পার্থ মুখোপাধ্যায়, কলকাতা থেকে

  ০২ মার্চ, ২০২০

সিএএবিরোধী বিক্ষোভ

মেঘালয়ে নিহত ২ ইন্টারনেট বন্ধ

নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ) বিক্ষোভে উত্তাল মেঘালয়ের রাজধানী শিলং। উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ওই রাজ্যের বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী শেলা এলাকায় বিক্ষোভকালে খাসি স্টুডেন্টস ইউনিয়নের (কেএসইউ) এক সদস্যসহ দুজন নিহত এবং কমপক্ষে ১০ জন আহত হয়েছেন। সিএএ-র বিরুদ্ধে ওই ছাত্র সংগঠনের একটি প্রচার সভার ওপর গত শুক্রবার প্রথমে হামলা চালানোর অভিযোগ উঠে উপজাতি একটি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে। তারপর দুই পক্ষের সংঘর্ষ শুরু হয়। মোবাইল ইন্টারনেট পরিসেবা বন্ধ রাখা হয়েছে রাজ্যে।

যেখানে ঘটনাটি ঘটেছে, সেই পূর্ব খাসি পাহাড়ের শেলা জেলার ইছামতী গ্রামের অবস্থান রাজ্যের রাজধানী শিলং থেকে ৯০ কিলোমিটার দূরে। ঘটনার পর শুক্রবার রাত থেকে কারফিউ জারি করা হয়েছে গোটা শেলায় এবং শিলংয়ের কিছু এলাকায়। গত শনিবার সকাল ৮টার পর কয়েক ঘণ্টার জন্য কারফিউ শিথিল করা হয়েছিল। কিন্তু পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে বলে আশঙ্কা করে কারফিউ নতুন করে বলবৎ করা হয়েছে। শুক্রবার রাত ১০টা থেকে ৪৮ ঘণ্টার জন্য শেলায় মোবাইল ফোনে ইন্টারনেট পরিসেবা বন্ধ ও এসএমএসের পরিসেবা নিয়ন্ত্রণ করেছে প্রশাসন। আপাতত দিনে পাঁচটির বেশি এসএমএস করা যাবে না।

হামলায় জখম ছয়জনের মধ্যে একজনের দেহে ছোরার আঘাত রয়েছে। সিএএ-বিরোধীদের পাশাপাশি জখম হয়েছেন কয়েক জন পুলিশ কর্মীও। বেশ কয়েকটি বাসসহ যানবাহনে ভাঙচুর চালানো হয়, আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় একটি বাড়িতে। সব মিলিয়ে বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী ওই তল্লাটে উত্তেজনা চরমে উঠেছে। প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, কেএসইউয়ের নিহত সদস্যের নাম লুরশাই হাইনিউতা। খাসি জনজাতির ওই তরুণ চেরাপুঞ্জির বাসিন্দা। গুরুতর জখম অবস্থায় তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে সেখানে তিনি মারা যান।

নিহত আরো একজনের পরিচয় শনিবার রাত পর্যন্ত জানা যায়নি। তবে প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে, জখম ছয়জনের মধ্যে একজন শনিবার মারা গেছেন।

মুখ্যমন্ত্রী কনরাড সাংমা জানিয়েছেন, শেলার ঘটনার প্রভাব যাতে রাজ্যের অন্যত্র না ছড়ায়, তা নিশ্চিত করতে রাজ্য সরকার সব রকম সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নিচ্ছে। শিলংয়ে সাংমা বলেন, কীভাবে ওই রকম পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল, সেটা আমরা খতিয়ে দেখব। প্রয়োজনে কারফিউর সময়সীমা বাড়ানো হবে। সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে মোবাইল ফোনে ইন্টারনেট পরিসেবা সাময়িক বন্ধ রাখা হয়েছে। রাজ্য স্বরাষ্ট্র দফতরের বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, মোবাইলে ইন্টারনেট পরিসেবা বন্ধ করা হয়েছে পাঁচটি জেলায়। রাজ্যজুড়ে চূড়ান্ত সতর্ক করা হয়েছে পুলিশকে।

খাসি ছাত্র সংগঠন একদিকে সিএএ-র বিরুদ্ধে এবং অন্য দিকে ইনার লাইন পারমিট বা আইএলপি কার্যকর করার দাবিতে জনমত গড়ে তোলার উদ্দেশে শুক্রবার ইছামতী গ্রামে সভা করছিল। অরুণাচল প্রদেশ, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড, মণিপুরের মতো রাজ্যে আইএলপি কার্যকর করা হয়েছে। আইএলপি হলো, উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ওইসব রাজ্যে প্রবেশের জন্য বিশেষ অনুমতি। আইএলপি কার্যকর করার জন্য মেঘালয় বিধানসভাও মাস চারেক আগে প্রস্তাব গ্রহণ করেছে। তবে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক এই ব্যাপারে প্রয়োজনীয় বিজ্ঞপ্তি এখনো জারি করেনি। সেজন্য মেঘালয়ে আইএলপি বলবৎ করা যাচ্ছে না। এই নিয়ে শুক্রবার যখন খাসি স্টুডেন্টস ইউনিয়নের সভা চলছে, তখন আচমকা তাদের ওপর অনাদিবাসীরা হামলা চালায়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানাচ্ছেন, হামলাকারীদের হাতে ছিল চপার ও লাঠি। সোশ্যাল মিডিয়ায় ওই ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। আক্রমণে জখম হন কেএসইউয়ের বেশ কয়েকজন নেতা। তবে আচমকা ওই হামলার কারণ সম্পর্কে পুলিশ-প্রশাসন এখনো ধোঁয়াশায়।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close