নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২০

রমজাননির্ভর পণ্য ২০ গুণ বেশি বিক্রি করবে টিসিবি

পবিত্র রোজা শুরু আর মাত্র দুই মাস বাকি। রমজানে নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে অন্যবারের মতো প্রস্তুত বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। প্রয়োজনীয় সব ধরনের পণ্যের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখা এবং মুনাফালোভী ব্যবসায়ীদের অপতৎপরতা, কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির পাঁয়তারা ও অবৈধ মজুদ রোধে প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয় বলছে, গত বছরের তুলনায় এ বছর খোলাবাজারে ভর্তুকি মূল্যে সর্বোচ্চ ২০ গুণ বেশি রমজাননির্ভর পণ্য বিক্রি করবে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, প্রতি বছর টিসিবি সয়াবিন তেল, চিনি, মসুর ডাল, ছোলা ও খেজুর বিক্রি করে। বর্তমানে পেঁয়াজের দাম বেশি হওয়ায় এ বছর রমজানকে কেন্দ্র করে টিসিবির বিক্রির তালিকায় পেঁয়াজ যুক্ত করা হয়েছে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, রোজাকে সামনে রেখে ৩০ হাজার টন সয়াবিন তেল ও ২৫ হাজার টন চিনি আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। গত ১৯ ফেব্রুয়ারি সরকারের ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে এসব খাদ্যপণ্য আমদানির প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়। স্থানীয়ভাবে সরাসরি ক্রয়ের মাধ্যমে চিনি ও সয়াবিন তেল সংগ্রহ করা হবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এসব পণ্য টেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে খোলা বাজারে স্বল্প আয়ের মানুষের মধ্যে বিক্রি করা হবে বলে জানান বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। পেঁয়াজ বিক্রির চলমান কার্যক্রম চলবে বলেও জানান তিনি।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বাজারে সব ধরনের মনিটরিং কার্যক্রম জোরদার করবে মন্ত্রণালয়। এ লক্ষ্যে ১৯টি মনিটরিং টিম সাজানো হয়েছে। উপসচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের নেতৃত্বে এসব মনিটরিং কমিটির সারা বছর বাজার মনিটরিং করার কথা থাকলেও বিভিন্ন কারণে তা হয়তো হয়ে ওঠে না বলে জানিয়েছেন কেউ কেউ। তবে রোজার সময় পুরো টিমই বাজারে থাকবে। এর সঙ্গে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের কর্মকর্তাদের নেতৃত্বেও বাজার মনিটরিং চলবে। একই সঙ্গে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন অপর সংস্থা-বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের উদ্যোগেও মনিটরিং চলবে।

জানা গেছে, পণ্যের চাহিদা, মজুদ, সরবরাহ ও মূল্য পরিস্থিতি দেখতে ইতোমধ্যে বাজারে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা মাঠে নেমেছেন। অবৈধ মুনাফালোভী, মজুদদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতেই গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের এ তৎপরতা বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিব। প্রতিনিয়তই প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে নিত্যপণ্যের বাজার পরিস্থিতি পর্যালোচনা করা হয়। তবে রোজার সময় প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে কঠোরভাবে মূল্য পরিস্থিতি মনিটরিং করা হবে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মপরিকল্পনায় বলা হয়েছে, গত বছর টিসিবি দুই থেকে আড়াই হাজার টন সয়াবিন তেল বিক্রি করলেও এবার ৫০ হাজার টন তেল বিক্রির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সেক্ষেত্রে এবার ২০ গুণ বেশি সয়াবিন তেল বিক্রি করা হবে। একইভাবে এ বছর ৩০ হাজার টন চিনি ক্রয় করে খোলা বাজারে বিক্রি করা হবে। গত বছর টিসিবি চিনি বিক্রি করেছিল মাত্র ২ হাজার টন। এক্ষেত্রে দেখা যায় এ বছর ১৫ গুণ বেশি চিনি বিক্রি করা হবে।

এ বছর ৮ হাজার টন ছোলা বিক্রি করবে টিসিবি। গত বছর রমজানে ১ হাজার ৫০০ টন ছোলা বিক্রির প্রস্তুতি নিয়েছিল টিসিবি। সেক্ষেত্রে এবার ৫ দশমিক ৩৩ গুণ বেশি ছোলা বিক্রি করা হবে। গত বছরের চেয়ে ১ হাজার টন থেকে বাড়িয়ে এবার ৩ হাজার টন মসুর ডাল ও ৫০০ টন খেজুর টিসিবির মাধ্যমে বিক্রি করা হবে।

কর্মপরিকল্পনায় আরো বলা হয়েছে, বর্তমানে দেশে পেঁয়াজের দাম চড়া থাকলেও রমজানের আগেই পুরো দমে দেশি পেঁয়াজ বাজারে পাওয়া যাবে। এছাড়া এর আগেই বিভিন্ন বেসরকারি ব্যবসায়ীপ্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে দেড় লাখ টন পেঁয়াজ আমদানির অনুরোধ করা হয়েছে। যা ইতোমধ্যে দেশে পৌঁছাতে পাইপলাইনে আছে। পাশাপাশি নিত্যপ্রয়োজনীয় এ পণ্যটির দাম রমজানে যাতে সহনীয় থাকে এজন্য বাড়তি প্রস্তুতি হিসেবে টিসিবির মাধ্যমে ৩০ হাজার টন পেঁয়াজ বিক্রির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি গণমাধ্যমকে বলেছেন, কোনোভাবেই রোজার সময় অনৈতিক কিছু হতে দেওয়া যাবে না। কঠোরভাবে বাজার মনিটরিং চলবে। কোথাও অসামঞ্জস্য কিছু দেখলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেবেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। শবেবরাতের পর থেকেই বাজারে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে। তিনি বলেন, রোজা শুরুর আগে থেকেই টিসিবির মাধ্যমে চিনি, ছোলা, তেল, পেঁয়াজ ও খেজুর স্বল্পমূল্যে ট্রাকে করে নিম্ন আয়ের মানুষের কাছে বিক্রি করা হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close