চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি

  ২০ জানুয়ারি, ২০২৪

‘জীবিত ফিরে প্রমাণ করল ববি মরে নাই’

চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে দাফনের প্রায় ছয় মাস পর ববি খাতুন নামে এক নারী তার স্বামীকে সঙ্গে নিয়ে এলাকায় ফিরে আসেন। তার এভাবে চলে আসায় এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। গত বুধবার সন্ধ্যায় উপজেলার মনাকষা ইউনিয়নের চৌকা গ্রামের এ ঘটনা ঘটে। পরিবারের সদস্যরা জানান, ওই নারীর মরদেহ হিসেবে শনাক্ত করে পুলিশ দাফন করেছিল। মৃত মনে করা ওই নারীর ফিরে আসাকে অনেকে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘জীবিত ও মৃত’ ছোট গল্পের সঙ্গে তুলনা করছেন। তবে এর পেছনের অনেক রহস্যের কূলকিনারা করতে কাজ করছে পুলিশ।

২৬ বছর বয়সি ববি খাতুন শিবগঞ্জ উপজেলার মনাকষা ইউনিয়নের খড়িয়াল-চৌকা গ্রামের গোলাম রসুলের মেয়ে। তার স্বামী মাজেদ আলী নওগাঁর মান্দা উপজেলার বাসিন্দা। জানা গেছে, ২০২৩ সালের ২৬ জুলাই দুপুরে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার বালিয়াডাঙ্গা ইউনিয়নের লিলিখিলি মোড়ের একটি পুকুর থেকে অজ্ঞাত পরিচয়ের এক নারীর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। মৃত এই নারীর গায়ে থাকা স্বর্ণের অলংকার দেখে তাকে ববি হিসেবে শনাক্ত করে তার পরিবার। পরবর্তী সময়ে পুলিশ জেলা শহরের ফকিরপাড়া গোরস্থানে মরদেহ দাফন করে। এ ঘটনায় সদর থানা পুলিশ বাদি হয়ে অজ্ঞাতদের বিরুদ্ধে মামলা করে।

এ মামলায় শিবগঞ্জ উপজেলার বিনোদপুর ইউনিয়নের ক্যাপড়াটোলা গ্রামের এনামুল হকের ছেলে রুবেল আলী নামে এক যুবককে সন্দেহভাজন হিসেবে আটক করে। পরে তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে সোপর্দ করা হয়। ৪০ দিন জেলহাজতে থেকে জামিনে মুক্ত হয়ে বাড়ি ফেরেন তিনি। মামলাটি এখনো চলমান। এ অবস্থায় বুধবার ববি খাতুন সশরীরে হাজির হন। এতেই এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, দীর্ঘ ৫ মাস আগে এক মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে পরিবারের লোকজন এটা ববির মরদেহ বলে শনাক্ত করে। পুলিশ বাদী হয়ে হত্যা মামলা করে। পরে রুবেল নামে এক যুবককে গ্রেপ্তার করা হয়, ফাহিম ও বিপ্লব নামে আরো দুজনকে পুলিশ সন্দেহভাজন হিসেবে আটক করে। তবে জিজ্ঞাসাবাদ করে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। এসব পরিবারের মাঝে ছড়িয়ে পড়ে গ্রেপ্তার আতঙ্ক। এরই মধ্যে হঠাৎ করে ববি খাতুন তার গ্রামের বাড়িতে ফিরে আসলে উৎসুক জনতা ভিড় করে।

রুবেলের বাবা এনামুল হক জানান, রুবেলের কাছ থেকে ৩০ হাজার টাকা ধার নিয়েছিল ফাহিম নামের এক যুবক। এ সময় রুবেল তার মোবাইল ফোনটি রেখে চলে যায়। মোবাইল ফেরত নিতে ববি খাতুন রুবেলকে মুঠোফোনে কল দেয়। রুবেল মোবাইল ফোন ফেরত দিতে যায়। কাকতালীয়ভাবে সেই দিনই ববি খাতুন নিখোঁজ হয়।

তিনি বলেন, মোবাইল ফেরত দেয়ার দিন ববি যেহেতু নিখোঁজ হয়েছে। তাই তার পরিবারের দাবি- রুবেল ববি খাতুনকে গুম করেছে। তার কয়েক দিন পরেই সদর উপজেলায় বস্তাবন্দি এক নারীর মরদেহ পাওয়া গেলে, রুবেলের ওপরই দোষ চাপায়। পরে পুলিশ এসে তাকে গ্রেপ্তার করে।

ভুক্তভোগী রুবেল আলী বলেন, আমি ববিকে মুঠোফোনটি দিয়ে এসেছি। ওই দিনই সে বাড়ি থেকে নিখোঁজ হলে সব সন্দেহ আসে আমার ওপর। এর তিন দিন পরে সদর উপজেলার একটি পুকুর থেকে বস্তাবন্দি অজ্ঞাত পরিচয়ের এক নারীর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনার পর পুলিশ এসে আমাকে আটক করে নিয়ে যায়।

তিনি আরো বলেন, আমি নিরপরাধ হয়েও জেলহাজতে ছিলাম। আমার পরিবারের অনেক খারাপ সময় পার করেছে। হঠাৎ শুনছি ববি বাড়ি ফিরে এসেছে। এতে স্বস্তি পেয়েছি। আমি নির্দোষ এটা প্রমাণ হয়েছে।

তবে ববি খাতুনের দাবি, তাকে রুবেল আলী ও তার সহযোগীরা বাড়ি থেকে মুঠোফোনে মনাকষা এলাকায় ডেকে জেলার গোমস্তাপুর উপজেলায় নিয়ে নির্যাতন করে এবং নওগাঁ জেলায় তাকে ফেলে পালিয়ে যায়। এরপর তিনি অচেতন অবস্থায় ছিলেন। পরে এলাকাবাসী উদ্ধার করে। এ সময় পরিচয় হয় এক যুবকের সঙ্গে, পরিচয় প্রথমে প্রেমে পরে বিয়েতে গড়ায়। দুজন বিয়ে করে এত দিন ঢাকায় ছিলেন। কেন তিনি বাড়িতে যোগাযোগ করেননি- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি কোন উত্তর দেননি।

নিখোঁজের পর ববি বাড়ি আসার ঘটনাটি নিশ্চিত করে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর মডেল থানা পুলিশের ওসি মিন্টু রহমান বলেন, পুলিশ বস্তাবন্দি মরদেহটি উদ্ধার করলে ববি খাতুনের পরিবার দাবি করে মরদেহটি তাদেরই। তারপর পুলিশ তদন্ত করতে গিয়ে দুজনকে সন্দেহভাজন হিসেবে জিজ্ঞাসাবাদ করে ছেড়ে দেয়। এছাড়া রুবেল নামে আরো এক যুবককে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। সে এখন জামিনে আছে।

ঘটনার সময় এই থানায় কর্মরত ছিলেন না বলে তিনি আরো বলেন, পুলিশ বাদী হয়ে মামলাটি করেছিল। যা এখনো তদন্তাধীন। তদন্ত সাপেক্ষে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এছাড়া ছয় মাস আগে বস্তাবন্দি যে নারীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে তার পরিচয় শনাক্তে কাজ করছে পুলিশ।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close