reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

মিজৌরি স্টেট ইউনিভার্সিটির কোর্সে যেভাবে যুক্ত হলো বেগম রোকেয়ার “সুলতানা’স ড্রিম” 

তাসনুভা তাবাসসুম বাংলাদেশি মেয়ে, কিন্তু থাকেন আমেরিকার মিজৌরি রাজ্যে। সেখানেই মিজৌরি স্টেট ইউনিভার্সিটিতে ইংরেজি বিভাগে মাস্টার্সে পড়াশোনা করছেন এবং একইসঙ্গে গ্র্যাজুয়েট অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবেও কাজ করছেন।

তাসনুভা গত ২২ ফেব্রুয়ারি তার নিজম্ব ফেসবুক পোস্টে জানান আমেরিকার মিজৌরি রাজ্যের এক বিশ্ববিদ্যালয়ের সিলেবাসে যুক্ত করা হয়েছে বেগম রোকেয়ার লেখা “সুলতানা’স ড্রিম”।

কিভাবে মিজৌরি স্টেট ইউনিভার্সিটির কোর্সে “সুলতানা’স ড্রিম” অন্তর্ভূক্ত করা হলো তারই গল্প জানিয়েছেন তাসনুভা তাবাসসুম। তার দেয়া পোস্টটি ইতোমধ্যে ভাইরাল হয়েছে।

তাসনুভা তার পোস্টে লিখেছেন, অনুভূতিটা ঠিক কেমন হচ্ছে সেটা নিজেও বুঝতে পারছি না, পেটের ভেতরে হাজার প্রজাপতি উড়ে বেড়ানোর মতো অনেকটা। ঘটনাটা হয়তো তেমন কিছুই না, কিন্তু আমার কাছে অনেক কিছু।

যখন আমি গত সেমিস্টারে আমার গবেষণার বিষয় নির্ধারণ করলাম, তখন আমার প্রফেসরদের কাছে গিয়ে গিয়ে বলছিলাম– কীভাবে বেগম রোকেয়ার একশো বছর আগের “সুলতানা'স ড্রিম“ আজকের দিনের ‘বারবি’ সিনেমার সাথে ভীষণভাবে মিলে যায়। যেহেতু এখানে কেউই আগে বেগম রোকেয়ার নাম শোনেননি, তাই আমাকে প্রতিজনের কাছে প্রতিবার বেগম রোকেয়াকে এবং “সুলতানা'স ড্রিম”-এর কাহিনী কী এটা নিয়ে বারবার বলতে হয়েছে। তাদেরকে আমার কাছে থাকা বইটাও ধার দিয়েছিলাম পড়ে দেখবার জন্যে। তারা বইটা শুধু পড়েনই নাই, মুগ্ধ হয়ে খুঁজে খুঁজে এই বই কিনেছেন! আমি এতেই অত্যন্ত খুশি ছিলাম যে আমার আমেরিকান প্রফেসররা বেগম রোকেয়ার ভূয়সী প্রশংসা করছেন এবং তারা ভেবেছিলেন জিলম্যানের ‘হারল্যান্ড’ বুঝি প্রথম ফেমিনিস্ট ইউটোপিয়ান সায়েন্স ফিকশন যা ১৯১৫ সালে প্রকাশিত হয়েছিল। যখন দেখলেন “সুলতানা'স ড্রিম” আরও আগে ১৯০৫ সালে প্রকাশিত হয়েছিল, তারা যারপরনাই অবাক হলেন!

