মানিকছড়ি (খাগড়াছড়ি) সংবাদদাতা
বাজারে প্লাস্টিকের রকমারি উপকরণ
দুঃসময়ে দিন পার করছেন হস্তশিল্প কারিগররা
প্রাচীনকাল থেকে মানুষের ব্যবহার্য বাঁশ-বেতের কদর ছিল। সময়ের পরিবর্তনে তার ঐতিহ্য হারাতে বসেছে। বর্তমান আধুনিক যুগে এসে এ শিল্পের জায়গা দখল করে নিয়েছে প্লাস্টিকের রকমারি উপকরণ (পণ্য)। যার ফলে হস্তশিল্প কারিগররা এখন দুঃসময়ে দিন পার করছেন। আধুনিক যুগে এসে ক্রেতা ও সরঞ্জাম সংকটে অবহেলায় দিন পার করছেন এ শিল্পের সাথে সংশ্লিষ্টরা। তবুও ঐতিহ্য আর পারিবারিক অভাব-অনটনের মাঝেও এ পেশাকে আঁকড়ে ধরে রেখেছেন মানিকছড়ির উপজেলার অর্ধ্বশতাধিক পরিবার।
আজ শনিবার সাপ্তাহিক হাটের দিন মানিকছড়ি বাজারে বাঁশ-বেতের তৈরি কুলা, চালুন, খাঁচা, ওড়া, বাউনি, মোড়া, মাছ ধরার চাঁইসহ বাঁশ-বেতের তৈরি বিভিন্ন আসবাবপত্র নিয়ে ক্রেতার অপেক্ষায় বসে আছেন আব্দুল মালেক, শফিক মিয়া, সিরাজুল ইসলাম, হলেমা বেগম, জোহরা বেগম ও রিমরুচাই মারমা। কিন্তু আগের মতো নেই ক্রেতার উপস্থিতি আর বেচা-বিক্রি। কেননা প্লাস্টিকের সরঞ্জামের ব্যবহার দিনদিন বৃদ্ধি পাওয়ায় আগের মতো বাঁশ বেতের তৈরি জিনিসপত্রের তেমন চাহিদা নেই বাজারে। স্বল্প মূল্যে হাতের নাগালে প্লাস্টিকের সামগ্রী কিনতে পারায় কদর কমেছে এ শিল্পের।
বাজারের একটি গলিতে বসে আছেন হস্তলিল্পের কারিগর খোরশেদ আলম ও তার বোন হালেমা খাতুন।
- মানিকছড়ি বাজারে বাঁশ-বেতের তৈরি বিভিন্ন আসবাবপত্র নিয়ে ক্রেতার অপেক্ষায় বসে আছেন বিক্রেতারা।
- কিন্তু আগের মতো নেই ক্রেতার উপস্থিতি আর বেচা-বিক্রি।
- স্বল্প মূল্যে প্লাস্টিকের সামগ্রী কিনতে পারায় কদর কমেছে এ শিল্পের।
তারা জানান, বাঁশের তৈরি জিনিস বিক্রি করে এখন আর সংসার চালানো যায় না। কেননা দিনদিন কমেছে ক্রেতা আর বেড়েছে এ শিল্প সংশ্লিষ্ট কাঁচামালের দাম। তাছাড়া আগের মতো বাড়ির আশপাশে বাঁশ-বেত পাওয়া যায় না। জমির মালিকরা কেটে ফেলছে। যদিও চড়া দামে বাঁশ কিনছি কিন্তু বিক্রি নেই। হয়তো এ পেশা আর বেশি দিন ধরে রাখতে পারবেন না বলেও হতাশা প্রকাশ করেন তারা। উপজেলা সদরের মহামুনি সেগুন তলায় বেড়া বানানো রাঙ্গাপানি এলাকার কারিগর আব্দুল মালেক বলেন, ছোটলেবা গ্রামের বাড়ি লক্ষীপুর থাকাকালীন এই হস্তশিল্পের কাজ শিখেছি। এখনও কাজ করছি কিন্তু আগের মতো চাহিদা নেই। প্লাস্টিকের উপকরণ বের হওয়ায় কদর কমেছে এ শিল্পের। সকাল ৫টায় ঘর থেকে বাঁশের তৈরি বিভিন্ন জিনিস নিয়ে বাজারে এসেছি। বিক্রি করছি মাত্র ৪শ’ টাকা। এ টাকায় কি আর সংসার চালানো যায়।
ডাইনছড়ি এলাকার শফিকুল মিয়া বলেন, এ কাজে এখন আর সংসার চলে না। তাই অন্যান্য কাজের ফাঁকে সময় বের করে বাঁশ-বেতের কাজ করি। কেননা বাজারে প্লাস্টিকের দাপটে চাহিদা কমেছে বাঁশ-বেতের জিনিসপত্রের। তাই এ কাজে পুরোদিন ব্যয় করে সংসার চালানো যাবে না।
উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা কামরুল আলম জানান, একসময়ে বাসা-বাড়ি,অফিস-আদালত সবখানেই ব্যবহার করা হতো বাঁশ ও বেতের তৈরি আসবাবপত্র। এখন সময়ের বিবর্তনে বদলে গেছে চিরচেনা সেই চিত্র। তাছাড়া আমাদের অধিদপ্তরেও প্রশিক্ষণ দেয়া হতো। তবে এখন আর সে প্রকল্প নেই। সরকারি পৃষ্টপোশকতা ও কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা না হলে এক সময়ে এ শিল্প বিলুপ্ত হওয়ারও আশঙ্খা করছেন তিনি। কারণ স্বল্প আয়ের এ পেশায় টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়েছে।