নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১১ আগস্ট, ২০১৯

বঙ্গবন্ধুর অর্থনৈতিক দর্শনের প্রধান স্তম্ভ ছিল স্বনির্ভরতা

বঙ্গবন্ধুর অর্থনৈতিক দর্শনের অন্যতম প্রধান স্তম্ভ ছিল স্বনির্ভরতা। আত্মনির্ভরশীল জাতি গঠনের পাশাপাশি বৈষম্য ও শোষণহীন সমাজ প্রতিষ্ঠা করাই ছিল তার অন্যতম লক্ষ্য। সেই লালিত স্বপ্নের বাস্তবায়ন করতে গিয়ে তিনি হয়ে ওঠেন বঙ্গবন্ধু। একইসঙ্গে স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা ও বাঙালি জাতির জনক। তাই তো দেশকে স্বাধীনতার স্বাদ পাইয়ে দিয়ে তিনি থেমে থাকেননি। স্বাধীনতা পরবর্তী সময় ভেঙে পড়া অর্থনীতি থেকে কিভাবে স্বনির্ভর বা আত্মনির্ভশীল জাতিতে রূপান্তরিত হওয়া যায় সে লক্ষ্য পূরণে কাজ করে গেছেন।

স্বাধীন দেশে ফিরে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নিয়েই বঙ্গবন্ধু নেমে পড়েন নতুন করে অর্থনৈতিক মুক্তির সংগ্রামে। গ্রহণ করেন মধ্য-দীর্ঘমেয়াদি কিছু পরিকল্পনা। এসবের মধ্যে ছিল প্রথমত স্বনির্ভরতা, যতটা সম্ভব দেশের সম্পদ ব্যবহার করা। দ্বিতীয়ত বিদেশ ও দাতাদের কাছ থেকে শর্তহীন অর্থনৈতিক সহযোগিতাকে স্বাগত জানানো এবং ক্রমান্বয়ে এ ধরনের নির্ভরতা হ্রাস করা।

নিজস্ব সম্পদ আহরণের মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করার পাশাপাশি স্বনির্ভরতা অর্জনের অংশ হিসেবে বঙ্গবন্ধুর নিজের হাতে প্রতিষ্ঠা করেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। ১৯৭২ সালে সংবিধানের ৭৬ নম্বর আদেশে এ সংস্থার যাত্রা শুরু হয়। যার ধারাবাহিকতায় আমরা ধীরে ধীরে আত্মনির্ভশীলতার পথে হাঁটছি।

বর্তমানে মোট জাতীয় বাজেটের ৬০ শতাংশের বেশি অর্থের জোগান দেয় এনবিআর। অন্যদিকে বৈষম্য ও শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১৯৭২ সালের ২৬ মার্চ জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে বঙ্গবন্ধু ব্যাংক, বীমা ও সব বৃহৎ শিল্প-কারখানাকে রাষ্ট্রীয়করণের ঘোষণা দেন। যেখানে উল্লেখ ছিল শিল্প-কারখানার ম্যানেজমেন্ট বোর্ডে ৪০ শতাংশ শ্রমিক থাকবেন, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে বিলগ্নীকরণ করা হবে, যার অনো পরিত্যক্ত হয়েছে। ভূমি মালিকানার সর্বোচ্চ ২৫ বিঘা সীমা নির্ধারণ করে দেওয়ারও ঘোষণা দেন তিনি।