এরপরই তার সফল হওয়ার কথা জানিয়ে পোস্টে লিখেছেন, এখানেই ঘটনার শেষ? আমাকে অবাক করে দিয়ে ঘটনা সেখানে শেষ হয়নি। আমার সুপারভাইজার এই সেমিস্টারে একটা নতুন কোর্স ডিজাইন করেছেন যেখানে তিনি সিলেবাসে বেগম রোকেয়ার “সুলতানা’স ড্রিম” পড়াচ্ছেন!!! কয়েকদিন আগে আমি যখন দেখা করতে গিয়েছিলাম উনার সাথে, তিনি আমাকে সিলেবাস দেখিয়ে বললেন আমার ছাত্ররা এখন "সুলতানা'স ড্রিম" পড়ছে এবং সবাই এই টেক্সট অসম্ভব পছন্দ করেছে! আমি কিছুক্ষণ অবিশ্বাসের দৃষ্টিতে তাঁর কম্পিউটার স্ক্রিনের সিলেবাসের দিকে তাকিয়ে ছিলাম.. মুখ দিয়ে একটা শব্দই বেরিয়েছে “সিরিয়াসলি???” ডক্টর উডেন মিষ্টি হাসি দিয়ে বললেন “থ্যাঙ্কস টু ইউ ফর ইন্ট্রোডিউসিং মি উইথ হোসেইন” (বেগম রোকেয়ার নাম লেখক হিসেবে রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন লিখা বইতে, তাই নামের শেষাংশ বলেছেন)। তিনি বেগম রোকেয়ার সমসাময়িক পরিবেশ, সমাজ নিয়ে আরো জানতে আগ্রহী। আমার মাথায় আর কিছুই ঢুকছিল না, আমি শুধু ভাবছিলাম আমেরিকার মিজৌরি নামক রাজ্যের একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ছাত্ররা বেগম রোকেয়ার কথা জানবে, তাঁর লিখা বই পড়বে.. আমার মত তুচ্ছ-ক্ষুদ্র একটা মানুষ যে বেগম রোকেয়ার সিলেবাসে অন্তর্ভুক্তির মাধ্যম হতে পেরেছে এই আনন্দ আমি কোথায় রাখব বুঝতে পারছিলাম না।

এই নিয়ে এক গণমাধ্যমকে তাসনুভা জানান— আমি আসলে নিজের মাস্টার্সের থিসিসের বিষয় হিসেবে বেগম রোকেয়ার সুলতানা’স ড্রিম এবং বারবি সিনেমাকে বেছে নিয়েছিলাম এবং এজন্যেই আমার প্রফেসরদের সাথে সুলতানা’স ড্রিম এবং বেগম রোকেয়া বিষয়ে কথা বলতে হয়েছে। বারবি সিনেমা দেখার সময় বারবার এর সাথে সুলতানা’স ড্রিমের থিমের মিল চোখে পড়ছিল। তখন মনে হয়েছিল একশ বছরেরও বেশি সময় আগে বেগম রোকেয়া যেভাবে ভেবেছেন, হলিউড সেভাবে ভাবছে একশ বছর পরে, বিষয়টা বেশ ইন্টারেস্টিং।

তিনি বলেন,আমি চেষ্টা করি যেন আমার দেশের সাহিত্য ও সংস্কৃতিকে আমার পড়াশোনার সাথে সম্পৃক্ত করতে পারি। আমি জানি না কেন এরকম চিন্তা কাজ করে ভেতরে, হয়তো দেশ থেকে এতদূরে আছি বলেই কোনও না কোন উপায়ে দেশকে নিজের সাথে জড়িয়ে রাখতে ইচ্ছা করে।

আর এর ফল হলো, তার সুপারভাইজার এই সেমিস্টারে একটা নতুন কোর্স ডিজাইন করেছেন যেখানে তিনি সিলেবাসে বেগম রোকেয়ার “সুলতানা’স ড্রিম” পড়াচ্ছেন। এবং সেই অধ্যাপক জানিয়েছেন, ছাত্ররা এখন “সুলতানা’স ড্রিম” পড়ছে এবং সবাই এই টেক্সট অসম্ভব পছন্দ করেছে!

খবরটা শোনার পরের অনুভূতি জানাতে তাসনুভা লেখেন, আমার মাথায় আর কিছুই ঢুকছিল না, আমি শুধু ভাবছিলাম আমেরিকার মিজৌরি নামক রাজ্যের একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ছাত্ররা বেগম রোকেয়ার কথা জানবে, তার লিখা বই পড়বে.. আমার মতো তুচ্ছ-ক্ষুদ্র একটা মানুষ যে বেগম রোকেয়ার সিলেবাসে অন্তর্ভুক্তির মাধ্যম হতে পেরেছে এই আনন্দ আমি কোথায় রাখবো বুঝতে পারছিলাম না। যার জন্যে আমি আজকে পড়াশোনা করতে পারছি, এতদূরে পড়াশোনার হাত ধরে এসে দাঁড়িয়েছি, তার ঋণ তো বাঙালি নারী হিসেবে কোনদিন শোধ করতে পারব না.. এইটুকু পরিচয় করিয়ে দিতে পেরে স্বস্তি পাচ্ছি যে তাকে ভিনদেশি ছাত্ররা চিনবে, জানবে।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close