নিজস্ব প্রতিবেদক

  ০৪ নভেম্বর, ২০১৯

অর্থনীতির ৪ খাতে মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন : সিপিডি

দেশের অর্থনীতির চারটি খাত চিহ্নিত করে সেখানে সরকারের মনোযোগ বাড়ানোর সুপারিশ করেছে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। এই চারটি খাত হচ্ছেÑ রাজস্ব আহরণ, ব্যাংকিং, পুঁজিবাজার ও বহির্বাণিজ্য বা বাণিজ্যিক ভারসাম্য।

২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রারম্ভিক (প্রথম প্রান্তিক) মূল্যায়ন নিয়ে তৈরি করা ‘২০১৯-২০ অর্থবছরে বাংলাদেশের অর্থনীতির পরিস্থিতি’ শীর্ষক প্রতিবেদনে সংস্থাটি এই সুপারিশ তুলে ধরে। গতকাল রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে সিপিডির বিশেষ ফেলো ড. মুস্তাফিজুর রহমান, নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন, গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম, রিসার্চ ফেলো ড. তৌফিকুল ইসলাম খান প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন। সেমিনারে সিপিডির সম্মানিত ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বক্তব্য দেন।

প্রতিবেদেনে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, সেটির কোন ধরনের প্রভাব পড়েছে, সেসব বিষয়ও প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়। প্রতিবেদনে সিপিডি রাজস্ব আহরণ বাড়ানো এবং ব্যাংকিং খাত ও পুঁজিবাজারকে আরো শক্তিশালী করতে প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার কর্মসূচি গ্রহণের সুপারিশ করে।

সংস্থাটির সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, বিশ্ব অর্থনীতি একটি কাঠামোগত মন্দার দিকে যাচ্ছে। এর থেকে বাংলাদেশকে দূরে রাখার জন্য আর্থিক খাতে সংস্কার কর্মসূচি আরো জোরদার করতে হবে। তিনি মনে করেন, জোরালো সংস্কারের অভাবে এক শ্রেণির অসাধু গোষ্ঠী অবৈধ সুবিধা নিচ্ছে। এটা বন্ধ করতে হবে।

তিনি আরো বলেন, মধ্য মেয়াদ পর্যন্ত অপেক্ষা না করে এবার প্রথম প্রান্তিকে আমরা সামষ্টিক অর্থনীতির মূল্যায়ন তুলে ধরেছি। এর লক্ষ্য হলো সরকার আমাদের বক্তব্য ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করে, চলতি অর্থবছরের বাজেট সুষ্ঠুভাবে ও পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কাজে লাগাতে পারে।

ড. দেবপ্রিয় বলেন, পুঁজিবাজারে বড় ধরনের সংকট রয়েছে। যেসব কোম্পানি পুঁজিবাজারে আসছে, সেগুলো বাজারে আসার পর সমমান ধরে রাখতে পারছে না। অর্থনীতির পুরোটাই এখন কর ফাঁকি, বিদেশে অর্থবাজার, ব্যাংকের টাকা নিয়ে ফেরত না দেওয়ার অর্থনীতিতে পরিণত হয়েছে। এ ছাড়া সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পে কীভাবে ১০ টাকার জিনিস হাজার টাকায় কেনা যায়, সেই অর্থনীতিতে পরিণত হয়েছে।

তিনি বলেন, বিভিন্ন খাতে যে ঘাটতি রয়েছে, সরকার সেসব ঘাটতি মোকাবিলায় কখনো প্রণোদনা দিয়ে, না হয় টাকার সঞ্চার করে কিংবা কর রেয়াদ দিচ্ছে। অর্থাৎ অর্থনীতির ভেতরে এক ধরনের প্রণোদনার আসক্তি সৃষ্টি করা হয়েছে। প্রতিযোগিতার সক্ষমতার বিপরীতে এই ধরনের আর্থিক প্রণোদনা আর্থিক আসক্তি তৈরি হচ্ছে। এর বড় কারণ হলো সরকার আর্থিক খাতে কোনো সংস্কার করছে না, সে জন্য ব্যক্তি খাত ক্ষতিপূরণ হিসেবে এই ধরনের ব্যয় করছে।

তিনি বলেন, নির্বাচনের আগে সরকার জনগণের কাছ সংস্কারের যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, গত তিন মাসে তা বাস্তবায়নের অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না। সংস্কারের অভাবে যারা লাভবান হয়েছেন, তারাই সংস্কার করতে দিচ্ছেন না। অর্থাৎ যারা কর না দিয়ে, টাকা বিদেশে পাচার করে এবং ব্যাংকের টাকা নিয়ে ফেরত দিচ্ছেন না, পুঁজিবাজারের টাকা নিয়ে ফটকাবাজি করেন, সরকারি প্রকল্পের টাকা নিয়ে অতিমূল্যায়িত করছেন, তারা সংস্কারের শত্রু হিসেবে এ মুহূর্তে দাঁড়িয়ে আছেন। এই রাজনৈতিক অর্থনীতির দুষ্টচক্র যদি ভাঙতে না পারে, তাহলে অর্থনীতিতে কোনো সমাধান আসবে না। আমরা চাই সরকার তার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিগুলো বাস্তবায়ন করুক।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close