জীবনে কোনো মানুষ জ্বরে ভোগেনি এমন পাওয়া যাবে না। অনেকেই আবার প্রতি বছরই জ্বরে ভোগেন। আসলে জ্বর কোনো রোগ না, এটি রোগের উপসর্গ মাত্র। মানুষ যেকোনো রোগের কারণেই জ্বরে আক্রান্ত হতে পারেন। তবে ঋতু পরিবর্তনের সময় ও খুব আর্দ্র আবহাওয়ার কারণে অনেকের জ্বর হয়। এটিকে সাধারণ জ্বর বলা হয়ে থাকে। এ জ্বরে অনেক সময় কোনো ওষুধের প্রয়োজন হয় না। এ ক্ষেত্রে জ্বর হলে রোগীকে মোটা কাপড়ে না ঢেকে বরং খোলামেলা রাখতে হবে, একটা পাতলা চাদর বা কাঁথা-ব্যবহার করা যেতে পারে। জ্বর হলে সাধারণত শরীর থেকে পানি বেরিয়ে যায় ও শরীর দুর্বল হয়ে যায়, এ কারণে রোগীকে প্রচুর পানি ও পর্যাপ্ত পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। ১০২ ডিগ্রি মাত্রার বেশি জ্বর না পাওয়া গেলে রোগীর সাধারণ ওষুধ প্যারাসিটামল খাওয়ারও প্রয়োজন নেই। সাধারণ জ্বরের একটি বড় কারণ ভাইরাস। ভাইরাসজনিত জ্বরের জন্য সাধারণত ইনফ্লুয়েঞ্জা টাইপ ‘এ’, ‘বি’ ও ‘সি’ ভাইরাস দায়ী। এসব ভাইরাস আক্রমণের দুই থেকে সাত দিন পর এ জ্বর হয়। এই জ্বর হলে শীত শীত ভাব, মাথাব্যথা, শরীরে ও গিরায় ব্যথা, খাওয়ায় অরুচি, ক্লান্তি, দুর্বলতা, নাক দিয়ে পানি পড়া, চোখ দিয়ে পানি পড়া, চোখ লাল হওয়া, চুলকানি, কাশি, অস্থিরতা ও ঘুম কম হতে পারে। অনেকের ক্ষেত্রে পেটের সমস্যা, বমি ও ডায়রিয়া হয়। শিশুদের ক্ষেত্রে টাইপ ‘বি’ ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের সংক্রমণে পেটব্যথাও হতে পারে। ভাইরাস জ্বরে আক্রান্ত ব্যক্তি সাধারণত দুই থেকে তিন দিনের মধ্যেই ভালো হয়ে যায় আবার অনেকের ক্ষেত্রে তা আবার এক থেকে দুই সপ্তাহ স্থায়ী হয়। সে ক্ষেত্রে জ্বর এলে রোগীকে প্রথম দু-তিন দিন অপেক্ষা করতে হবে ও বিশ্রামে থাকতে হবে। এতে যদি জ্বর না কমে তবে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী রক্ত পরীক্ষা করিয়ে জ্বরের কারণ নিশ্চিতভাবে জেনে কিছু ওষুধ খেতে হবে। আমরা অনেক সময় জ্বর হলে নিজেরাই ইচ্ছেমতো ওষুধ খাই এটি মোটেও উচিত নয়। কারণ অনেক ভাইরাসের ক্ষেত্রে ভুল ওষুধ এই সাধারণ জ্বরের রোগীকে জীবনের ঝুঁকির মুখে ঠেলে দেয়। এ ছাড়া দেখা যায়, ভাইরাস জ্বরে আক্রান্ত রোগীরা গোসল করেন না ও ঘরের জানাল ফ্যান বন্ধ রেখে একটা অস্বস্তিকর পরিবেশ সৃষ্টি করে। এটা মোটেও উচিত না। ভাইরাস জ্বর হলে প্রতিদিনের মতোই গোসল করতে হবে ও ঘরকে রাখতে হবে আলো-বাতাসে পরিপূর্ণ। শিশুদের ক্ষেত্রে দিনে কয়েকবার শরীরকে পানি দিয়ে মুছিয়ে দিতে হবে। জ্বর হলে সাধারণত শরীর দুর্বল হয়ে যায় আর এ দুর্বলতা শরীরে এক-দুই সপ্তাহ স্থায়ী হয়। এ কারণে জ্বর থেকে সুস্থ হয়ে ওঠার পর রোগীকে অবশ্যই কয়েকদিন পুষ্টিকর ভিটামিনযুক্ত খাবার বেশি করে খেতে হবে।

"