আছে। ২০২০ সালের আগস্ট মাসে বাংলাদেশ মেরিন ট্যারিফ শুল্ক সংশোধনের মাধ্যমে আবার নৌ-বিমার প্রিমিয়াম হার নির্ধারণ করে আইডিআরএ।

সেখানে আইসিসি ‘এ’ ক্যাটাগরিতে ০.৪৫ শতাংশের সঙ্গে অন্যান্য পলিসি যুক্ত, আইসিসি ‘বি’ ক্যাটাগরিতে ০.৪৫ শতাংশে এবং আইসিসি ‘সি’ ক্যাটাগরিতে ০.৩০ শতাংশে বিমা প্রিমিয়াম হার নির্ধারণ করা হয়। বাংলাদেশের আমদানিকারকরা সাধারণত সবচেয়ে কম খরচের ক্যাটাগরি, অর্থাৎ আইসিসি ‘সি’ গ্রহণ করে থাকে। সংশ্লিষ্টরা জানান, ১০০ কোটি টাকার বেশি মূল্যের আমদানির বিপরীতে দেশের বিমা কোম্পানিগুলো ঝুঁকি বণ্টন করতে বিদেশি কোম্পানির কাছে গ্রাহকের বিমার বিপরীতে পুনঃবিমা করে। সেক্ষেত্রে গ্রাহক থেকে মাত্র ০.০৫ শতাংশ প্রিমিয়াম হার নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু বিদেশি বিমা কোম্পানির কাছ থেকে সরাসরি বিমা পলিসি গ্রহণের সুযোগ নেই।

বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরোয়ার্ডারস অ্যাসোসিয়েশনের (বিএপিএ) ভাইস প্রেসিডেন্ট খায়রুল আলম সুজন বলেন, মুক্তবাজার অর্থনীতিতে সর্বনিম্ন হার নির্ধারণ করা হলে সেবাগ্রহীতা ও দাতার মধ্যে দর কষাকষির সুযোগ সংকুচিত হয়ে আসবে। প্রতিযোগিতার পরিবেশ থাকবে না। অবশ্য বিভিন্ন খাতে সর্বোচ্চ সেবামূল্য নির্ধারণের চর্চা রয়েছে বলে জানান তিনি। খায়রুল আলম বলেন, যেমন বাপা থেকে আমরা প্রতি আমদানি চালানের বিপরীতে লোকাল ডেলিভারি চার্জ সর্বোচ্চ ৫ হাজার ৫০০ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছি।

আইডিআরএ চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জয়নুল বারী বলেন, আইনানুযায়ী ক্ষমতাবলে প্রিমিয়াম হার নির্ধারণ করে আইডিআরএ। প্রিমিয়াম হার নির্ধারণ করা হয় বিশেষজ্ঞ কমিটির মাধ্যমে। হার নির্ধারণ করার সময় আন্তর্জাতিক বিষয়াদিও বিবেচনা করা হয়। হার নিয়ে আপত্তি থাকলে ভবিষ্যতে হালনাগাদ করা হবে। খাতসংশ্লিষ্টরা জানান, দেশে বছরে ৮০ বিলিয়ন ডলারের মতো আমদানি বাণিজ্য হয়, যার বড় একটি অংশই হয় সমুদ্রপথে। ফলে বছরে নৌ-বিমায় প্রায় ২৪০ কোটি টাকা ব্যয় করতে হয় আমদানিকারকদের।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close