অাবদুল্লাহ অাশরাফ

  ১৭ আগস্ট, ২০১৯

বহুরঙের ছাতা ও একটি স্মৃতি

অাজকাল স্মৃতিকথা লেখা হয় না। মূলত লেখালেখি থেকে দূরে থাকার ফল। কেমন একটা বেদনা কাজ করে। সময়ের অাগেই নিজের অক্ষমতা বলা লজ্জাকর; কিন্তু এমনটাই করে যাচ্ছি।

শৈশবে অাব্বু অনেক কিছু খেয়াল রাখতেন অামার। বিশেষ করে নিজের শৈশবে না পাওয়া জিনিসগুলো থেকে যেন বঞ্চিত না হই।

সে শৈশব অাজও মনের উঠোনে হইচই করে; কিন্তু যখন শৈশবের বন্ধুদের কথা মনে পড়ে—কষ্ট হয়। সেই বন্ধুদের কাছে পাই না। বছরের পর বছর অতিবাহিত হলেও দেখা-সাক্ষাৎ হয় না। কোথায় অাছে, কেমন অাছে খোঁজ নেই। পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন বলা যায়।

শৈশব কেটেছে নানুবাড়িতে। সেখানকার পথঘাট অামাকে টানে; কিন্তু নির্জন বাড়ি। কেউ অার নিয়মিত থাকে না। মামা নেই। বাড়ি-ঘর অাছে। মানুষ নেই। মাঝেমধ্যে যাই। বাড়ি থেকে খুব দূরে নয়। পাশের গ্রামে। ক্ষণিক সময়ের চলাচলে চোখে পড়ে না বন্ধুদের।

বহুরঙের একটা ছাতা কিনেছি কিছুদিন অাগে। বাড়ির জন্য। প্রায় মা বলেন একটা ছাতার কথা। মনে থাকে না। সে দিন একজনকে কিনে দিতে গিয়ে নিজেও কিনি। ছাতাটা হাতে নেওয়ার পর একটা স্মৃতি বারবার স্মরণ হচ্ছিল। তখন কত বোকা ছিলাম! মনে হলেই হাসি পায়।


শৈশবে অাব্বু শখ করে অামার জন্য ছাতা কিনে দেন। ছোট ছাতা। বহুরঙের। সে ছাতা নিয়ে রোজ স্কুলে যেতাম। বন্ধুদের সঙ্গে ছাতার বাহানায় গল্প জমে উঠত। শৈশব তো এ রকমই


শৈশবে অাব্বু শখ করে অামার জন্য ছাতা কিনে দেন। ছোট ছাতা। বহুরঙের। সে ছাতা নিয়ে রোজ স্কুলে যেতাম। বন্ধুদের সঙ্গে ছাতার বাহানায় গল্প জমে উঠত। শৈশব তো এ রকমই। বন্ধু বাড়ানো বা নিজের প্রতি অন্যকে অাকৃষ্ট করার সুযোগ। এখন এসব নেই। অাগে একটা কিছু দেখলেই কিনে ফেলার প্রবণতা ছিল না। ফলে নতুন নতুন কৌতুহল সৃষ্টি হতো। হতো পরস্পরে বন্ধুত্ব।

নানু বাড়ি একটু অালাদা। সঙ্গে অারেকটা বাড়ি মাত্র। অন্যান্য বাড়ি অনেক দূরে। ছোটদের মাঝে দু-তিনজন ছিলাম। অামি ও খালাতো ভাই। সারাদিন নানা কল্পনায় সময় কাটতো। খেলার জন্য নানান কিছু অাবিষ্কার করা হতো। টিভি বানাতাম। পত্রিকার ছবি কেটে একটার সঙ্গে অন্যটা জুড়ে দিয়ে ফিতার মতো বানিয়ে সামনে দিয়ে প্যাঁচিয়ে ঘুরাতাম। দূরের বন্ধুদের ডেকে এনে বলতাম, দেখ অামি টিভি বানিয়ে ফেলেছি। তখন তো দশ গ্রাম ঘুরে একটা টিভি পাওয়া যেত না। পাওয়া গেলেও সহজে কাউকে টিভির ঘরে ঢুকতে দিত না। কৌতুহলটা কী রকম ছিল! বলার অপেক্ষা রাখে না।

নতুন কিছুর অাবিষ্কার করতে গিয়ে অামার নতুন ছাতাটার পর্দা কেটে অালাদা করতে হলো। সারাদিন কাদাপানিতে সেটা নিয়ে দুজন ইচ্ছেমতো খেলা করলাম। পরের দিন স্কুলে যাওয়ার সময় ছাতা পাওয়া যাচ্ছে না।

অনেক খোঁজে পিসফল গাছের নিচে ছাতার ডাশা উদ্ধার করেন অাম্মু। দুপুরে অাবার সেটা নিয়ে কাদাপানিতে গেঁথে রাখি। রোজ সকালে একবার করে দেখতাম। মজা পেতাম। এখান থেকে নিশ্চয় কোনো কিছু সৃষ্টি হবে। অাজব সে কল্পনাকে ছোট করে দেখলেও অামি বলি, সেসব কল্পনা কজন দেখতে পারে?

কখনো খেলার জন্য বাড়ি ছেড়ে চলে যেতাম। সহজে সন্ধান করা কষ্টকর হয়ে যেত। অাম্মু অপেক্ষা করতে করতে কেঁদে চোখ ফুলাতেন। সেদিনগুলো নেই। নেই সে পরিবেশ।

অাব্বু বাড়ি থাকেন না। কে করবে বিচার? অাম্মুকে ভীষণ ভয় পেতাম। উঠোন পেরিয়ে বাইরে অাসলে ধরার কেউ ছিল না। নানা বাচ্চাদের মারধর করতেন না। বিশেষ করে দুষ্টুমির জন্য।

লেখক : ছড়াকার, গল্পকার ও শিক্ষক [email protected]

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
স্মৃতি,বহুরঙ,অাবদুল্লাহ অাশরাফ,ছাতা,শৈশব
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close