reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ২২ জানুয়ারি, ২০২৪

জেনে নিন, সর্বশেষ জান্নাতে প্রবেশকারী বান্দা ও তার রবের কথোপকথন

প্রতীকী ছবি

জান্নাত এমন অনিন্দ্য-সুন্দর আবাস— যা কোনো চোখ দেখেনি। কোনো কান শোনেনি এবং কোনো অন্তর তা সম্পর্কে কল্পনাও করতে পারেনি। আল্লাহ তাআলা অশেষ-অফুরান নেয়ামত রেখেছেন সেখানে। জান্নাতে যে যাবে— সে জান্নাত থেকে কখনো বের হবে না। চিরকাল জান্নাতই হবে তার ঠিকানা ও আলোয়।

জান্নাতের বর্ণনা দিতে গিয়ে কোরআনে আল্লাহ ইরশাদ করেছেন- ‘পক্ষান্তরে মুত্তাকি (আল্লাহভীরু) লোকেরা থাকবে— বাগান ও ঝরনার পাদদেশে। এবং তাদেরকে বলা হবে এখানে তোমরা শান্তি ও নিরাপত্তার সঙ্গে প্রবেশ করো। তাদের মনে যে সামান্য পরিমাণ মনোমালিন্য থাকে তা আমি বের করে দেবো। তারা পরস্পর ভাই-ভাইয়ে মিলিত হয়ে মুখোমুখি হয়ে বসবে। সেখানে তাদের পরিশ্রমও করতে হবে না এবং তারা সেখান থেকে বহিষ্কৃতও হবে না।’ (সুরা আল-হিজর, আয়াত: ৪৫-৪৮)

সর্বশেষে জান্নাতে কে যাবে : কিছু লোক তাদের পাপের শাস্তি হিসেবে জাহান্নামে যাবে। তারা সরাসরি জান্নাতে প্রবেশ করবে না। বরং জাহান্নাম হয়ে জান্নাতে যাবে। তাদের মধ্য থেকে সর্বশেষ যে ব্যক্তি চিরসুখের আধার জান্নাতে প্রবেশ করবে— তার সম্পর্কে হাদিসে কুদসিতে বর্ণনা রয়েছে।

আবদুল্লাহ ইব্‌ন মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘আমি অবশ্যই চিনি— জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভকারী সর্বশেষ জাহান্নামী ও জান্নাতে প্রবেশকারী সর্বশেষ জান্নাতিকে। জনৈক ব্যক্তি হামাগুড়ি দিয়ে জাহান্নাম থেকে বের হবে। আল্লাহ তাআলা তাকে বলবেন, যাও জান্নাতে প্রবেশ করো। সে জান্নাতে আসবে, তাকে ধারণা দেওয়া হবে (বলা হবে) জান্নাত পরিপূর্ণ। সে ফিরে এসে বলবে, হে আমার রব! আমি তা পূর্ণ পেয়েছি।

অতঃপর আল্লাহ তাআলা তাকে বলবেন, যাও জান্নাতে প্রবেশ করো। তিনি বলেন, সে জান্নাতে আসবে— তাকে ধারণা দেওয়া হবে যে, জান্নাত পূর্ণ। সে ফিরে এসে বলবে, হে আমার রব! আমি তা পূর্ণ পেয়েছি। অতঃপর আল্লাহ তাআলা বলবেন, যাও জান্নাতে প্রবেশ করো। তোমার জন্য দুনিয়ার সমান ও তার দশগুণ জান্নাত রয়েছে অথবা তোমার জন্য দুনিয়ার দশগুণ জান্নাত রয়েছে।

তিনি বলেন, সে বলবে, হে আমার রব! আপনি আমার সঙ্গে মশকরা করছেন অথবা আমাকে নিয়ে হাসছেন অথচ আপনি রাজাধিরাজ?” বর্ণনাকারী বলেন, আমি রাসুল (সা.)-কে তখন হাসতে দেখেছি, তার মাড়ির দাঁত পর্যন্ত বের হয়েছিল। তিনি বলেন, তখন বলা হতো— এ হচ্ছে মর্যাদার বিবেচনায় সবচেয়ে নিম্ন জান্নাত।’ (বুখারি, হাদিসে কুদসি : ৫৪)

ইব্‌ন মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত আরেকটি হাদিসে রয়েছে, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘সর্বশেষ জান্নাতে প্রবেশ করবে এমন ব্যক্তি— যে একবার চলবে, একবার হোঁচট খাবে; একবার আগুন তাকে ঝলসে দেবে। যখন সে তা অতিক্রম করবে তার দিকে ফিরে তাকাবে। অতঃপর বলবে- বরকতময় সে সত্তা! যিনি আমাকে তোমার থেকে নাজাত দিয়েছেন। নিশ্চয় আল্লাহ আমাকে এমন বস্তু দান করেছেন— যা পূর্বাপর কাউকে দান করেননি।