অর্থনৈতিক মুক্তির সংগ্রামের চমৎকার আরো কিছু বিবরণ পাওয়া যায় সাবেক অর্থমন্ত্রী এম সাইদুজ্জামানের লেখায়। যেখানে তিনি লিখেছেন, ‘স্বাধীনতার পরে বহু রাজনৈতিক নেতা দলীয়ভাবে, ব্যক্তিগতভাবে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থা ও উন্নয়নের নীতি কী হবে, সে বিষয়ে ঘোষণা ও দাবি প্রকাশে ব্যস্ত ছিলেন। ওই সময় থেকে অর্থনৈতিক দর্শনের ওপর মূল আলোচনা শুরু হয়। আমাদের নতুন প্রজন্মকে জানতে হবে কিছু তথ্য। প্রথমত. আওয়ামী লীগ সমাজতান্ত্রিক দল হিসেবে ছিল না দ্বিতীয়ত. আওয়ামী লীগের ১৯৭০ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে দেশের অর্থনীতিতে সমাজতান্ত্রিক সংস্কারের কথা উল্লেখ ছিল। অর্থনীতিবিদরা সার্বিকভাবেই এসবের ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি এবং পরিকল্পিত উন্নয়নের সঙ্গে দারিদ্র্য ও অসমতা হ্রাসের উপায় হিসেবে।

স্বনির্ভর বাংলাদেশ গড়ার মানসিক তাড়না উঠে এসেছে তার বিভিন্ন ভাষণেও। ১৯৭২ সালের ৭ জুন সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘দুনিয়ার সব দেশ থেকে আমি সাহায্য নিতে রাজি আছি। কিন্তু সে সাহায্য হবে শর্তহীন। শর্ত দিয়ে কারো কাছ থেকে ভিক্ষা আনতে পারব না। এমন কিছু আনতে চাই না যাতে ভবিষ্যতে আমাদের অসুবিধা হতে পারে। সেজন্য একটু আস্তে আস্তে চলি।’

শ্রমিকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আল্লাহর ওয়াস্তে একটু উৎপাদন কর। উৎপাদন করতে হবে। ইনশাআল্লাহ একবার যদি উৎপাদন বেড়ে যায়, তাহলে আর কষ্ট হবে না। যারা গ্রামে বাস করে, কৃষক তাদের প্রতি আমাদের কর্তৃব্য আছে। তাদের ২৫ বিঘা জমি পর্যন্ত খাজনা মাফ করেছি। ঋণ দিচ্ছি আরো দিব। আমি চাই তারা উৎপাদন করুক।

বঙ্গবন্ধু সরকারের ঘোষিত ১৯৭২ সালের ৫০০ কোটি টাকার প্রথম বাজেটে কৃষি ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ রাখার পর শিক্ষা ও সামাজকল্যাণে বরাদ্দ ছিল। সার ও শিশু খাদ্যের ওপর শুল্ক প্রত্যাহার করা ও তুলা থেকে তৈরি সুতার এবং পানির পাম্পের ওপর থেকে কর কমানোর সিদ্ধান্ত ছিল বাজেটে পুনর্গঠন প্রক্রিয়ার অংশ। সাধারণ জনগণ যাতে সহজে কাপড় সংগ্রহ করতে পারেন তার জন্য সুতি কাপড়ের ওপর কর ধার্য করা হয়েছিল কম। বেসরকারি বিনিয়োগকে উৎসাহিত করতে ১৯৭৪ সালের শুরুতেই বেসরকারি খাতে বিনিয়োগের সীমা ২৫ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩ কোটি টাকা করা হয়েছিল।

বঙ্গবন্ধু যেমন আত্মমর্যাদাশীল এক নেতা হয়ে কঠিন শর্তযুক্ত বিদেশি ঋণ ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। ঠিক তেমনটি ঘটেছে বর্তমান শেখ হাসিনার বাংলাদেশে। বিশ্বব্যাংকের কঠিন শর্তযুক্ত ঋণ ফিরিয়ে দিয়ে নিজেদের টাকায় পদ্মা সেতু নির্মাণ করার সাহসী সিদ্ধান্ত নিতে পেরেছেন তিনি। তাতে বিদেশি অর্থায়ন করা প্রকল্প কমেনি বরং বেড়েছে বহুগুণ।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
স্বনির্ভরতা,বঙ্গবন্ধু,অর্থনৈতিক দর্শন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close