পার্থ মুখোপাধ্যায়, কলকাতা থেকে

  ০১ অক্টোবর, ২০১৯

ফারাক্কা খোলা, পদ্মায় থইথই পানি

উত্তর প্রদেশ ও বিহারে রেকর্ড বৃষ্টিতে উপচে পড়ছে বাঁধের পানি, ফলে ফরাক্কা বাঁধের সবগুলো লকগেট একসঙ্গে খুলে দেওয়া হয়েছে। এর জেরে সীমান্তবর্তী মুর্শিদাবাদ জেলা এবং বাংলাদেশে বাড়তি পানি প্রবাহ হচ্ছে। পদ্মার বাংলাদেশে অংশেও নামছে পানি, সেখানে থইথই পানি গঙ্গা ছাড়াও মালদা জেলায় প্রায় সব নদীর পানি বাড়ছে। একনাগাড়ে বর্ষণে ইংরেজবাজার শহরের একাধিক এলাকা পানির তলায়। গতকাল সোমবার ফারাক্কা ব্যারাজের ১০৯টি লকগেটটি খুলে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। যার জেরে গঙ্গা নদীর ভাটিতে প্লাবনের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। পানি বেড়েছে মালদা জেলার ফুলহর, মহানন্দা ও কালিন্দি নদীতে। একনাগাড়ে বৃষ্টিতে প্লাবিত ইংরেজবাজার ও পুরাতন মালদা পৌরসভার বিস্তীর্ণ এলাকা। পানি জমেছে মালদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। জমা পানিতে নাকাল হয়ে গতকাল সোমবার পথ অবরোধ করেছেন স্থানীয়রা। ইংরেজবাজার পৌরসভার ২৯টি ওয়ার্ডের মধ্যে ২১টিই পানিমগ্ন। পুরোনো মালদা পৌরসভার ২০টি ওয়ার্ডের ৯টি পানির তলায়। জেলায় একাধিক জায়গায় নদীর বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে বিস্তীর্ণ এলাকা। চরম বিপৎসীমার ওপর দিয়ে বইছে গঙ্গা ও ফুলহর। যার ফলে লাগাতার নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হওয়ার খবর মিলছে। রুদ্রমূর্তি ফুলহারের। বেড়েই চলেছে জলস্তর। গতকাল সোমবার দুপুরে জলস্তর ছিল ২৭ দশমিক ৭৫ মিটার। যা চরম বিপৎসীমার অনেক ওপর দিয়ে বইছে। ফুলহারের জলে এদিন দুপুরে নতুন করে প্লাবিত হয়েছে রতুয়া-১ এবং চাঁচল-২ ব্লকের আরো তিনটি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকা যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। ডুবে গেছে রতুয়া ভালুকা রাজ্য সড়ক। জলের মধ্যেই খোলা আকাশের নিচে দিন কাটছে বহু পরিবারের। ঠাঁই হয়নি ত্রাণশিবিরেও। ত্রাণ নিয়ে হাহাকার। খাবার ও সুপেয় পানি নেই। পাশাপাশি হরিশ্চন্দ্রপুর-২ ব্লকের পারভালুকায় বাঁধ ভেঙে যাওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। আতঙ্কে এলাকা ছেড়ে পালাচ্ছেন হাজার হাজার মানুষ।

এদিকে, বন্যাকবলিত বিহারের পরিস্থিতি ভয়ানক। রাজ্যের উপ-মুখ্যমন্ত্রী সুশীল কুমার মোদি নিজের পাটনার বাড়িতে আটকে পড়েন। গতকাল সোমবার জাতীয় ও রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলায় এর সদস্যরা গিয়ে তাকে উদ্ধার করেছেন। উপ-মুখ্যমন্ত্রী সুশীল কুমার মোদি ও তার পরিবারকে রক্ষা করা গেলেও, বিহারে বন্যার জেরে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে অন্তত ২৯ জন। অনবরত ভারী বৃষ্টি এবং তার জেরে বন্যার বিধ্বস্ত গোটা বিহার। বহু মানুষ ঘরছাড়া এবং ফসলের জমি পানির তলায়। বিহার সরকারের পাশে দাঁড়িয়ে গতকাল সোমবার উদ্ধারকাজে হাত লাগিয়েছে ভারতীয় বায়ুসেনা। বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নিতিশ কুমার বন্যাকবলিত বেশ কিছু এলাকায় ঘুরে দেখেছেন এবং সরকার সাধারণ মানুষের পাশে রয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, অতিরিক্ত বৃষ্টির জেরে গঙ্গার পানি বেড়ে যাওয়ায় বন্যার কবলে পড়েছে গোটা রাজ্য। তবে সঠিক ও উপযুক্ত ব্যবস্থা নিয়েছে সরকার। মানুষের পাশে রয়েছে সরকার। অন্যদিকে, মৌসম ভবন সূত্রে খবর, আগামী কয়েক দিন আরো ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে পাটনা ও সংলগ্ন এলাকায়। রাজেন্দ্রনগর, কংকরবাগে এনডিআরএফের পাঁচটি দল রাখা হয়েছে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যে আরো বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া দফতর। পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে রাজ্যে জারি করা হয়েছে রেড অ্যালার্ট। পাটনায় বন্ধ স্কুল-কলেজ। কোশি, গন্ডক, বাগমতি নদীর পানি কমার কোনো লক্ষণই আপাতত নেই।

অন্যদিকে, উত্তর প্রদেশ, মধ্য প্রদেশ ও রাজস্থানের বন্যা পরিস্থিতিও ক্রমেই খারাপ হচ্ছে। পাশাপাশি দুর্গাপুর, ঝাড়খন্ড ও বিহারের জলাধারগুলো থেকে পানি ছাড়া শুরু হয়েছে। এর জেরে পশ্চিমবঙ্গেও তার প্রভাব পড়তে পারে। জাতীয় আবহাওয়া দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে, চার মাসের মৌসুমি বৃষ্টির মাস গতকাল সোমবার শেষ হলেও, মৌসুমি বায়ু এখনো সক্রিয় রয়েছে রাজস্থান, বিহার ও উত্তর প্রদেশের ওপর।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close