অতঃপর তার জন্য একটি গাছ প্রকাশ করা হবে, সে বলবে, ‘হে আমার রব! আমাকে এ গাছের নিকটবর্তী করুন, যেন তার ছায়া গ্রহণ করতে পারি ও তার পানি পান করতে পারি। আল্লাহ তাআলা বলবেন, হে আদম সন্তান! যদি আমি তোমাকে এটা দান করি— হয়তো (আবারও) অন্য কিছু তলব করবে। সে বলবে- না, হে আমার রব।

এসময় সে ওয়াদা দেবে যে, এ ছাড়া কিছু তলব করবে না। তখন আল্লাহ তাকে ছাড় দেবেন, কারণ সে এমন কিছু দেখবে যার ওপর তার ধৈর্যধারণ করা সম্ভব হবে না। তাকে তার নিকটবর্তী করবেন, ফলে সে তার ছায়া গ্রহণ করবে ও তার পানি পান করবে। অতঃপর তার জন্য অপর গাছ প্রকাশ করা হবে, যা পূর্বের তুলনায় অধিক সুন্দর। সে বলবে- হে আমার রব, আমাকে এর নিকটবর্তী করুন, যেন তার পানি পান করতে পারি ও তার ছায়া গ্রহণ করতে পারি, এ ছাড়া কিছু চাইব না।

তিনি বলবেন, হে আদমসন্তান তুমি কি আমাকে ওয়াদা দাওনি অন্য কিছু চাইবে না? তিনি আরো বলবেন, আমি যদি তোমাকে এর নিকটবর্তী করি হয়তো (আবারও) অন্য কিছু চাইবে। কিন্তু সে তাকে (আল্লাহকে) ওয়াদা দেবে যে, অন্য কিছু চাইবে না, তার রব তাকে ছাড় দেবেন। কারণ সে এমন কিছু দেখবে, যার ওপর তার ধৈর্য নেই। অতঃপর তাকে তার নিকটবর্তী করবেন, সে তার ছায়া গ্রহণ করবে ও তার পানি পান করবে।

অতঃপর তার সামনে প্রকাশ করা হবে একটি গাছ জান্নাতের দরজার মুখে, যা পূর্বের দুইটি গাছ থেকে অধিক সুন্দর। সে বলবে- হে আমার রব! আমাকে এ গাছের নিকটবর্তী করুন। আমি তার ছায়া গ্রহণ করব ও তার পানি পান করব। এছাড়া কিছু চাইব না। তিনি বলবেন, হে আদমসন্তান তুমি কি আমাকে ওয়াদা দাওনি অন্য কিছু চাইবে না? সে বলবে- অবশ্যই হে আমার রব, এটাই চাই; আর কিছু চাইব না, তার রব তাকে ছাড় দেবেন। কারণ সে দেখবে— যার ওপর তার ধৈর্য নেই। অতঃপর তিনি তাকে তার নিকটবর্তী করবেন, যখন তার নিকটবর্তী করা হবে— সে জান্নাতিদের আওয়াজ শুনবে। সে বলবে- হে আমার রব, আমাকে তাতে প্রবেশ করান। তিনি বলবেন, হে বনি আদম, কীসে তোমার থেকে আমাকে নিষ্কৃতি দেবে? তুমি কি সন্তুষ্ট যে আমি তোমাকে দুনিয়া ও তার সঙ্গে তার সমান দান করি? সে বলবে- হে আমার রব! আপনি কি আমার সাথে ঠাট্টা করছেন অথচ আপনি উভয় জাহানের রব?

ইব্‌ন মাসউদ হেসে দিয়ে বলেন, তোমরা আমাকে কেন জিজ্ঞাসা করছ না আমি কেন হাসছি? তারা বলল- কেন হাসছেন? তিনি বললেন, রাসুল (সা.) এরূপ হেসেছেন। তখন তারা (সাহাবিরা) বলল, হে আল্লাহর রাসূল কেন হাসছেন? তিনি বললেন, আল্লাহর হাসি থেকে যখন সে বলল, আপনি আমার সাথে ঠাট্টা করছেন অথচ আপনি উভয় জাহানের রব? তিনি বললেন, আমি তোমার সঙ্গে ঠাট্টা করছি না, তবে আমি যা চাই— করতে পারি। (মুসলিম, হাদিস : হাদিসে কুদসি : ৫৫)

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
বান্দাহ,আল্লাহ,রব,সর্বশেষ জান্নাতে প্রবেশকারী,ইব্‌ন মাসউদ
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close