রামনাথ : মাটির ঘর থেকে রাষ্ট্রপতি ভবনে
বিশ্বের সর্ববৃহৎ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ভারতের সর্বোচ্চ সাংবিধানিক পদধারী নবনির্বাচিত রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ মাটির ঘর থেকে যাচ্ছেন দেশটির রাষ্ট্রপতি ভবন রাইসিনা হিলে। তিনি তার প্রতিদ্বন্দ্বি মীরা কুমারকে বিপুল ভোটে হারিয়ে দেশটির ১৪ তম রাষ্টপতি নির্বাচিত হয়েছেন। তার জন্ম ১৯৪৫ সালের ১ অক্টোবর উত্তরপ্রদেশের গঙ্গা তীরবর্তী কানপুরের পারাউখ গ্রামে। তার বাবা মাইকুলাল ছিলেন গ্রামের ভূমিহীন কোড়ি বা তাঁতী। মাইকুলাল ও তার স্ত্রীর ছিল ৫ পুত্র ও ২ কন্যা। এই বড় সংসার নিয়ে তারা থাকতেন গ্রামের এক কোণে একটি মাটির ঘরে। এই ঘর সংস্কারের অভাবে একসময় ধসে পড়ে। পরে তারা আবাস গড়েন একটি খড়ের কুঁড়েঘরে। কিন্তু রামনাথের ৫ বছর বয়সে সেই কুঁড়েঘরেও আগুন লেগে পুড়ে মারা যান মা। এরপর মাইকুলাল একটি ছোট্ট দোকান নিয়ে বসেন সংসার চালাতে। জীবিকা নির্বাহের এই যুদ্ধে মাইকুলাল সন্তানদের শিক্ষার উজ্জ্বল আলোয় আলোকিত করতে পারছিলেন না। এরমধ্যেই রামনাথ সংগ্রামকে নিয়তি হিসেবে নিয়ে পাঠে মনোযোগী হন।
গাঁয়ের স্কুলে প্রাথমিক শিক্ষা লাভের পর তিনি ভর্তি হন কানপুরের আরেকটি মাধ্যমিক স্কুলে। ওই অঞ্চলের সবচেয়ে পিছিয়ে পড়া গ্রাম হিসেবে যোগাযোগ অবকাঠামোও ভালো ছিল না পারাউখের। তাই এই গ্রামে বাইসাইকেল পর্যন্ত ছিল না কারও। সেই গ্রাম থেকে ৬ কিলোমিটার দুর্গম-দীর্ঘ পথ হেঁটে গিয়ে কানপুরের ওই মাধ্যমিক স্কুলে ক্লাস করতেন রামনাথ। বছরের পর বছর সেই স্কুলে পাঠ শেষে রামনাথ কানপুর থেকেই নেন উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা। এরপর এই শহরেরই কানপুর বিশ্ববিদ্যালয় অধীভূক্ত ডিএভি কলেজ থেকে অর্জন করেন বাণিজ্য ও আইনে স্নাতক ডিগ্রি।
উচ্চতর পড়াশোনার পর রামনাথ চলে আসেন নয়াদিল্লিতে। ১৬ বছর দিল্লি হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টে আইনজীবী হিসেবে কাজ করতে থাকেন। এরমধ্যেই জড়ান বিজেপির দলিত মোর্চার রাজনীতিতে। দলিত জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে প্রতিনিধির ভূমিকা আরও কার্যকর করার অভিপ্রায়ে ১৯৯৪ সালে তিনি বিজেপি প্রার্থী হিসেবে উত্তর প্রদেশ থেকে সংসদের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভায় সদস্য মনোনীত হন। এরপর একই দল থেকে টানা দুবার লোকসভার সদস্য নির্বাচিত হন। ২০১৪ সালে বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর ২০১৫ সালের ৮ আগস্ট রামনাথকে বিহারের রাজ্যপাল পদে নিয়োগ দেওয়া হয়।
১৯৯৮ সাল থেকেই বিজেপির দলিত মোর্চার নেতৃত্বে থাকলেও রামনাথ বিজেপির অনেক নেতাকর্মীর কাছেও ছিলেন অপরিচিত, তার প্রচারবিমুখ এবং নিভৃতচারিতার কারণে। এই অপরিচিতি, এই দীর্ঘ সংগ্রামী-লড়াকু মানুষটাই এখন উঠে যাচ্ছেন রাইসিনা হিলে অর্থাৎ ভারতের রাষ্ট্রপতি ভবনে।পিডিএসও/মুস্তাফিজ